ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রেস্তরাঁয় জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে (Motion Sickness) গাড়িতে উঠেছেন। এসির ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগছে ঠিকই, কিন্তু কিছু ক্ষণ পরই শরীরে অস্বস্তি, গা পাকানো, এমনকি বমিও! এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই অবস্থার নাম ‘মোশন সিকনেস’ বা গতিজনিত অসুস্থতা। পাহাড়ি রাস্তা, উত্তাল সমুদ্র বা কখনও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতেও এই সমস্যা দেখা দেয়।
কমে যেতে পারে মোশন সিকনেসের লক্ষণ! (Motion Sickness)
ওষুধ খাওয়ার পরও বহু সময়ে উপশম (Motion Sickness) মেলে না। তাই সমাধানের নতুন রাস্তা খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই চেষ্টায় বড়সড় সাফল্য এসেছে জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায়। গবেষকেরা দাবি করছেন, মাত্র ১ মিনিটের একটি নির্দিষ্ট শব্দতরঙ্গ কানে শোনালেই কমে যেতে পারে মোশন সিকনেসের লক্ষণ।
কেন হয় এই সমস্যা? (Motion Sickness)
চোখ, ত্বক ও কানের ভেতরে থাকা ‘ভেস্টিবিউলার সিস্টেম’ একসঙ্গে শরীরের গতি ও ভারসাম্য বুঝে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। কোনও কারণে এই সমন্বয় বিঘ্নিত হলেই মাথা ঘোরা, বমি ভাব, এমনকি হঠাৎ অস্থিরতাও দেখা দেয়। এটাই মোশন সিকনেস।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই ভেস্টিবিউলার সিস্টেমের কাজ ব্যাহত হলে শরীর ‘ভুল সংকেত’ পায়, যার ফলেই শুরু হয় অস্বস্তি। মূলত, চোখ যা দেখছে আর শরীর যা অনুভব করছে, তার মধ্যে অসামঞ্জস্য তৈরি হলেই দেখা দেয় এই সমস্যা।
‘সাউন্ড থেরাপি’ কীভাবে কাজ করে? (Motion Sickness)
নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তাকুমি কাগোয়া ও মাশাই কোটে একটি নির্দিষ্ট শব্দতরঙ্গ নিয়ে কাজ করেন, যার নাম দিয়েছেন ‘সাউন্ড স্পাইস’। ১০০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির এই শব্দ মাত্র ১ মিনিট ধরে কানে শোনালেই অন্তঃকর্ণের ‘ওটোলিথিক’ অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটি শরীর ও মস্তিষ্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে এই শব্দ সরাসরি কানে প্রবেশ করানো হয়। এতে সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, ফলে কমে যায় গা গুলিয়ে ওঠা বা বমিভাবের মতো উপসর্গ।
গবেষণার ফল কী বলছে?
এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবকদের দোলনায় বসিয়ে বা গাড়িতে বসিয়ে শব্দ শোনানো হয়। তাদের শরীরের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য প্রশ্ন করা হয় ও ইসিজি পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, বমিভাব, মাথাব্যথা, এমনকি হৃৎস্পন্দনজনিত অস্বস্তিও অনেকটাই কমে গেছে।গবেষকেরা বলছেন, এই পদ্ধতি একেবারেই নিরাপদ এবং কার্যকর। ভবিষ্যতে এই শব্দ-ভিত্তিক থেরাপি মোশন সিকনেসের নির্ভরযোগ্য বিকল্প হতে পারে বলেই আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: Cotton Buds: কটন বাড দিয়ে কান খোঁচানোর অভ্যাস? অজান্তেই বিপদ ডাকছেন না তো?
যাঁরা গাড়িতে উঠলেই অস্বস্তিতে ভোগেন, তাঁদের জন্য এই প্রযুক্তি হয়ে উঠতে পারে এক আশার আলো। গবেষণা এখনও চললেও, ‘শব্দ দিয়ে চিকিৎসা’-র এই সম্ভাবনা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নতুন দিক উন্মোচন করছে।