পুজোয় লাগে না পুরোহিত, আদিবাসী মন্ত্রেই এখানে ১৫০ বছর ধরে পূজিতা হন মা দুর্গা

নিয়ম মেনে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী হয়। পুজোর এই চারদিন আদিবাসীদের নিজস্ব মন্ত্রে আদিবাসী ভাষাতেই পুজো করা হয়। চারদিনই নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে।

পুজোয় লাগে না পুরোহিত, আদিবাসী মন্ত্রেই এখানে ১৫০ বছর ধরে পূজিতা হন মা দুর্গা

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: পুজোর আর হাতে গোনা মাত্র ৩৬ দিন বাকি। চারিদিকে সাজসাজ রব। পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল বাঁধার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। টানা দু'বছর পর আবার বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতে উঠবে সবাই। তাই তো শহর থেকে জেলা চলছে জোর কদমে পুজো প্রস্তুতি। 

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কেন্দপুকুরে দেবী দুর্গা পূজিত হন আদিবাসী মন্ত্রে। আদিবাসীদের রীতি রেওয়াজে। আর দেবীর আরাধনাতে মেতে ওঠেন আদিবাসী সম্প্রদায়। মালদহ জেলার হবিবপুর থানা এলাকার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কেন্দপুকুর ভাঙাদিঘীতে দেবী দূর্গার আরাধনা করেন আদিবাসীরায়। ১৫০ বছরের পুরোনো এই পুজো। এই পুজোর প্রচলন করেছিলন লব হাঁসদা। দেবী দূর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু করেছিলেন পুজো।  

শোনা যায়, বাংলাদেশের নাচোল থানার হাকরোল গ্রামে থাকতেন লব হাঁসদা। ঘট পুজোর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল প্রথম পুজো। পরবর্তীকালে দেশভাগের পর ভারতে চলে আসেন তাঁরা। বসবাস শুরু করেন এই রাজ্যের হবিবপুর থানার কেন্দপুকুরের ভাঙাদিঘী গ্রামে। কিন্তু দেবী দুর্গার আরাধনা বন্ধ করেননি তিনি। 

লব হাঁসদার প্রচলিত দুর্গাপুজো আজ সার্বজনীন দুর্গোৎসবে পরিণত হয়েছে। আদিবাসীরা আজ এই পুজোর পরিচালনা করেন নিজেস্ব ঢঙে। লব হাঁসদার উত্তরসূরি বাবুলাল হাঁসদা জানান, তাঁর পরিবারের এই পুজো আজ গ্রামের পুজো। বিগতদিনে ঘট পুজোই হত। সময় বদলেছে গত ২০ বছর ধরে মাটির মূর্তি গড়ে পুজো হয়। কোনও ব্রাক্ষ্মণ পুরোহিতকে পুজো করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় না। উচ্চারিত হয় না দেবী দুর্গার কোনও মন্ত্র।

নিয়ম মেনে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী হয়। পুজোর এই চারদিন আদিবাসীদের নিজস্ব মন্ত্রে আদিবাসী ভাষাতেই পুজো করা হয়। চারদিনই নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। নবমীতে খিচুরী ভোগ করা হয়। গ্রামের এক গৃহবধূ কাবলী মূর্মূ বলেন, ''বাবার বাড়িতে এই পুজো হয়নি কোনও দিন। শ্বশুরবাড়িতেই এই পুজোর রেওয়াজ রয়েছে। পুজোর চারদিন নতুন জামা কাপড় পরে আনন্দে করি সকলে। দেবীকে পান দিয়ে বরণ করি। ভোগ দিই।''

 এলাকার বাসিন্দা সুনীল সোরেন বলেন, ''এই পুজো এখন গ্রামের পুজো। এই উৎসবে তাঁরাও সামিল হন। আদিবাসীরা নতুন পোশাক কেনে। গ্রামের এই পুজোতে বন্ধুদের আমন্ত্রণ করা হয়। জমিয়ে আড্ডা হয়। ভাঙাদিঘী গ্রামে আদিবাসীদের দুর্গার কোনও পাকা মন্ডপ নেই। টিনের ছাউনির তলায় বেদী রয়েছে। সেখানেই পুজো হয় দেবীদূর্গার।''