ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে হেনস্থার ঘটনার মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সঙ্গে ‘বেনজির’ বাকবিতন্ডায় জড়ালেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। হাত জোড় করে মাফ চেয়ে বিচারপতির উদ্দেশ্যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি আর এই আদালতে কোনও মামলার শুনানিই করতে আসবেন না।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তির ঘটনায় ফের কলকাতা হাই কোর্টের তোপের মুখে পুলিশ। ব্রাত্য বসুর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ পুলিশ, পর্যবেক্ষণ বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের। শিক্ষামন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতি। এরপরই শুনানিতে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan Banerjee) সঙ্গে ‘বেনজির’ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
বিচারপতির সঙ্গে ‘বেনজির’ বাকবিতন্ডা আইনজীবীর (Kalyan Banerjee)
শুক্রবার যাদবপুরের মামলা লড়বেন বলে সময় চাইতে গিয়েছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। তারপরই এই নজিরবিহীন বাদানুবাদ চলে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সঙ্গে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এদিন শুনানিতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে হেনস্থার ঘটনায় পুলিশি ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তাতে আপত্তি জানান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘সেদিন একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল জনতা। কতজন পিএসও যখম হয়েছেন জানেন? খোঁজ নিয়ে দেখুন। তাহলে নিরাপত্তার প্রয়োজন কী! আপনি যাই বলুন পুলিশের ব্যর্থতা ছিল। আগের শুনানিতেও আমি অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে বলেছিলাম যে এটা পুলিশের ব্যর্থতা ছিল।’
তার উত্তরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) পাল্টা বলেন, ‘এটা পুলিশের ব্যর্থতা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুল ছিল। শিক্ষামন্ত্রী দলীয় একটা সভায় যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন। তখন পিএসও দের নিয়ম মেনে বাইরে রাখা হয়েছিল। হাইকোর্টে লিগ্যাল সেল কোনো সভা ডাকলে সেখানে আমি গেলে যদি এরকমটা হয় তখন পুলিশ কী করবে?’ তখন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘যদি পুলিশকে থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ বলপ্রয়োগ করে মন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যেতেন তাহলে আমি বুঝতাম। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। ওই সভাতে কোনও বিক্ষোভ হয়নি। মন্ত্রী সভা থেকে বেরোনোর পর হয়েছে। মন্ত্রীর একটা প্রোটোকল থাকে।’
বিচারপতির এই মন্তব্যের বিরোধীতা করে কল্যাণ বলেন, ‘এটা বাস্তবচিত যুক্তি নয়। একজন বিচারপতির ক্ষেত্রে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সবসময় প্রোটোকল মানা সম্ভব হয় না।’ তখন আবারও প্রোটোকলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিচারপতি ঘোষ বলেন, ‘উনি একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী। প্রোটোকল তো মানা উচিত।’ তারপরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক করে দিয়ে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘আপনি আদালতে যেভাবে কথা বলেন আর তা যেভাবে প্রচার হয় তাতে অন্তত এই আদালত নিজেকে অসম্মানিত হচ্ছে বলে মনে করছে। আমার মনে হয়েছে আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে। গঠনমূলক সমালোচনা এক জিনিস, আর ম্যালাইন বা অপদস্থ করা আর এক জিনিস।’
সেই শুনে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) বলেন, ‘যদি একতরফা বা একপেশে কিছু দেখানো হয় তাহলে কিছু করার নেই। অনেক ট্রোলিং হয়। আমি দুঃখিত। আমি আর এই কোর্টে মামলা লড়ব না। আমি দুঃখিত, আমি যদি কোর্টকে অসম্মান করে থাকি, তাহলে আমি আর এই আদালতে শুনানির জন্য আসব না।’ বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, তিনি চাইলে এই মামলার শুনানিতে তিনি সওয়াল করতে পারেন। তখন আবারও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতির উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে বলেন, ‘না, ক্ষমা করুন। কোনও মামলাতেই আমি আর এখানে শুনানি করতে আসব না।’