ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা ও চিনের মধ্যকার শুল্ক যুদ্ধ (China on US Tariff)। দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে চলমান এই সংঘাত কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই প্রভাবিত করছে না, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং বাণিজ্য ব্যবস্থাকেও গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।
চিনের বিবৃতি (China on US Tariff)
সম্প্রতি চিনের বাণিজ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র হে ইয়ংকিয়ান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, চিন আলোচনায় বসতে আগ্রহী, তবে সেই আলোচনা হতে হবে “পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে।” তাঁর কথায়, “চিন কখনোই চাপ, হুমকি কিংবা ব্ল্যাকমেলের কাছে মাথা নত করবে না।” এই বক্তব্যে স্পষ্ট, চিন শুল্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সিদ্ধান্তের কড়া বিরোধিতা করছে এবং সমঝোতার জন্য একটি সম্মানজনক পরিবেশ দাবি করছে।
চিনা পণ্যে শুল্ক (China on US Tariff)
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসন চিনা পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে (China on US Tariff)। যদিও অন্য কিছু দেশকে ৯০ দিনের শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে, তবুও চিনের ক্ষেত্রে সেই ছাড় প্রয়োগ করা হয়নি। এর প্রতিক্রিয়ায় চিনও আমেরিকান পণ্যের উপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে মোট শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ৮৪ শতাংশে।

অর্থনৈতিক উত্তেজনা (China on US Tariff)
এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক বৃদ্ধি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে (China on US Tariff)। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, “প্রতিশোধের পথে হাঁটবেন না, তাহলে আপনাকে পুরস্কৃত করা হবে।” এতে ভবিষ্যতের জন্য আলোচনার দরজা খোলা রাখা হলেও, হুঁশিয়ারির সুরও সুস্পষ্ট।

আরও পড়ুন: Thai Canal : চিনের নয়া বানিজ্য কূটনীতি! “তাই খাল”-কে বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে ড্রাগন?
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা (China on US Tariff)
বিশ্ব অর্থনীতির দুই বৃহত্তম শক্তির এই সংঘাত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশাল অস্থিরতা তৈরি করেছে (China on US Tariff)। বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে, উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, এবং পণ্যের সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটছে। কৃষিপণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদক দেশগুলো এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্ক যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে মারাত্মক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিশ্বজুড়ে বাজারে মন্দা দেখা দিতে পারে, কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: US Tariff War : ট্রাম্পের শুল্কনীতি স্থগিতের সিদ্ধান্তে স্বস্তির ছায়া নাকি মন্দার পূর্বাভাস?
শুল্ক যুদ্ধ (China on US Tariff)
এই প্রেক্ষাপটে, আলোচনার মাধ্যমে একটি সম্মতিপূর্ণ সমাধান খোঁজার প্রয়োজনীয়তা আজ অপরিহার্য। যদিও চিন আলোচনা চায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চাপ ও শর্ত আরোপের কৌশল আলোচনার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে। শুল্ক যুদ্ধ শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের এক যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা ও চিন যদি আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান না করে, তবে তা গোটা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড়সড় হুমকিতে পরিণত হতে পারে। এখন সময় হয়েছে, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্মানের ভিত্তিতে দুই পক্ষের একটি স্থায়ী সমঝোতায় পৌঁছনোর।