ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিশ্বজুড়ে আজ ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করা হলেও, ভারতবাসীর কাছে দিনটি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার দিন (5 Years Of Pulwama Incident)। ছয় বছর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় (Pulwama) জঙ্গি হামলায় শহিদ হন ৪০ জন বীর সিআরপিএফ জওয়ান (40 Brave CRPF Jawans Were Martyred)। তারপর থেকেই দিনটি ভারতে ‘কালা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পুলওয়ামায় শহীদ জওয়ানদের স্বরণে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর (5 Years Of Pulwama Incident)।
অতিক্রান্ত পুলওয়ামা কাণ্ডের ৫ বছর (5 Years Of Pulwama Incident)
আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বিশ্বজুড়ে দিনটি ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতবাসীর কাছে দিনটি ‘কালা দিবস’ বা ‘ব্ল্যাক ডে’ (Black Day)। আজ থেকে ঠিক ৬ বছর আগে লাল গোলাপের ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার দিনে রক্তাক্ত হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা (Pulwama Incident)। তার আগের দিনই পুলওয়ামার স্কুলে বিস্ফোরণে আহত হয়েছিল ১০ ছাত্র। তারপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের জঙ্গি হামলা ঘটে ভূস্বর্গে। ৫ বছর পরেও দগদগে পুলওয়ামা কাণ্ডের সেই ক্ষত (5 Years Of Pulwama Incident)।
ঠিক কি ঘটেছিল সেদিন? (5 Years Of Pulwama Incident)
১৪ ফেব্রুয়ারি,২০১৯, জম্মু থেকে ২,৫০০ সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা CRPF এর ৭৮ টি গাড়ীর একটি কনভয় জাতীয় সড়ক ধরে যাচ্ছিল শ্রীনগরে (Srinagar)। সূর্যাস্তের আগে কনভয়টির গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় বিপত্তি। কাকাপোরা-লেলহর লিঙ্ক রোড দিয়ে ঢুকে পড়ে বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি। বাঁ দিকে থাকা বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িটি নিয়ে জঙ্গিরা সোজা ধাক্কা মারে ৫৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানদের বাসে। ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তারপর শুরু হয় কনভয় লক্ষ্য করে অবিরাম গ্রেনেড ও গুলিবৃষ্টি (5 Years Of Pulwama Incident)।
ভালোবাসা দিবসে শহীদ ৪০ জন বীরযোদ্ধা
ভালোবাসা দিবসে সবাই যখন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে ভালোবাসা বিনিময়ে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ই ৪০ জন বীরযোদ্ধাকে হারায় দেশ। লাল গোলাপের ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার দিনে রক্তাক্ত হয় ভূস্বর্গ। শহীদদের মধ্যে ছিলেন ২ বাঙালিও। কফিনবন্দী হয়ে ফিরলেন হাওড়ার বাবলু সাঁতরা (Bablu Santra of Howrah), নদিয়ার সুদীপ বিশ্বাসদের (Sudeep Biswas of Nadia) মতো অসম, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের ১৬টি রাজ্যের ৪০টি পরিবারের বীর সন্তান।
হামলার ছক ৬ মাস আগে!
কীভাবে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়েতে (Jammu-Srinagar Highway) এত বড় জঙ্গি হানা ঘটাতে সক্ষম হল জঙ্গিরা? প্রায় আড়াইশো কিলো বিস্ফোরক নিয়ে জঙ্গিরা বসে থাকল, অথচ গোয়েন্দারা ঘুণাক্ষরে টের পর্যন্ত পেল না ? এইসব প্রশ্নের মাঝেই সামনে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারে, পুলওয়ামা হামলার ছক কষা হয় ৬ মাস আগে। পাকিস্তানে জঈশ-ই-মহম্মদের (Jaish-e-Mohammed) সদর দফতরেই তৈরি হয় ব্লু প্রিন্ট। আর সেই ব্লু প্রিন্ট মেনেই হামলা চালানো হয়।
হামলার দায় স্বীকার জইশ-ই-মহম্মদের
পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকার করে নেয় জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। হামলাকারী ছিলেন পুলওয়ামা জেলার স্থানীয় আদিল আহমদ দার (Adil Ahmad Dar)। বীর যোদ্ধাদের শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi), রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi), নির্মলা সীতারমন (Nirmala Sitharaman) সহ অন্যান্যরা। বীর সৈন্যদের কফিনবন্দি দেহ দেখে চোখ ভিজেছিল দেশবাসীর। শহিদ জওয়ানদের আত্মত্যাগের প্রতিশোধ চেয়ে গর্জে ওঠে সারা দেশ।
শুরু হয় প্রতিশোধের প্রস্তুতি
শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতিশোধ নিতে চলে প্রস্তুতি। ১২ দিন পর ২৬শে ফেব্রুয়ারি এল প্রত্যাঘাতের দিন। পাকিস্তানের বালাকোটে (Balakot, Pakistan) বিমান হামলা চালায় ভারত। চলে ২১ মিনিটের নিখুঁত অপারেশন। জইশ-ই -মহম্মদের কন্ট্রোল রুম উড়িয়ে দেয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ যুদ্ধবিমান (Mirage Fighter Jet)। প্রায় সাড়ে তিনশো জঙ্গির মৃত্যু হয় বলে দাবি করা হয়। কিন্তু সেই প্রত্যাঘাতের পরও শুকায়নি পুলওয়ামার ঘা।
আরও পড়ুন: Manipur : মিলল না বীরেনের বিকল্প, মণিপুরে জারি রাষ্ট্রপতি শাসন
শহিদদের স্মরণ করে পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর
স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় এই নাশকতার পর ঘটেছে অনেক পরিবর্তন।কিন্তু বদলায়নি শহীদ জওয়ানদের পরিবারের হাহাকার। গত পাঁচ বছরের মতো এবারও নিজেদের প্রাণের মানুষের ছবিগুলোকে বুকে আগলে রেখে কাটল শহীদ জওয়ানদের পরিবারের ‘কালা দিবস’। আজ সেই শহিদদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “২০১৯ সালে পুলওয়ামায় যে সাহসী বীরদের হারিয়েছি, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের আত্মত্যাগ এবং জাতির প্রতি তাঁদের অটল নিবেদন আগামী প্রজন্ম কখনও ভুলবে না।”