ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গবেষণায় উথে এল নতুন তথ্য। তাক লাগিয়ে দিচ্ছে এই গবেষণা (Beaches found on Mars)। মঙ্গলে সমুদ্র! নতুন গবেষণায় মিলল প্রাচীন সৈকতের প্রমাণ।
মঙ্গলের বালুকাময় অতীত (Beaches found on Mars)
মঙ্গল গ্রহকে আমরা সাধারণত এক শুষ্ক ও ধুলোময় মরুভূমি হিসেবেই দেখি (Beaches found on Mars)। কিন্তু নতুন গবেষণায় জানা গেছে, একসময় সেখানে বিশাল মহাসাগর ছিল। বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের পৃষ্ঠের নিচে প্রাচীন সৈকতের স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন, যা এই লাল গ্রহের একসময়কার জলময় অতীতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পৃথিবীর মতোই মঙ্গলের নিচে লুকিয়ে রয়েছে সৈকত! (Beaches found on Mars)
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের নিচে চাপা পড়ে থাকা উপকূলরেখার অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়েছে (Beaches found on Mars)। বিজ্ঞানীদের মতে, একসময় মঙ্গলের উত্তরের অংশে একটি বিশাল সমুদ্র ছিল। গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার (GPR) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা মাটির গভীরে এমন কিছু ভূ-গঠন শনাক্ত করেছেন, যা পৃথিবীর প্রাচীন সৈকতের মতো দেখতে। এই ৪০০ কোটি বছর আগের সমুদ্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিউটেরোনাইলাস’।
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ বেঞ্জামিন কার্ডেনাস বলেন, “আমরা এমন কিছু জায়গা খুঁজে পেয়েছি, যা দেখতে অনেকটা প্রাচীন সৈকত ও নদীর বদ্বীপের মতো। বাতাস, ঢেউ আর বালুকাবেলার ছোঁয়া—একেবারে পুরনো সময়ের কোনো সমুদ্রসৈকতের মতো।”
GPR ডাটায় দেখা গেছে, সৈকতের তলদেশে পুরু পলির স্তর রয়েছে, যা ১৫ ডিগ্রি কোণে ঢালু হয়ে আছে (Beaches found on Mars)। পৃথিবীর প্রাচীন সৈকতগুলোর গঠনের সঙ্গেও এর অনেক মিল রয়েছে।
আরও পড়ুন: Mahashivratri 2025: মহাশিবরাত্রিতে ৬০ বছর পর এক বিরল শুভ যোগ, ভাগ্য খুলছে কাদের?
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ মাইকেল মাঙ্গা বলেন, “এগুলো বালিয়াড়ি, গহ্বর বা লাভার প্রবাহের মতো নয়। এগুলোর গঠন ও ঢাল দেখে মনে হচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে এখানে একটি বিশাল সমুদ্র ছিল।”
মঙ্গলের জল রহস্য আরও গভীর হলো
এই গবেষণাটি চীনের ঝুরং রোভার (Zhurong rover) থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ঝুরং যখন মঙ্গলের ইউটোপিয়া প্ল্যানিটিয়া অঞ্চলে অনুসন্ধান চালায়, তখন তার রাডার ৮০ মিটার গভীর পর্যন্ত স্ক্যান করে। ডেটায় পলি স্তরগুলোর একটি নির্দিষ্ট দিকে ঢালু থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা একটি প্রাচীন সমুদ্রের সৈকতরেখা থাকার তত্ত্বকে আরও দৃঢ় করে।
বিজ্ঞানীরা আগেও ধারণা করেছিলেন যে, একসময় মঙ্গলে তরল অবস্থায় জল ছিল। তবে নতুন গবেষণায় মঙ্গলের প্রাচীন মহাসাগর কতদিন টিকে ছিল এবং সেটির আকার কেমন ছিল, সে সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে। মাইকেল মাঙ্গা বলেন, “বিশাল জলাশয় মানেই সেখানে জোয়ার-ভাটা ও ঢেউ ছিল। পৃথিবীর মতো চাঁদ না থাকলেও, সূর্যের প্রভাবে মঙ্গলে জোয়ার-ভাটা এবং শক্তিশালী বাতাসের কারণে ঢেউ তৈরি হতে পারত।”
আরও পড়ুন: Mahakumbha 2025: মহাশিবরাত্রিতে অবসান মহাকুম্ভের, জানুন এই দিনের মাহাত্ম্য
এই তথ্যগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, একসময় মঙ্গলে একটি প্রাণবান্ধব পরিবেশ ছিল, যেখানে নদীগুলো পলি বহন করে সমুদ্রের তীরে এনে ফেলত এবং ঢেউ সৈকতকে আকার দিত—একেবারে পৃথিবীর মতোই।
প্রাণের সন্ধানে নতুন আশা
এই প্রাচীন সৈকত আবিষ্কার মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যেখানে জল, স্থল ও বায়ুর সংযোগ ঘটে, সেখানে জীবনের উদ্ভবের সম্ভাবনা বেশি। মাঙ্গা বলেন, “পৃথিবীতেও ধারণা করা হয়, জীবন সম্ভবত এমন জায়গাতেই প্রথম শুরু হয়েছিল। যদি আমরা মঙ্গলে এ রকম উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাই, তাহলে হয়তো অতীতের প্রাণের অস্তিত্বের কোনো ইঙ্গিত পেতে পারি।” গবেষণাটি আরও বলছে, মঙ্গলের বেশিরভাগ জল হয়তো এখনো ভূগর্ভে আটকে রয়েছে। মাঙ্গার পূর্বের গবেষণায় বলা হয়েছিল, মঙ্গলের পৃষ্ঠের নিচে আজও বিশাল জলাধার থাকতে পারে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
এখন বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের অতীতের ঢেউ ও জোয়ার-ভাটা নিয়ে আরও বিস্তারিত মডেল তৈরি করতে চান, যাতে এই প্রাচীন সমুদ্রের ইতিহাস ও তার সম্ভাব্য বাস্তুসংস্থান সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এই গবেষণার পূর্ণ প্রতিবেদন ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।