ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) ঘোষিত শুল্কনীতি আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে (Oil Price Hike)। বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ধস, বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা এবং মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে সরাসরি। ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম নেমে এসেছে প্রায় ৬০ ডলারে, যা গত চার বছরে সর্বনিম্ন।
জ্বালানির দাম কমার কারন (Oil Price Hike)
বিশ্বব্যাপী এই পতনের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ (Oil Price Hike)। প্রথমত, ট্রাম্প প্রশাসনের চীন-বিরোধী বাণিজ্যনীতি এবং শুল্ক আরোপের ফলে চাহিদার উপর প্রভাব পড়েছে। দ্বিতীয়ত, ওপেক দেশগুলির তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা জ্বালানির জোগান আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই দুইয়ের সম্মিলিত ফলাফল হিসেবে জ্বালানির দাম পড়ে গেছে। ২০২১ সালের পর এতটা সস্তায় অপরিশোধিত তেল এর আগে দেখা যায়নি।
সুবিধা পাচ্ছে না জনগণ (Oil Price Hike)
এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় জনগণ আশা করেছিল, অন্তত তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য পতনের সুফল তারা ভোগ করতে পারবে (Oil Price Hike)। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের সুবিধা নাগরিকদের দেওয়ার পরিবর্তে উল্টো পন্থা নিয়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম ৫০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং পেট্রল ও ডিজেলের উপর উৎপাদন শুল্ক বাড়ানো হয়েছে লিটার প্রতি ২ টাকা করে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে মূল্যবৃদ্ধির চাপ আরও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: Google Tax : ট্রাম্পকে খুশি করতে “গুগল কর” প্রত্যাহার ভারতের! কারা কী সুবিধা পাচ্ছে?
সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার (Oil Price Hike)
তেলের বাজার থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার পর ভারতে জ্বালানির দাম (Oil Price Hike) নির্ধারিত হয় বেশ কিছু উপাদানের ভিত্তিতে— যেমন অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক দর, রুপির বিনিময় হার, পরিশোধন খরচ, পরিবহণ ব্যয়, কেন্দ্র ও রাজ্যের শুল্ক এবং ডিলার কমিশন। এসব হিসেব মিলিয়ে সাধারণ গ্রাহকের কাছে পেট্রল ও ডিজেল বিক্রি হয়। এক সময় যেই অপরিশোধিত তেল লিটারপ্রতি ৩০ টাকা পড়ত, সেটিই এখন ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকারের যুক্তি (Oil Price Hike)
সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তেল সংস্থাগুলোর মজুত তেল আগেই কেনা হয়েছে ৭৫ ডলারে (Oil Price Hike)। এখন সস্তায় বিক্রি করলে তারা লোকসানের মুখে পড়বে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিযোগ, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ে, তখন দ্রুত সেই প্রভাব পড়ে দেশের বাজারে। কিন্তু দাম কমলে সেই সুবিধা সাধারণত দেওয়া হয় না, বা শুধু নির্বাচনের আগে সামান্য কিছু ছাড় দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত (Oil Price Hike)
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের (Narendra Modi) এই রাজস্ব-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ভোক্তাদের উপর এক প্রকার আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে (Oil Price Hike)। কেন্দ্রীয় সরকার গত দশকে যখনই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে, তখনই সেই সুযোগে উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় করেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৯ বার উৎপাদন শুল্ক বাড়ানো হয়, যার ফলে ১২০ শতাংশেরও বেশি শুল্ক বেড়ে যায়। অথচ সেই সময়েও জনগণ তার পুরো সুফল পায়নি।বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম যেহেতু নিম্নগামী, অনেকেই আশা করছেন— এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভারতেও জ্বালানির দাম কমানো সম্ভব হবে। তেলমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর মতে, দাম এখনই কমানো হচ্ছে না, কারণ সংস্থাগুলোর আর্থিক ক্ষতি এড়ানো জরুরি। তবে আগামীতে দাম কমানো হতে পারে, যদি বর্তমান ট্রেন্ড বজায় থাকে।
জটিল সমীকরণ (Oil Price Hike)
সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক শুল্কনীতি, বিশ্ববাজারের চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব নীতির এক জটিল সমীকরণে ভারতের জ্বালানি মূল্য নির্ধারিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব হলো— সাধারণ মানুষের আর্থিক সুরক্ষার দিকে নজর রাখা, বিশেষ করে যখন বিশ্ববাজার স্বস্তিদায়ক ইঙ্গিত দিচ্ছে।