ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দীর্ঘ ১৬ বছরের অপেক্ষার পর ২০০৮ সালের ভয়াবহ মুম্বই হামলার অন্যতম মূলচক্রী তাহাউর রানাকে (26/11 Mumbai Attack) অবশেষে ভারতে ফিরিয়ে আনছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA)। বুধবার এনআইএ-র একটি দল পৌঁছায় আমেরিকায়। বৃহস্পতিবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে রানাকে তাদের হাতে তুলে দেয়। সূত্রের খবর, একটি বিশেষ বিমানে করে দিল্লির পালম বিমানবন্দরে আনা হচ্ছে ২৬/১১-এর এই অভিযুক্তকে।
এনআইএ-র হেফাজতে রানা (26/11 Mumbai Attack)
রানাকে নিয়ে বিমান আনার সঙ্গে সঙ্গে তাকে এনআইএ-র হেফাজতে নেওয়া হয় (26/11 Mumbai Attack) । এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে আদালতের নির্দেশে তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে তিহাড় জেলে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও এনআইএ-র একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও এতে যুক্ত ছিলেন।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা (26/11 Mumbai Attack)
তাহাউর রানার প্রত্যর্পণকে কেন্দ্র করে গোটা দিল্লিতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে (26/11 Mumbai Attack) । পালম বিমানবন্দর থেকে তাকে এনআইএ-র সদর দফতরে নিয়ে যাওয়ার পথে কনভয় ঘিরে ছিল গুলিনিরোধক গাড়ি, সাঁজোয়া যান এবং বিশেষ ‘মার্কসম্যান’ সুরক্ষা ইউনিট। দিল্লি পুলিশের (Delhi Police) বিশেষ সেল ও সোয়াট (স্পেশাল ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স) কমান্ডোদেরও মোতায়েন করা হয়েছে যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায়।

বিমানের যাত্রাপথেও নজরদারি (26/11 Mumbai Attack)
বিমানবন্দর এলাকা থেকে এনআইএ সদর দফতর পর্যন্ত গোটা রুটেই ছিল কড়া নজরদারি। নিরাপত্তার স্বার্থে জওহরলাল নেহরু মেট্রো স্টেশনের ২ নম্বর গেট পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এনআইএ-র সদর দফতরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষ বিমানের যাত্রাপথেও নজরদারি করেছে ভারত ও আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এবং এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল। এমন এক উচ্চ নিরাপত্তা ও নজরদারির পরিবেশে ভারতে ফিরে এল সেই ব্যক্তি, যার নাম ২৬/১১-র বিভীষিকার সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে জড়িয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: Thai Canal : চিনের নয়া বানিজ্য কূটনীতি! “তাই খাল”-কে বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে ড্রাগন?
২৬/১১ হামলায় রানার ভূমিকা (26/11 Mumbai Attack)
৬৪ বছর বয়সী তাহাউর রানা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। তাঁর পরিচয় শুধুমাত্র একজন প্রবাসী ব্যবসায়ী হিসেবেই নয়—তিনি সেই ব্যক্তি যিনি আমেরিকান নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে ভারতে প্রবেশ ও হামলার রোডম্যাপ তৈরিতে সহায়তা করেন। ডেভিড হেডলি, যিনি পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও লস্কর-এ-ত্যায়বার হয়ে কাজ করতেন, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই হামলার আগে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে হামলার স্থান ও পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। এই গোটা প্রস্তুতি পর্বে রানার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
আরও পড়ুন: US Tariff War : ট্রাম্পের শুল্কনীতি স্থগিতের সিদ্ধান্তে স্বস্তির ছায়া নাকি মন্দার পূর্বাভাস?
হামলার নীলনকশা তৈরি রানার (26/11 Mumbai Attack)
ডেভিড হেডলির মাধ্যমে এনআইএ জানতে পারে যে রানা তাঁর ভিসা অফিসের পরিচয়ে ভারতীয় কনস্যুলেটের ভিসা জোগাড় করে হেডলিকে ভারতে পাঠান। সেই ছত্রছায়াতেই হেডলি ভারতে ঘুরে হামলার নীলনকশা তৈরি করেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে হেডলি এবং পরে রানাও আমেরিকায় গ্রেফতার হন। হেডলি বর্তমানে আমেরিকায় কারাবন্দি।
প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া (26/11 Mumbai Attack)
ভারত বহু বছর ধরেই রানার প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়ে আসছিল। একাধিক কূটনৈতিক উদ্যোগ, তথ্যপ্রমাণ ও আইনগত প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে মার্কিন আদালত রানাকে ভারতে পাঠানোর অনুমতি দেয়। এই ঘটনা ভারতের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।এই প্রত্যর্পণ শুধুমাত্র ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। ২৬/১১ হামলায় নিহত ১৬৬ জন নিরীহ মানুষের পরিবারের জন্য এটি এক প্রকার ন্যায়বিচারের দিকে অগ্রগতি।
উপযুক্ত শাস্তি (26/11 Mumbai Attack)
তাহাউর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণ নিঃসন্দেহে ২৬/১১ মামলার তদন্তে একটি বড় পদক্ষেপ। ভারতীয় গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থার দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ এই চরমপন্থীকে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়েছে। এখন অপেক্ষা, যাতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যায় এবং ২৬/১১-এর মতো নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে এটি একটি শিক্ষা হয়ে ওঠে।