ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, যে দেশ আমেরিকার পণ্যের উপর যত শুল্ক আরোপ (US Tariff War) করে, সেই দেশের পণ্যের উপরও সমপরিমাণ বা উপযুক্ত পাল্টা শুল্ক বসানো হবে। ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এই নতুন শুল্ক নীতিকে তিনি ‘আমেরিকার মুক্তি দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই নীতির ফলে ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কার উপর কত শুল্ক? (US Tariff War)
নতুন শুল্ক নীতির আওতায় বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর মার্কিন শুল্ক আরোপ করা হয়েছে (US Tariff War)। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৬% শুল্ক বসানো হয়েছে, যা ভারতীয় রপ্তানির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চীনের জন্য এই হার ৩৪%, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ২০%, ভিয়েতনামের জন্য ৪৬%, জাপানের জন্য ২৪%, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ২৫%, যুক্তরাজ্যের জন্য ১০%, থাইল্যান্ডের জন্য ৩৬% এবং সুইজারল্যান্ডের জন্য ৩১% নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কানাডা ও মেক্সিকোর জন্যও ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
আমেরিকায় শুল্ক নীতি প্রভাব (US Tariff War)
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এই শুল্ক নীতি (US Tariff War) আমেরিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং আমেরিকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়াবে। প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট (Karoline levitt) জানিয়েছেন, ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় বসেছিলেন। মার্কিন অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান কুলটন মনে করেন, বিশ্বব্যাপী আর্থিক বৃদ্ধির হার কমার পাশাপাশি আমেরিকার মূল্যবৃদ্ধির হারও কমেছে, যা এই শুল্ক নীতিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

আরও পড়ুন: India China : ড্রাগন-হাতির যুগল নৃত্য! রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর
ভারতের প্রতিক্রিয়া (US Tariff War)
ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধির (US Tariff War) প্রসঙ্গে ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) নাম উল্লেখ করে বলেছেন যে, ভারতীয় শুল্ক হার অত্যন্ত বেশি। বর্তমানে আমেরিকার পণ্যের উপর ভারতের শুল্ক গড় ৫২%। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন যে, ভারত হয়তো শুল্ক হার কমাতে পারে। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে নয়াদিল্লি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং বিকল্প কৌশল নিয়ে ভাবছে।

ভারতের পাল্টা ব্যবস্থা (US Tariff War)
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত সরকার পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে বা আমেরিকার (US Tariff War) সঙ্গে নতুন বাণিজ্য আলোচনায় বসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকার এই পদক্ষেপ ভারতীয় ইস্পাত, অটোমোবাইল, টেক্সটাইল ও কৃষিজাত পণ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যেসব পণ্য আমেরিকার বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে বিক্রি হতো, সেগুলোর বিক্রি কমে যেতে পারে।
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে প্রভাব (US Tariff War)
বিশ্ব বাণিজ্যে এই নতুন শুল্ক নীতি (US Tariff War) ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক দেশই আমেরিকার শুল্ক নীতির জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদাররা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় শুল্ক আরোপ করতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশের রপ্তানিকারকদের মতো আমেরিকার আমদানিকারকরাও সমস্যায় পড়তে পারেন। তাছাড়া, আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা সাধারণ জনগণের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।
বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন মোড় (US Tariff War)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতি বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি শুধু আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বাজারকে নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতিকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করবে, এই বাণিজ্য সংঘাত কতদূর গড়াবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ব বাণিজ্যের শৃঙ্খলা রক্ষায় দেশগুলো কীভাবে তাদের কৌশল সাজায় এবং এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কী ধরনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেয়।