ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ট্রাম্প আমেরিকারপ্রেসিডেন্ট পদে বসার পর থেকেই মাথা ব্যাথা বেড়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির (Trump vs Zelenskyy)। পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের সম্ভাবনা এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু কেন হচ্ছে এই উলটপুরাণ?
উত্তেজনার মধ্যে ট্রাম্পের কটাক্ষ (Trump vs Zelenskyy)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ বলে আক্রমণ করেছেন (Trump vs Zelenskyy)। ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি আলোচনাকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর এসেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন যে “ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করেনি।” তিনি আরও অভিযোগ করেছিলেন যে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবে আলোচনায় বসলেও, কিভকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি (Trump vs Zelenskyy)।
বুধবার, অনলাইনে একটি পোস্ট ও মায়ামির এক সভায় দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প জেলেনস্কির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানান। তিনি অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মার্কিন অর্থ গ্রহণ করে দেশকে এক অন্তহীন সংঘাতের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।
জেলেনস্কি সম্পর্কে ট্রাম্পের অভিযোগ কী? (Trump vs Zelenskyy)
ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম “ট্রুথ সোশ্যাল”-এ এক পোস্টে জেলেনস্কিকে “একজন মাঝারি মানের কৌতুক অভিনেতা” বলে কটাক্ষ করেন (Trump vs Zelenskyy)। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আমেরিকাকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে বাধ্য করেছেন, এক এমন যুদ্ধে যা কখনও জেতা সম্ভব নয় এবং শুরু হওয়ারই কথা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনকে সহায়তার ক্ষেত্রে আমেরিকা ইউরোপের তুলনায় ২০০ বিলিয়ন ডলার বেশি ব্যয় করেছে (Trump vs Zelenskyy)। ট্রাম্পের দাবি, “জেলেনস্কি নির্বাচন করতে অস্বীকার করছেন, ইউক্রেনে তার জনপ্রিয়তা অত্যন্ত কম, এবং একমাত্র কাজ যা তিনি ভালোভাবে করেছেন, তা হলো বাইডেনকে নিয়ন্ত্রণ করা।”
তিনি আরও বলেন, “জেলেনস্কি খুব খারাপভাবে ইউক্রেন পরিচালনা করেছেন। তিনি একটি ‘নির্বাচনবিহীন একনায়ক।’”
শান্তি আলোচনা নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান (Trump vs Zelenskyy)
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তাঁর প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর বিষয়ে সফলভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে (Trump vs Zelenskyy)। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র ট্রাম্প ও ট্রাম্প প্রশাসনই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। বাইডেন কখনও চেষ্টা করেননি, ইউরোপ ব্যর্থ হয়েছে, এবং জেলেনস্কি সম্ভবত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান।”
ট্রাম্প কেন এই মন্তব্য করছেন?
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে একদিন পর, যখন জেলেনস্কি বলেন, “ট্রাম্প রুশ প্রপাগান্ডার শিকার হয়েছেন।” ট্রাম্পের মন্তব্যের কারণ ব্যাখ্যা করে আল জাজিরার হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা কিম্বারলি হ্যালকেট বলেন, “ট্রাম্প খুবই সংবেদনশীল প্রকৃতির। তিনি জেলেনস্কির মন্তব্যে বিরক্ত হয়েছেন বলেই এই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।”
মঙ্গলবার, ট্রাম্প ইউক্রেনকেই যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করে বলেন, “তোমরা তিন বছর ধরে যুদ্ধের মধ্যে আছো। তোমাদের উচিত ছিল এটি শেষ করা। এটি কখনও শুরু হওয়ারই কথা ছিল না।” (Trump vs Zelenskyy) তিনি আরও দাবি করেন, “ইউক্রেনের উচিত নির্বাচন করা।” যদিও কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তিনি বলেন, “জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র ৪ শতাংশ।”
জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া কী?
মঙ্গলবার ইউক্রেনের একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, “আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে কিছু সংখ্যার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ট্রাম্প দুঃখজনকভাবে মিথ্যা প্রচারের শিকার।” দুই নেতার মধ্যে উত্তেজনা তখনই বাড়ে, যখন ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন এবং ইউক্রেন ও ইউরোপকে বাদ দিয়েই আলোচনার উদ্যোগ নেন।
আরও পড়ুন: Marriage Ritual: বিয়ের পর ৩ দিন শৌচালয় নিষিদ্ধ, না মানলেই ভাঙবে বিয়ে!
জেলেনস্কি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা এবং ইউরোপের দেশগুলিকে রিয়াধ আলোচনায় রাখা উচিত ছিল।”
ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই রুশপ্রীতি ইউরোপের নেতাদের বিস্মিত করেছে। তাঁদের আশঙ্কা, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে হলে ইউরোপ রুশ আগ্রাসনের শিকার হতে পারে। বুধবার, জেলেনস্কি অভিযোগ করেন যে “ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন না রেখে উল্টে তাকে আন্তর্জাতিক আলোচনায় ফিরিয়ে আনছে।” তিনি বলেন, “এটি ইউক্রেনের জন্য ইতিবাচক কিছু নয়। এটি কেবল পুতিনকে বিশ্ব আলোচনায় ফিরিয়ে আনছে।”
ট্রাম্পের অভিযোগ সত্যি কী?
ট্রাম্পের অভিযোগ, ইউক্রেনে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়নি। তবে বাস্তবে, ২০২৪ সালের মে মাসে জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়, কিন্তু রাশিয়ার আক্রমণের কারণে সামরিক আইন চালু থাকায় নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।
এছাড়া, ট্রাম্প যে ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সহায়তার পরিমাণ উল্লেখ করেছেন, তা বাস্তব তথ্যের সঙ্গে মেলে না।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপ ইউক্রেনকে ১৩৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যেখানে আমেরিকা দিয়েছে ১২০ বিলিয়ন ডলার।
আরও পড়ুন: Pakistan Shoot Out: ৭ পাঞ্জাবীকে বাস থেকে নামিয়ে গুলি করে হত্যা পাকিস্তানে
এছাড়া, ট্রাম্পের দাবি, “ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করেছে,” তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রাশিয়াই ২০২২ সালে “বিশেষ সামরিক অভিযান” চালিয়ে ইউক্রেনে সেনা পাঠায় এবং এখন পর্যন্ত দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে।
কূটনৈতিক প্রভাব কী হবে?
জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার কিভে ট্রাম্পের বিশেষ দূত কিথ কেলোগের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ইউক্রেন তার পশ্চিমি মিত্রদের কাছ থেকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি চেয়েছে, যাতে যুদ্ধ বন্ধ হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা সুরক্ষিত থাকে। তবে ট্রাম্পের আচরণ ও তার আমেরিকান নীতিতে পরিবর্তনের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো নতুন কৌশল খুঁজছে।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলৎজ বলেছেন, “জেলেনস্কির গণতান্ত্রিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ভুল ও বিপজ্জনক।” তিনি বলেন, “যুদ্ধকালীন সময়ে নির্বাচন বন্ধ রাখা ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী বৈধ।” ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বুধবার জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন এবং ব্রিটেনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দেন। ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র বলেন, “যুদ্ধ চলাকালীন নির্বাচন স্থগিত রাখা যুক্তিযুক্ত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনও তা করেছিল।”
বিবাদ শুধু ব্যক্তিগত নয়
ট্রাম্প বনাম জেলেনস্কির এই বিবাদ শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি মার্কিন-ইউক্রেন সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার, এই সংঘাত ভবিষ্যতে ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি আলোচনায় কী পরিবর্তন আনে।