ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক: চলতি বছরের ১৪ মার্চ একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের (Fact Check) জুম্মার নামাজ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের হোলি। আর এই হোলি শেষ না হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এর সঙ্গে তথাকতিথ সম্পর্ক যুক্ত একটি ভিডিও। যেখানে কোনও একটি গলির ভিতরে দুই ব্যক্তিকে লাঠির সাহায্যে এক যুবককে বেধড়ক মারতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি গলিটি ঘিরে রয়েছেন একাধিক পুলিশ কর্মী। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিও-র যুবকটি মুসলিম এবং সে আহমেদাবাদে হোলি খেলায় পাথর ছোড়ায় তাকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করেছে গুজরাট পুলিশ।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক (Fact Check) ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “এই জিহাদী অসভ্য ভেবেছিল ভারতবর্ষ বর্তমানে জাতি ও দেশের শত্রু নিকৃষ্ট সিপিএম কিংবা কংগ্রেস এর সরকার চলছে। তাই বাংলাদেশ ভেবে আমেদাবাদে হোলি খেলায় পাথর মেরেছিল, তার পরিনাম হিসাবে দেশের বীর সন্তান তথা আমেদাবাদের পুলিশ প্রশাসন অসভ্য বর্বর জিহাদীকে একটু বুঝিয়ে দিয়েছেন এটা ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান নয়। জয় শ্রী রাম।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির (Fact Check) সঙ্গে হোলি উদযাপনে মুসলিম যুবকের পাথর ছোড়ার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং সেটিতে গত ১৩ মার্চ আহমেদাবাদের ভস্ট্রাল এলাকায় খাবারের দোকান দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গাড়ি ভাঙচুর করার সঙ্গে জড়িত অপরাধীকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করছে পুলিশ। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনও অপরাধীই মুসলিম নয়, বরং হিন্দু।
কীভাবে জানা গেল সত্য? (Fact Check)
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে (Fact Check) সেগুলিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করেলে চলতি বছরের ১৫ মার্চ একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেটি আহমেদাবাদের রাস্তায় গত ১৩ মার্চ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী গুন্ডাদের পুলিশের তরফে প্রকাশ্যে লাঠিপেটার দৃশ্য। চলতি বছরের ১৫ মার্চ Ahmedabad Mirror-এর অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলেও একই তথ্য-সহ এই একই ভিডিও পাওয়া যায়।
পাশাপশি গত ১৫ মার্চ নব ভারত টাইমসের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলেও (Fact Check) আমরা এই একই গলিতে এক পোশাকে এবং একই পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে ওই যুবকের অন্য একটি ভিডিও খুঁজে পাই। সেখানে ওই যুবককে পুলিশের তরফে ওঠবস করাতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গুজরাটের আহমেদাবাদে হোলিকা দহনের রাতে, একদল যুবক রাস্তায় সন্ত্রাসের পাশাপাশি ভাঙচুর চালায়। এদের মধ্যে ১৪ জন যুবককে গ্রেপ্তারের পর মেরে উচিত শিক্ষা দিয়েছে পুলিশ।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ (Fact Check) ভাইরাল ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট-সহ The Free Press Journal-এ এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৩ মার্চ রাতে আহমেদাবাদের ভস্ট্রাল এলাকায় খাবারের স্টল দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বড় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যয়ে প্রায় ২০ জন অপরাধী লাঠি ও তরবারি নিয়ে রাস্তার উপরে থাকা গাড়ি ও যাত্রীদের উপরে হামলা চালায়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত ১৫ মার্চ গুজরাট ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম The Gujarat Samachar-এ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার ১৪ জনের নাম পাওয়া যায়। তারা হল যথাক্রমে, আলদীপ মৌর্য, শ্যাম কমলি, বিকাশ ওরফে বিট্টু পারিহার, আশিল মাকওয়ানা, রোহিত ওরফে দুর্লভ সোনাওয়ানে, নিখিল চৌহান, ময়ুর মারাঠি, প্রদীপ ওরফে মনু তিওয়ারি, রাজবীর সিং বিহোলা, অলকেশ যাদব, আয়ুষ রাজপুত, দীনেশ রাজপুত এবং দীপুশ। কিন্তু নামগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখলে কোনও নামই মুসলিমদের বলে মনে হয় না। পাশাপাশি কোনও প্রতিবেদনেই এই ঘটনার সঙ্গে হোলি উদযাপনে মুসলিম যুবকের পাথর ছোড়ার কোনও সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: Fact Check: হোলির দিন কি উত্তর প্রদেশে জুম্মার নমাজে ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছেন যোগী আদিত্যনাথ?

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা ইন্ডিয়া টুডের গুজরাট ব্যুরো চিফ ব্রিজেশ দোশির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “ভাইরাল ভিডিওতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে সে-ও গত ১৩ মার্চ রাতে আমেদাবাদের ভস্ট্রালর রাস্তায় গাড়িতে হামলা করার সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং তাকে লাঠি দিয়ে মারে। এই ঘটনার সঙ্গে হোলি উদযাপনে মুসলিম যুবকের পাথর ছোড়ার কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকি এই ঘটনার সঙ্গে কোনও মুসলিম জড়িত নয়। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সকলেই হিন্দু।”
এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে আহমেদাবাদের ভস্ট্রালর অন্য ঘটনার ভিডিও মিথ্যে ধর্মীয় রং লাগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
এই খবরটি শক্তি কালেক্টিভের অংশ হিসাবে প্রথমে ইন্ডিয়া টুডে দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল, পরবর্তীতে ট্রাইব টিভি বাংলার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। এই খবরটির সারসংক্ষেপ বাদে বাকি খবর ট্রাইব টিভি বাংলার কর্মীরা সম্পাদনা করেনি।