ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কেবলই রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ(Jibanananda Das Birthday)? না এই ধারণা আর নেই কারোর মধ্যেই যারা পড়েছেন, পুরোপুরি চিনেছেন জীবনানন্দ দাশকে। তাঁর রূপসী বাংলা কাব্যের কবিতা গুলো যদিও বাংলার অপরূপ রূপ ব্যক্ত করে আপামোর বাঙালীর কাছে কিন্তু বেশিরভাগ কবিতাগুলোতেই এই নৈসর্গিকতা, নির্জনতা লক্ষ্যনীয়। এই কবির জন্মদিবস ছিল গতকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি জন্মেছিলেন বাংলাদেশের বরিশালে। চলুন দেখে নিই বরিশালের মানুষ এই দিনে কীভাবে স্মরণ করলেন এই বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশকে। উল্লেখ্য এটি তাঁর ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তী।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সেরা সম্পদ (Jibanananda Das Birthday)
জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন(Jibanananda Das Birthday)। তাঁর মা কুসুমকুমারী দাশও একজন কবি ছিলেন। জীবনানন্দের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা ও রূপসী বাংলা। তিনি ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোট গল্পও রচনা করেছিলেন। বাংলা কবিতার এই প্রবাদপ্রতিম কবি ১৯৫৫ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন এবং ২২ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম সেরা সম্পদ।
বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে (Jibanananda Das Birthday)
কবির কর্মস্থল বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী জীবনানন্দ মেলার আয়োজন করা হয়েছে(Jibanananda Das Birthday)। উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই মেলার উদ্বোধন করে কলেজের অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গর্বিত বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ আমাদের এই কলেজেরই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।’ জীবনানন্দ মেলা উদ্যাপন পর্ষদের সদস্যসচিব জায়েদ ইবনে হারুন জানান, তিন দিনের এই মেলা চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলায় ৫৫টি স্টলে বই ও অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যাবে। মেলার অংশ হিসেবে চারটি অধিবেশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। প্রথমে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে, এরপর থাকবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন: Dhaka Theatre Festival: লালন স্মরণোৎসব, বসন্ত উৎসবের পর এবার বন্ধ বাংলাদেশে নাট্য উৎসব?
জীবনানন্দ দাশ সড়কে কবির জন্মভিটায়
সকাল ৯টায় নগরের জীবনানন্দ দাশ সড়কে কবির জন্মভিটায় স্থাপিত জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি মিলনায়তন ও পাঠাগারে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রগতি লেখক সংঘ ও বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। এ সময় আলোচনা সভা, আবৃত্তি পরিবেশিত হয়। বক্তারা বিভিন্ন ভাবে স্মৃতিচারণ করেন তাঁর। নির্জনতার কবি হিসেবে খ্যাত হলেও জীবনানন্দ দাশ একজন কাল ও ইতিহাস-সচেতন কবি ছিলেন। আধুনিক কাব্যকলার বিচিত্র তত্ত্ব প্রয়োগ ও শব্দ নিরীক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর অনন্যতা বিস্ময়কর। বিশেষত কবিতার উপমা প্রয়োগে জীবনানন্দের নৈপুণ্য তুলনাহীন বললেন বক্তারা।
কবির নামে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠানের দাবি
আলোচনা সভায় সংস্কৃতিজন নজরুল হক বলেন, ‘কবির পৈতৃক ভিটা ছিল নগরের আজকের জীবনানন্দ দাশ সড়কের এই সর্বানন্দ ভবন। আমরা দাবি জানাচ্ছি, সর্বানন্দ ভবন ঘিরেই কবির নামে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য একটি বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার।’
অনুষ্ঠানে আইনজীবী হিরন কুমার দাস বলেন, কবির বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। কবি নিজেও ব্রজমোহন কলেজে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ইংরেজি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। বরিশালের প্রকৃতি ঘিরেই কবির অজস্র রচনা ও সাহিত্যকর্ম দেখা যায়। এ জন্য কবির এই সাহিত্যকর্মের গবেষণা, স্মৃতি সংরক্ষণ করা সবার দায়িত্ব।
চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন
চারুকলা বরিশাল ‘জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি’ শীর্ষক, একদিনের চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সোমবার বেলা ১১টায় নগরের বান্দরোডে শিল্পকলা একাডেমির তৃতীয় তলার আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কবি অরূপ তালুকদার ও শিল্পী জগন্নাথ দে। প্রদর্শনীতে জল রং, পেনসিল, ও চারকোলে অঙ্কিত ২৫ জন শিল্পীর ৩৪টি চিত্রকর্ম উপস্থাপিত হয়েছে। প্রদর্শনের মুখ্য সংগঠক শিল্পী তাপস কর্মকার বলেন, এটি কবির প্রতি চিত্রশিল্পীদের শ্রদ্ধার্ঘ্য(Jibanananda Das Birthday)।