ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দীর্ঘ ২৫ ঘণ্টার বিতর্ক, দুই কক্ষের ভোটাভুটি এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর সংশোধিত ওয়াকফ বিল আইনে পরিণত হয়েছে (State Wise Waqf Property)। সরকারের দাবি, এই নতুন আইন ওয়াকফ বোর্ডের প্রশাসনিক কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা বাড়াবে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল আসলে ওয়াকফ সম্পত্তি দখলেরই এক রাজনৈতিক হাতিয়ার। দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও দাতব্য কাজে নিবেদিত বিপুল সম্পত্তিকে ঘিরে এখন তীব্র বিতর্ক।
ওয়াকফ সম্পত্তি কী? (State Wise Waqf Property)
ওয়াকফ সম্পত্তি মূলত এমন সম্পত্তি, যা ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে দান করা হয় (State Wise Waqf Property)। এর মধ্যে রয়েছে মসজিদ, দরগা, কবরস্থান, মাদ্রাসা প্রভৃতি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রেল এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের পর দেশে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক এখন ওয়াকফ বোর্ড। এই সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩৯ লক্ষ একর, যার মধ্যে নথিভুক্ত সম্পত্তির সংখ্যা ৮.৭২ লক্ষ। তবে ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অফ ইন্ডিয়ার (WAMSI) পোর্টালে মাত্র ৯,২৭৯টি সম্পত্তি আপলোড হয়েছে, যার মধ্যে ১,০৮৩টির দলিল রয়েছে।
কোন রাজ্যে কত সম্পত্তি? (State Wise Waqf Property)
রাজ্যভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে—সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে ২.১৭ লক্ষ এবং শিয়া বোর্ডের অধীনে ১৫,৩৮৬টি সম্পত্তি (State Wise Waqf Property)। তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে পশ্চিমবঙ্গ (৮০,৪৮০), পাঞ্জাব (৭৫,৯৬৫) এবং তামিলনাড়ু (৬৬,০৯২)। সবচেয়ে কম সম্পত্তি রয়েছে দাদরা ও নগর হাভেলিতে, মাত্র ৩০টি।

আরও পড়ুন: Panama Canal :পানামা খালে চিনা প্রভাবের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিল আমেরিকা!
সংশোধিত ওয়াকফ আইন (State Wise Waqf Property)
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের (State Wise Waqf Property) মূল পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে—জমির ওয়াকফ চরিত্র নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতা জেলা শাসকের হাতে ন্যস্ত করা, বোর্ডে দুই অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির বাধ্যবাধকতা, এবং ওয়াকফ সম্পত্তির বাধ্যতামূলক নথিভুক্তি। সরকারের বক্তব্য, এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে ওয়াকফ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে এবং জমি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা দূর হবে।

আইনের বিরোধিতা (State Wise Waqf Property)
তবে এই আইনের বিরোধিতা করেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, জামাত-এ-ইসলামি হিন্দসহ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন (State Wise Waqf Property)। তাদের মতে, সরকার পরিকল্পিতভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের পথ তৈরি করছে। এমনকি দিল্লির পার্লামেন্ট ভবন, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স, তামিলনাড়ুর প্রাচীন চোল মন্দির কিংবা কেরলের খ্রিস্টান অধ্যুষিত গ্রাম—এসবকেও অতীতে ওয়াকফ সম্পত্তি দাবি করা হয়েছে। বিরোধীদের আশঙ্কা, নতুন আইনের মাধ্যমে এই ধরনের বিতর্কিত দাবি ও সরকারি হস্তক্ষেপ বাড়বে।

ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমান (State Wise Waqf Property)
এই প্রসঙ্গে সংসদে (State Wise Waqf Property) গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। তিনি জানান, ১৯১৩ সালে ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ ছিল মাত্র দুটি গ্রাম। ২০১৩ সাল পর্যন্ত জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ লক্ষ একরে। এরপর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের ওয়াকফ আইনে সংশোধনের ফলে আরও ২১ লক্ষ একর জমি যুক্ত হয়, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৯ লক্ষ একর ছাড়িয়ে যাবে। এই বৃদ্ধি শাহের মতে, আইনের অপব্যবহার এবং স্বেচ্ছাচারিতার ফসল।
বিল উত্থাপন (State Wise Waqf Property)
বিলটি প্রথম লোকসভায় উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেন রিজিজু (Kiren Rijiju)। পরে যৌথ সংসদীয় কমিটির (JPC) কাছে পাঠানো হয়। জেপিসির সুপারিশ অনুযায়ী ১৪টি সংশোধনী যুক্ত করে বিলটি লোকসভায় পাশ হয় ২ এপ্রিল—পক্ষে ভোট পড়ে ২৮৮, বিপক্ষে ২৩২। পরদিন রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হয় ৩৩ ভোটের ব্যবধানে (১২৮ বনাম ৯৫)। রাষ্ট্রপতির সইয়ের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হয়।
সরকারের যুক্তি
সরকারের যুক্তি মুসলিম সমাজের অনেক গরিব ও মহিলারা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াকফ ব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু বিরোধীরা একে দেখছেন সরকারের ধর্মীয় হস্তক্ষেপ এবং জমি রাজনীতির অংশ হিসেবে।সংশোধিত ওয়াকফ বিল কি সত্যিই স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে, না কি এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আস্থার জায়গা দখলের রাজনৈতিক কৌশল—তা সময়ই বলবে। তবে এই আইন যে আগামিদিনে রাজনীতি, ধর্ম এবং সম্পত্তি নিয়ে আরও বিতর্কের জন্ম দেবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।