ভূপতিনগর বিস্ফোরণ, ঘটনার তদন্তে বোম স্কোয়াড

সোমবার সকালে ভুপতিনগর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয় ওই এলাকা। সোমবার দুপুরে মৃত তৃণমূল নেতার বাড়ী পৌঁছয় বোম স্কোয়াডের সদস্যরা।

ভূপতিনগর বিস্ফোরণ, ঘটনার তদন্তে বোম স্কোয়াড

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: তীব্র বিস্ফোরণ! কালো ধোঁয়া। ঘর ভেঙে পড়েছিল। সেখানে থেকেই কারা যেন তিনটে শরীর বার করে নিয়ে গিয়েছে। ভূপতিনগরে তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্তে এবার তৃণমূল নেতার বাড়িতে এল বোম স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াডের তদন্তকারীরা। ভূপতিনগরের অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাড়ুয়াবিলা গ্রামের তৃণমূল নেতার বাড়িতে বিস্ফোরণে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তৃণমূল নেতা সহ তিনজন। শুক্রবার গভীর রাতে বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তৃণমূল নেতা রাজকুমার মান্না, ভাই দেবকুমার মান্না ও প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ গায়েনের।  

 সোমবার সকালে ভুপতিনগর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয় ওই এলাকা। সোমবার দুপুরে মৃত তৃণমূল নেতার বাড়ী পৌঁছয় বোম স্কোয়াডের সদস্যদের প্রতিনিধি দল। এছাড়াও পৌঁছয় পুলিশ কুকুর ও তদন্তকারীরা। এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় গোটা এলাকাজুড়ে। অন্যদিকে ভূপতিনগর বিস্ফোরণে নিহত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর ২ নম্বর ব্লকের ভূপতিনগর থানার অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাড়ুয়াবিলায় বোমা বিস্ফোরণ হয়। তাতেই প্রাণ হারান তৃণমূল বুথ সভাপতি-সহ তিনজন। 

এই ঘটনার পর শনিবার সকালে নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী লতারানি দাবি করেন, একদল দুষ্কৃতী তাঁদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি করেছে। তাতেই প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। তবে তারপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই চাঞ্চল্যকর দাবি তৃণমূল নেতার স্ত্রীর। রবিবার তিনি দাবি করেন, বারবার বারণ করা সত্ত্বেও বাড়িতে বাজি বানাতেন তাঁর স্বামী। কারখানায় কাজ চলার সময় কোনও কর্মী ধূমপান করছিলেন। তার থেকে এই কাণ্ড। তৃণমূল নেতার চাঞ্চল্যকর বয়ান শোনার পর তদন্ত শুরু হয়েছে বলেই জানান মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা। তদন্তকারীদের দাবি, নিহতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতেই তৃণমূলের মৃত বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও ফায়ার সার্ভিস আইনের ধারায় মামলা করা হয়েছে। তবে নিহতদের দেহ কী করে ঘটনাস্থল থেকে অত দূরে গেল তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তদন্তকারীরা। 

পুলিশের দাবি, নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, বাড়িতে বাজি তৈরি হচ্ছিল। শ্রমিকদের এনে বাজি তৈরি করতেন নিহত রাজকুমার মান্না। বাড়িতে বাজি তৈরি করতে বারবার বারণ করলেও শোনেননি তিনি। শনিবার রাত ৯টা থেকে বোমা বাঁধতে বসেছিলেন রাজকুমারবাবু ও তাঁর ২ ভাই। পাশের বাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। তখনই প্রচণ্ড শব্দ পান তিনি। ছুটে এসে দেখেন, চারিদিকে ধোঁয়া। ধুলোয় মিশে গিয়েছে বাড়ি। তবে তৃণমূল নেতার স্ত্রীর চাঞ্চল্যকর বয়ান ঘিরে একাধিক প্রশ্ন ভিড় করেছে। বাজি তৈরির আদৌ কি লাইসেন্স ছিল ওই তৃণমূল নেতার?

বাজি তৈরির জন্য কী এমন মশলা বাড়িতে মজুত ছিল তাতে এমন শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটল? পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রবিবার গ্রামে ফরেনসিক আধিকারিকদের যাওয়ার কথা। তবে পুলিশের ভূমিকায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। শনিবার থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত বহু মানুষ বিস্ফোরণস্থলে ঘোরাফেরা করেছেন। তা সত্ত্বেও ঘটনাস্থল পুলিশ কেন ঘিরে রাখল না, সেই প্রশ্ন তুলছেন এলাকার বেশ কয়েকজন। তার ফলে প্রমাণ লোপাটের সম্ভাবনা একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।