ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: জম্মু ও কাশ্মীরের (Pakistani Hindu Refugees) পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ হামলার পরে পাকিস্তানী নাগরিকদের ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।আর কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এ দেশে বসবাসকারী পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীরা। কারণ একটাই, তাঁরা কেউ পাকিস্তানে ফিরে যেতে যান না। তাঁদের আর্জি, ‘এখানেই মরে যাব, কিন্তু দেশে ফিরব না’। রবিবার ছিল ভারতে বসবাসকারী পাকিস্তানের নাগরিকদের বড় অংশের দেশে ফেরত যাওয়ার শেষ দিন।
পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীরা আতঙ্কে ভুগছিলেন (Pakistani Hindu Refugees)
গত ক’দিন ধরেই ভারতে বসবাসকারী পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীরা আতঙ্কে ভুগছিলেন (Pakistani Hindu Refugees)। ভারত বলেছে, দীর্ঘমেয়াদি ভিসা যাঁদের আছে, তাঁদের যেতে হবে না। স্বল্পমেয়াদি ভিসাধারীদের পাকিস্তানে ফিরতে হবে। দিল্লির মজনু কা টিলা এলাকায় বহু হিন্দু শরণার্থীর বাস। সেখানকার হিন্দু শরণার্থী সম্প্রদায়ের সভাপতি সোনা দাস বলছেন, বেশ কিছু পরিবার বছরের পর বছর দিল্লিতে বসবাস করছে। আবার অনেকেই আছেন, যাঁরা মাত্র এক বা দুই মাস আগে ভারতে এসেছেন। আর একটি শরণার্থী শিবিরের প্রধান দয়াল দাসও বলেন, ‘‘গত দুই মাসেই পাকিস্তান থেকে ১০ থেকে ১২টি নতুন পরিবার এখানে এসেছে।’’
‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়েই এদেশে’ (Pakistani Hindu Refugees)
পাকিস্তান থেকে স্বল্পমেয়াদী ভিসায় ভারতে আসা এক হাজারেরও বেশি হিন্দু শরণার্থী রাজস্থানের জয়সলমীরের একটি শরণার্থী কলোনিতে থাকেন (Pakistani Hindu Refugees)।কেন্দ্রের এই নির্দেশ ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তাঁদের মধ্যে।তাঁরা সকলেই ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। এক শরণার্থীর কথায়, ‘ওখানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়েই এদেশে পালিয়ে এসেছিলাম। আবারও সেখানে ফিরে যেতে হলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকতে পারে।’
‘পাকিস্তানের মত নরকে ফিরে যেতে চাই না’
খেটো রাম পাকিস্তানে লাগাতার হেনস্থার মুখে পড়ছিলেন। অবশেষে সব সম্পত্তি বিক্রি করে পহেলগাম হামলার কয়েকঘণ্টা আগেই স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ভারতে আসেন। ‘আবার যদি ফিরতে হয়’, আতঙ্ক তাড়া করছে খেটো রামকে! এক সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “ভারতে থেকেই মরে যাব কিন্তু পাকিস্তানের মত ‘নরকে’ ফিরে যেতে চাই না।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে তাঁর পরিস্থিতি বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছেন। আরও এক শরণার্থী বালম ও তাঁর স্ত্রী দেশে ফিরে যেতে চান না। তাঁদের আর্জি, ‘আমাদের যা কিছু ছিল ছেড়ে চলে এসেছি। দয়া করে আমাদের ফিরিয়ে দেবেন না।’
আরও পড়ুন: Terror Alert: কাশ্মীরে বাড়ছে জঙ্গি-হুমকি, সাময়িকভাবে বন্ধ ৪৮টি পর্যটন কেন্দ্র
‘পাকিস্তানে ফেরার চেয়ে মরণ ভাল’
মজনু কা টিলায় একটি ছোট চায়ের দোকান চালান কানহাইয়া। তিনি বলেন, ‘‘যদি আমাদের দিল্লি ছেড়ে যেতে বলা হয়, তা হলে কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না এবং বেঁচে থাকারও কোনও উপায় থাকবে না।’’ আর এক বাসিন্দা কৃষ্ণ লাল বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী, সন্তান এবং ভাই ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। এখনও তা মঞ্জুর হয়নি। আমি জানি না তাদের ভিসা এখন বাতিল করা হবে কি না।’’ একই ছবি রাজস্থানের জয়সলমেরেও। সেখানকার একলব্য ভিল বস্তিতে শরণার্থী বালাম বলছিলেন, পাকিস্তানে ফেরার চেয়ে মরণ ভাল।
১০০০ ভারতীয় পাকিস্তান থেকে ফিরেছেন
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, অনেকেই আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছেন। সরকারি হিসাবে, এখনও পর্যন্ত আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ৫৩৭ জন পাকিস্তানি নাগরিক দেশে ফিরেছেন, যাঁদের মধ্যে ৯ জন কূটনৈতিক কর্মী। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সরাসরি বিমান যোগাযোগ না থাকায় কত জন বিমান যোগে ফিরছেন, তা জানা যায়নি। অন্য দিকে এই ক’দিনে ১০০০ ভারতীয় পাকিস্তান থেকে ফিরেছেন বলে পাক সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে।