ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের ক্ষমতায় বসার পরেই গ্রিনল্যান্ডকে আমেরিকার সাথে যুক্ত করার কথা বলতে শোনা গিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (Trump on Greenland)। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এবার কি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপটি দখল করতে সেনা পাঠাবেন সদ্য ক্ষমতায় বসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প?
কেন দখল করবে গ্রিনল্যান্ড? (Trump on Greenland)
গ্রিনল্যান্ড কি দখল করবে আমেরিকা (Trump on Greenland)? এই নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বিশ্বের তাবড় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বৃহত্তম এই দ্বীপটিকে ছুঁয়ে উত্তর মেরুতে গিয়ে মিশেছে আটলান্টিক মহাসাগর। সুমেরুর বেশ কিছু এলাকায় রাশিয়ার ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সুমেরু থেকে দ্রুত গ্রিনল্যান্ডে এসে দ্বীপটিকে দখল করা মস্কোর পক্ষে খুব বেশি কঠিন নয়। আর আমেরিকার মধ্যে রয়েছে এই আশঙ্কা! যে কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম দ্বীপটিকে কবজা করতে উঠে পড়ে লেগেছে ট্রাম্প।
আমেরিকার নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে? (Trump on Greenland)
গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটির অবস্থান আমেরিকার উত্তর অংশে (Trump on Greenland)। যদি এই গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটি রাশিয়ার দখলে যায় তাহলে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে আমেরিকা। নিরাপত্তার প্রশ্নই সবচেয়ে বড় হয়ে উঠবে এক্ষেত্রে। তখন খুব সহজেই পশ্চিম দিকের রাজধানী ওয়াশিংটন বা বাণিজ্য শহর নিউইয়র্ক চলে আসবে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র গুলির নিশানায়। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি তৈরি যাতে না হয় তার জন্য সব রকম পদক্ষেপ নিতে চাইছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আর এজন্যই প্রশ্নটা আরও জোরালো হচ্ছে, তাহলে কি গ্রিনল্যান্ডের জন্য আমেরিকার নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়বে?
গেম চেঞ্জার জিআইইউকে গ্যাপ
গ্রিনল্যান্ডের অদূরেই রয়েছে আইসল্যান্ড এবং ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ। এই তিনটি দ্বীপের মধ্যে মোট দু’টি সামুদ্রিক রাস্তা রয়েছে। বিশ্বের বড় বড় নৌসেনা কর্তারা এই সামুদ্রিক রাস্তার নাম দিয়েছেন ‘গ্রিনল্যান্ড-আইসল্যান্ড-ইউকে গ্যাপ’ বা জিআইইউকে গ্যাপ। সমুদ্রের লড়াইয়ে এই দুই রাস্তাকে বড় ‘চোকপয়েন্ট’ হিসেবেও মনে করেন তাঁরা। রণতরি হোক বা মালবাহী জাহাজ-সমুদ্রপথে ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা যাওয়ার একমাত্র পথ হল এই জিআইইউকে গ্যাপ। এছাড়া আর অন্য কোনো রাস্তা নেই। আর সেই কারণেই এই সামুদ্রিক পথের গুরুত্ব অনেক বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ‘গেম চেঞ্জার’-এর ভূমিকা নিয়েছিল এই সামুদ্রিক রাস্তা। বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা থেকে হাতিয়ার ও অন্যান্য সামগ্রী এই সামুদ্রিক পথ দিয়ে সহজেই পৌঁছত ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের বন্দরে। ফলে অ্যাডল্ফ হিটলারের জার্মানির বিরুদ্ধে কখনোই গোলা-বারুদের অভাবে ভুগতে হয়নি তাদের। তাই বোঝাই যাচ্ছে, এই সামুদ্রিক পথটির গুরুত্ব কতটা।
আরও পড়ুন: Donald Trump New Step:প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ফল, বরখাস্ত মার্কিন মুলুকের এক ডজন কর্মকর্তা
ন্যাটো গঠন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই জিআইইউকে গ্যাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আইসল্যান্ড এবং গ্রিনল্যান্ডের সামরিক ঘাঁটি গুলি মিত্রশক্তিকে খুবই শক্তিশালী করেছিল। এই সামরিক ঘাঁটির জন্যই অক্ষশক্তির দেশ গুলি খুব বেশি আক্রমণ শানাতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘ঠান্ডা লড়াই’ শুরু হলে এই এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এই সময়ে সোভিয়েত আগ্রাসন ঠেকাতে ১৯৪৯ সালে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন’ নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন বা ন্যাটো গড়ে তোলে আমেরিকা। এরপরই জিআইইউকে গ্যাপে নজরদারি শুরু করে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলি।
জিআইইউকে গ্যাপে কেন রাশিয়ার নজরদারি
১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতনের পর জিআইইউকে গ্যাপের উপর নজরদারি কমিয়ে দেয় আমেরিকা। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলিও তাদের সামরিক সরঞ্জাম ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। সম্ভাব্য রুশ আক্রমণের আশঙ্কা একেবারে কমে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকা। রাশিয়ার উত্তরে থাকা সুমেরুর জমা বরফ রাশিয়াকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু, সেই বরফ ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে। এজন্য আটলান্টিকের পথ দিয়ে মস্কোকে আক্রমণ করা খুব বেশি কঠিন নয়। আর এজন্যই রাশিয়া জিআইইউকে গ্যাপের উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: Chinese AI: চিনা এআই-র সাফল্য, বিরাট ধাক্কা আমেরিকার, ক্ষতি ৫০ লক্ষ কোটি
আটলান্টিকের নতুন পথ সন্ধান করেছে রাশিয়া
জিআইইউকে গ্যাপের চেক পয়েন্টগুলিকে এড়িয়ে আটলান্টিকের নতুন পথ খুঁজতে মরিয়া রাশিয়া। এমনকি কিছু গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, আগামী সংঘাতগুলিতে ইন্টারনেটের ফাইবার কেবল কেটে হাইব্রিড যুদ্ধ চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে রাশিয়ার। আর সেই পরিকল্পনা বুঝতে পেরে এবার যুদ্ধ বিমান, সাবমেরিন ও যুদ্ধ জাহাজের মহড়া চালাচ্ছে আমেরিকা। রাশিয়ার ডুবোজাহাজ চিহ্নিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রযুক্তি। জিআইইউকে গ্যাপে নজরদারি চালাতে সমুদ্রের গভীরে চলাচলকারী বিশেষ ধরনের ড্রোন তৈরি করছে আমেরিকা।
গ্রিনল্যান্ড বিক্রির প্রস্তাব
গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটি উত্তর আমেরিকার অন্তর্গত হলেও সেটি ডেনমার্কের অংশ। কিন্তু, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ডকে আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত করতে চান। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ডকে আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি। কিন্তু, ডেনমার্ক আমেরিকার দাবিতে রাজি নয়। ডেনমার্ক খনিজ সম্পদে ভরা দ্বীপটি বিক্রি করতে চাইছে না। এতে জার্মানি ও ফ্রান্সেরও আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।
জোর করে গ্রিনল্যান্ড দখল
গ্রিনল্যান্ডকে দখলের জন্য ডেনমার্কের সঙ্গে বার্তালাপে কাজ হয়নি। তাহলে এবার কি জোর করে গ্রিনল্যান্ড দখল করার চেষ্টা করবেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প? তা বুঝতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেননা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে কোনো মুহূর্তে নতুন মোড় তৈরি হতে পারে গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে।