রিমিক মাঝি, কলকাতা: দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে ভারতের পাকিস্তান বধের আগেই সবুজ-মেরুন রঙে অকাল হোলিতে মাতলো যুবভারতীর গ্যালারি। রবিবার ঘরের মাঠে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে দিমিত্রি পেত্রাতোসের করা গোলে ওড়িশা এফসি-কে ১-০ গোলে হারিয়ে আইএসএল লিগ শিল্ড (ISL league Shield) খেতাব জিতে নিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। দেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা দু’বার লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হল মোহনবাগান। লিগের দুই ব্যাচ বাকি থাকতেই এই নজির গড়ল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। গত বছর লিগ শিল্ড জিতলেও রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল মোহনবাগানকে। তাই এ বছর লিগ শিল্ডের পাশাপাশি আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েও জোড়া সেলিব্রেশনের অপেক্ষায় মুখিয়ে সবুজ-মেরুন সমর্থকরা।
শনিবার কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে দিয়েছিল গোয়া। তাই রবিবার ঘরের মাঠে ওড়িশাকে হারালেই লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হতো মোহনবাগান। তাই ওড়িশার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করে মোহনবাগান। জিততে প্রথম থেকেই জেমি ম্যাকলারেনের সঙ্গে গ্ৰেগ স্টুয়ার্টকে জুড়ে দিয়েছিলেন সবুজ-মেরুন কোচ হোসে মোলিনা (ISL league Shield)। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোলের দরজা খুলতে পারেনি মোহনবাগান। প্রথমার্ধেই বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরিও করে ফেলেছিল মোহনবাগান। কিন্তু সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন মনবীর সিং। ফলে গোলশূন্য ভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
দ্বিতীয়ার্ধেও শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মোহনবাগান। মুহুর্মুহু সবুজ-মেরুন আক্রমণকে সামাল দিতে রক্ষণে নেমে আসে গোটা ওড়িশা দল। তাতেও গোলের দরজা না খোলায়, জেসন কামিংস, দিমিত্রি পেত্রাতোস, আশিক কুরেনিয়ানদের নামিয়ে আক্রমণকে আরও জোরালো করেন কোচ মোলিনা। ৮৪ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে ম্যাকলারেনকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন ওড়িশার ডিফেন্ডার মোর্তাদা ফল। ১০ জনে হয়ে যায় ওড়িশা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে সংযুক্ত সময়ের ৯৩ মিনিটের মাথায় ম্যাচের একমাত্র গোলটি করে মোহনবাগানকে ভারত চ্যাম্পিয়ন করেন পেত্রাতোস। মনবীরের পাশ থেকে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দুরন্ত শটে গোল করে যান দিমি।
মায়াবী যুবভারতীতে দিমি ম্যাজিক (ISL league Shield)
মোহনবাগান জনতার নয়নের মণি তিনি। গত মরশুমে সবুজ-মেরুন জার্সিতে দুরন্ত ফুটবল খেলেছিলেন। করেছিলেন একাধিক গোল। কিন্তু এই মরশুমে সেইভাবে নিজেকে মেরে ধরতে পারেননি দিমিত্রি পেত্রাতোস। চোট সারিয়ে ফেরার পর গোল পাচ্ছিলেন না। তাই বহু ম্যাচেই প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি। তাঁকে রিজার্ভ বেঞ্চেই বসিয়ে রেখেছিলেন মোলিনা (ISL league Shield)। রবিবারও ওড়িশার বিরুদ্ধে ছিলেন না প্রথম একাদশে। ৭৮ মিনিটে টম অলড্রেডের জায়গায় নামেন তিনি। আর সুপারসাব হিসেবে নেমেই দলকে ভারত সেরা করলেন দিমি। গোল করেই গ্যালারির দিকে ছুটে গেলেন সবুজ-মেরুনের অজি ফরওয়ার্ড। গ্যালারিতেও তখন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস।

যুবভারতীর গগনচুম্বি চিৎকারে তখন কানপাতা দায়। খারাপ সময়ে যারা তাঁকে ভরসা যুগিয়েছিলেন, বিশ্বাস করেছিলেন- সেই সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সঙ্গেই ভাসলেন উচ্ছ্বাসে। গোল করেই করলেন সেই পরিচিত ‘স্টেনগান’ সেলিব্রেশনও। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে তখন গোটা দল মাঠে নেমে শুরু করে দিয়েছে সেলিব্রেশন (ISL league Shield)। মাঠে নেমে উচ্ছ্বাসে ভাসলেন কোচ হোসে মোলিনাও। সাধারণত গোলের পর এইভাবে সেলিব্রেশন করতে কোনদিনই দেখা যায়নি সবুজ-মেরুনের ‘শান্ত’ কোচকে। এই জয় তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মোলিনার এই সেলিব্রেশনই বুঝিয়ে দিল।
আরও পড়ুন: Kerala in Ranji Final: ঐতিহাসিক জয়! রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে কেরালা
গোলের কয়েক মিনিট পরই রেফারি হরিশ কুন্ডু ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজাতেই গ্যালারিতে লাল-সবুজ আবিরে জয়ের সেলিব্রেশনে মাতল যুবভারতীর গ্যালারিতে উপস্থিত ৫৭ হাজার মোহনবাগান সমর্থক। মাঠেও শুরু হয়ে গেছে তখন বাঁধভাঙ্গা সেলিব্রেশন। তার মাঝেই দিমির চোখে জল কারও চোখ এড়িয়ে যায়নি। সমর্থকদের চোখেও আনন্দ অশ্রু। সেলিব্রেশনের আগাম প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল মোহনবাগান (ISL league Shield) । ম্যাচ শেষ হতেই লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন মেরুন টি-শার্ট পরে মাঠেই সেলিব্রেশনে মাতলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলার থেকে শুরু করে কোচ, সাপোর্ট স্টাফেরা এবং ফুটবলারদের স্ত্রী ও বান্ধবীরাও। কাঁধে চড়িয়ে নায়ক দিমিকে বরণ করে নিলেন অধিনায়ক শুভাশিস বোস, গ্রেগ স্টুয়ার্টরা।
দলের কর্ণধার উৎসব পারেখ এবং সঞ্জীব গোয়েঙ্কাও সামিল হলেন সেই সেলিব্রেশনে। চ্যাম্পিয়ন লেখা টি-শার্ট পরে গোটা মাঠ ঘুরলেন ফুটবলারেরা। তখনও যেন সেলিব্রেশন শেষ হচ্ছিল না। ম্যাচ শেষে রীতিমতো বক্সে হিন্দি গান বাজিয়ে নাচতে নাচতে টিম বাসে উঠলেন জেসন কামিংস, দীপক টাংরিরা। বাসেও চলল ফুটবলারদের নাচ (ISL league Shield)। টিম বাস তখন ঘিরে ফেলেছে কয়েকশো সবুজ-মেরুন সমর্থক। বাসের ভিতর থেকেই সমর্থকদের সেই উচ্ছ্বাস মোবাইল বন্দি করলেন সবুজ মেরুন ফুটবলাররা।
আরও পড়ুন: Bangladesh Breaks Record: জাকার-হৃদয়ের জোড়া রেকর্ড, ১৯ বছরের পুরনো নজির ভাঙল বাংলাদেশ
২২ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট বাকিদের থেকে ধরা ছোঁওয়ার বাইরে। ২১ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে দু’নম্বর রয়েছে গোয়া। তবে বাকি সেলিব্রেশন ট্রফি জিতেই করতে চান বলে জানিয়ে দিলেন ম্যাচের নায়ক দিমি, ম্যাকলারেন, অধিনায়ক শুভাশিস বোসেরা। গতবার লিগ শিল্ড জিতলেও ট্রফি জেতা হয়নি। তাই এবার আইএসএল খেতাব জিতেই জোড়া সেলিব্রেশন করতে চান বলে জানিয়ে দিলেন সকলে (ISL league Shield)। ওড়িশার বিরুদ্ধে এদিন তাঁর ম্যাচ জেতানো গোলটাই কেরিয়ারের অন্যতম স্পেশাল গোল হয়ে থেকে যাবে বলে জানিয়ে গেলেন ম্যাচের সেরা দিমি। লিগের শেষ দুই ম্যাচেও জয়ের ধারা বজায় রাখাই এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য বলে জানালেন অধিনায়ক শুভাশিস। এত দর্শকের মাঝে জয় এবং যুবভারতীর গ্যালারি সেলিব্রেশনে মুগ্ধ ম্যাকলারেনও।

দুই ম্যাচ বাকি থাকতে ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন সবুজ-মেরুন (ISL league Shield)
টানা দু’বার লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন (ISL league Shield) হওয়ায় উচ্ছ্বসিত মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কাও। ম্যাচ শেষে কোচ মোলিনা, অধিনায়ক শুভাশিস, গোলদাতা দিমি এবং ম্যাকলারেনকে পাশে নিয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এই জয় ও সাফল্য দলের সমস্ত খেলোয়াড়, অধিনায়ক, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ এবং সমস্ত সবুজ-মেরুন সমর্থকদের উৎসর্গ করলেন। গোয়েঙ্কা বলেন, ‘আজ আমাদের সকলের কাছেই অত্যন্ত খুশির দিন। আমি এই সাফল্য কোচ, সমস্ত খেলোয়াড়, অধিনায়ক, সাপোর্ট স্টাফ এবং সকল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের উৎসর্গ করছি। ভারতবর্ষের প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা দুবার আমরা লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমরা সকলেই অনেক খুশি। আপনারা সকলে আমাদের পাশে থাকুন, সমর্থন করুন। আমরা আপনাদের শিল্ড, ট্রফি উপহার দিয়ে যাব।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়েও উচ্ছ্বসিত মোহনবাগান সুপার জায়েন্টের কর্ণধার।
সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেন, ‘আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত। ভারতের জয় সবসময়ই স্পেশাল। আজ ভারত জিতেছে। মোহনবাগানও জিতেছে। জোড়া খুশির দিন। আমার কাছে সব ট্রফি জয়ই স্পেশাল। সেটা এটিকেরই হোক বা মোহনবাগান সুপার জয়ান্টের হোক (ISL league Shield)।’ আইএসএল ট্রফি জয়ের পাশপাশি এবার যে তাঁর লক্ষ্য মোহনবাগানের আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্থাৎ এএফসি কাপ জয়, তাও জানিয়ে দিলেন তিনি। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেন, ‘জাতীয় স্তরে আমরা প্রায় সব সাফল্যই পেয়েছি। সেরকম আর কিছু পাওয়া বাকি নেই। এবার আমরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য পেতে চাই।’ তবে এদিন ওড়িশাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেও এখনই হাতে লিগ শিল্ড পাচ্ছে না মোহনবাগান। ১ মার্চ মুম্বইয়ের ঘরের মাঠে পরের ম্যাচ মোহনবাগানের। তারপর ৮ মার্চ যুবভারতীতে গোয়ার বিরুদ্ধে লিগের শেষ ম্যাচ খেলবে মোহনবাগান। সেদিনই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে লিগ শিল্ড।