ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সমুদ্রের ধার ঘেঁষে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার—দিঘার বুকে জন্ম নিচ্ছে এক নতুন তীর্থক্ষেত্র। আগামী ৩০ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে উদ্বোধন হতে চলেছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের (Jagannath Mandir Digha)। এই শুভ দিনে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। শুধু ধর্ম নয়, আবেগ, ইতিহাস আর ভক্তির মেলবন্ধনে এই দিন হয়ে উঠতে চলেছে ঐতিহাসিক।
মন্দির উদ্বোধনের আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে ধারাবাহিক ধর্মীয় আচার। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রাজেশ দয়িতাপতির তত্ত্বাবধানে শান্তিযজ্ঞ চলছে। গর্ভগৃহে ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বিগ্রহের মাঙ্গলিক স্নান ও পুজো। পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে এসেছেন রাজেশ দয়িতাপতি, তাঁর নেতৃত্বে চলছে শান্তিযজ্ঞ। ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস ও ৬০ জন ভক্ত নিবেদিতভাবে অংশ নিয়েছেন প্রতিটি রীতিতে (Jagannath Mandir Digha)। গর্ভগৃহে মন্ত্রোচ্চারণ, কুণ্ডে আগুন, প্রদীপের আলো, আর ঘন্টার ধ্বনিতে ইতিমধ্যেই যেন জেগে উঠেছেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শন।
আরও পড়ুন: Gold Rate Today: অক্ষয় তৃতীয়ার আগে সোনার দামে বড় পতন, গ্রাহকদের জন্য স্বস্তির হাওয়া!
ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে জগন্নাথদেবের বসার পিঁড়ির পুজো। দুগ্ধস্নান সম্পন্ন হয়েছে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শনের। লক্ষ্মী, বিমলা, সত্যভামা-সহ সমস্ত দেবদেবীর মূর্তিকেও দুগ্ধস্নান করানো হয়েছে। দিঘা জুড়ে মাইকে বাজছে মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর। ২৯ তারিখ হবে মহাযজ্ঞ। ওই দিন পর্যন্ত রোজই হোমযজ্ঞ চলবে বলে মন্দির সূত্রে খবর। মন্দিরজুড়ে বইছে এক অপার্থিব অনুভূতি।
পর্যটকদের ভিড় (Jagannath Mandir Digha)
২৮ এপ্রিল সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় পৌঁছান। তাঁর উপস্থিতিতে ২৯ তারিখ হবে বিশ্বশান্তির জন্য মহাযজ্ঞ। হোমযজ্ঞে তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এই শুভ মুহূর্তের সাক্ষী হতে চায় গোটা দিঘা। রবিবার ছুটির দিনে মন্দিরের সামনে আগেই ভিড় জমাতে শুরু করেছেন উৎসাহী পর্যটকরা। তবে এখনই মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ, কারণ চলছে শেষ প্রস্তুতি (Jagannath Mandir Digha)। তবুও থেমে নেই আবেগ। ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা—সর্বত্র বাজছে সানাই, চারপাশ সেজে উঠেছে আলোর রোশনাইয়ে।
আরও পড়ুন: Digha Jagannath Temple: দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে গান লিখলেন মমতা, সুরও তাঁরই
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দিঘার ইতিহাসে এমন ধর্মীয় আয়োজন আগে কখনও দেখা যায়নি। ছোট দোকানদার থেকে হোটেল মালিক, সকলেই অপেক্ষায় রয়েছেন—এই মন্দির কেবল একটি স্থাপনা নয়, এটি হয়ে উঠতে চলেছে দিঘার আত্মার অংশ।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা (Jagannath Mandir Digha)
নিরাপত্তার দিক থেকেও কোনও খামতি রাখেনি প্রশাসন। বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে গোটা দিঘা জুড়ে। নজরদারি শুরু হয়েছে দিঘা গেট এবং ওড়িশা সীমানাতেও। ৮০০-র বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, চলছে কড়া নজরদারি। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত জাতীয় সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। দিঘা গেট থেকে ওড়িশা সীমান্ত, সব জায়গায় বসেছে চেকপোস্ট (Jagannath Mandir Digha)। ২৯ এপ্রিলের মহাযজ্ঞ এবং ৩০ এপ্রিলের উদ্বোধন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয়, তার জন্য তৎপর প্রশাসন।
উৎসবমুখর এই অনুষ্ঠান ঘিরে ধর্মীয় আবেগ, পর্যটন উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে দিঘা এখন রাজ্যের সর্বাধিক চর্চিত গন্তব্য। এই মন্দির শুধু ইট-পাথরের নির্মাণ নয়, এটি এক নতুন বিশ্বাস, এক নতুন শুরু—দিঘার হৃদয়ে জগন্নাথ এখন চিরকালীন।
