ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : আপার প্রাইমারির মামলায় এসএসসি চেয়ারম্যান সহ আধিকারিকদের তীব্র ভর্ৎসনা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। আদালতে নির্দেশ কার্যকর না করায় এসএসসি চেয়ারম্যানকে এজলাস থেকেই গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি ক্ষুব্ধ বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের। আগামী ১৬ মে’র মধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ে ডাকার নির্দেশ আদালতের।
আপার প্রাইমারির মামলায় এসএসসিকে ভর্ৎসনা (Calcutta High Court)
মঙ্গলবার আপার প্রাইমারির মামলায় এস এস সি চেয়ারম্যান সহ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। এই মামলায় আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল তা কার্যকর না করায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। শুনানির মাঝেই বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে হবে। না হলে এজ্লাস থেকেই গ্রেফতারের নির্দেশ দেব।’ ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতিরা ডেপুটি শেরিফকেও ডেকে পাঠান। আগামী ১৬ মে মামলার পরবর্তী শুনানি। তার মধ্যে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে কিনা তা বিবেচনা করে দেখবে আদালত।
আদালতের নির্দেশ কার্যকর করেনি এসএসসি (Calcutta High Court)
উচ্চ প্রাথমিকের এই মামলায় আদালত (Calcutta High Court) ১৪,০৫২ জনকে কাউন্সিলিংয়ে ডেকে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু আদালতের এই নির্দেশ এসএসসি কার্যকর করেনি বলে অভিযোগ করে কোন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এক চাকরিপ্রার্থী। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও ভূগোলে নিয়োগ না পেয়ে আদালত অবমাননার মামলা হয়। সেই মামলাতেই মঙ্গলবার হাইকোর্টে শুনানিতে উপস্থিত হয়েছিলেন এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
এসএসসির যুক্তি
শুনানিতে এসএসসির আইনজীবী বলেন, ‘মেয়েদের স্কুলে আবেদনকারীকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ভূগোলে ওবিসি পুরুষ আসন না থাকায় চাকরি দেওয়া যায়নি। ১৪০৫২ জনকে কাউন্সিলিং ডেকে নিয়োগ দিতে বলা হয়। ১২,৪৮২ জনকে ডাকা হয়। ৩০১৮ জন কাউন্সিলিংয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। ৯,৪৬৪ জনের কাউন্সেলিং হয়েছে। ১,৪৮২ বাকি রয়েছে। আবেদনকারী পুরুষ, ভূগোলের, ওবিসি এবং বাংলা মিডিয়ামের। ওই বিভাগে কত শূন্যপদ রয়েছে সেই তালিকা দিচ্ছি। আমরা কীভাবে শূন্যপদ তৈরি করব! এসএসসি ৯,০০০-এর বেশি পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। কিন্তু বাকি পদে অনুপাত (রেশিও) ধরে রাখা যাচ্ছে না।’
তা উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে গিয়ে এসএসসি আদালতে জানায়, মেদিনীপুরের কোনও স্কুলে হয়তো দু’জন শিক্ষকের প্রয়োজন। অথচ সেখানে নিয়োগ করার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও স্কুলে বাংলা বিভাগে তিন জন শিক্ষকের প্রয়োজন। অথচ যোগ্য রয়েছেন ১০ জন। অথবা কোনও স্কুলে ওবিসি বা এসসি ক্যাটাগরিতে ভূগোলের শিক্ষক দরকার। কিন্তু এসসি বা ওবিসি ক্যাটাগরির শিক্ষক নেই। রয়েছে জেনারেল ক্যাটাগরির ভূগোলের শিক্ষক। সেক্ষেত্রে জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থীকে এসসি বা ওবিসি ক্যাটাগরিতে নিয়োগ দিতে হয়। তার জন্য সরকারি নির্দেশের প্রয়োজন।এই সমস্যার কারণে বাকি পদে নিয়োগের সুপারিশ করা যায়নি।
‘আমাদের অজুহাত দেবেন না’
এসএসসির এই যুক্তি শুনে রীতিমত ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী। এসএসসি’র আইনজীবীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের অজুহাত দেবেন না। কাউন্সিলিংয়ে ডাকতে বলেছিলাম। আপনাদের কোর্টের আদেশ মানতে হবে। তাহলে আগে আপনারা বলেছিলেন কেন? শুন্য পদের রিভিউ না করেই কেন ঘোষণ করলেন?’ বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর সময় দুটো ভাগে শূন্যপদ ঠিক হয়। ঘোষিত শূন্যপদ আর বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর সম্ভাব্য শূন্যপদ। তাহলে এখন কেন এসএসসি বলছে ভুগোলে শূন্যপদ নেই?’ তার উত্তরে এসএসসি জানায় কাউন্সিলিংয়ের সময় সেটা তাদের নজরে আসে। যদিও এসএসসি’র এই যুক্তি মানতে রাজি হয়নি আদালত। বিচারপতি বলেন, এটা হতে পারে না। শুধুমাত্র ধারণার ভিত্তিতে শূন্যপদ ঘোষণা করা যায়না। এসেছি আদালতে জানায় ৪৪ টার মধ্যে ৩৬টি পদে নিয়োগ হয়েছে।
SSC চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারির হুঁশিয়ারি
তখনই বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘উচ্চপ্রাথমিক নিয়োগে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে শিলমোহর দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেও হাইকোর্টের নির্দেশ মতন যোগ্য হয়েও চাকরি পাননি একজন। এখন এসএসসি এসে যদি বলে অমুক তমুক সমস্যায় করা যায়নি, কেন তা মানবে আদালত। কোনও অজুহাত দেখাবেন না। কেন কার্যকর হয়নি নির্দেশ? তা হলে কী ভাবে কাউন্সেলিং করলেন? আপনার কী ক্ষমতা রয়েছে, জানার দরকার নেই। আদালতের নির্দেশ পালন করতে হবে। এখান থেকেই আধিকারিকদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেব।’’ এরপরেই বিচারপতিদের বেঞ্চ ডেপুটি শেরিফকে ডেকে পাঠান।
‘ নির্দেশ কার্যকর হয়নি কেন?’
বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘এত দিন গেল, নির্দেশ কার্যকর হয়নি কেন? সময়ের মধ্যে আদালতের নির্দেশ পালন করুন। সময় বলুন কবে আপনারা ডাকতে পারবেন কাউন্সিলিংয়ে।’ তার উত্তরে এসএসসি জানায়, আচার্য সদনের সামনে ধরনা চলছে। তাই সমস্যা হচ্ছে।
বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘গঙ্গা দিয়ে এতো জল বয়ে যাওয়ার পর আপনার চেয়ারম্যান এসে বলবে আমি জানতাম না। আমি এখন দেখছি শূন্যপদ নেই। এসব আদালত মানবে না। যদি এসএসসি চেয়ারম্যান সমাধান করতে না পারেন, আদালত তা মেনে নেবে না। ভূগোলের আসন নিয়ে এসএসসি রাজ্য সরকার নাকি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবে, সেটা তাঁদের সমস্যা। এসএসসি কীসের জন্য? এই ধরনের সমস্যা যাতে না হয় তা দেখার জন্যই তো। এসএসসি-র জন্য সমস্যা, তা মেটাতে হবে এসএসসি-কেই।
আরও পড়ুন : Adhir Ranjan Chowdhury: বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা! দুই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন অধীর
‘ শেষ সুযোগ দিচ্ছে আদালত ‘
আদালতের নির্দেশ মতো উচ্চপ্রাথমিকের নিয়োগ তালিকার প্রত্যেককে চাকরি দিতে হবে। শেষ সুযোগ দিচ্ছে আদালত। চাকরি এরপরে না পেলে হাইকোর্ট কড়া পদক্ষেপ নেবে৷’ বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এসএসসি কাউন্সেলিং করে স্কুল বাছাইয়ের জন্য। তাহলে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির শূন্যপদ নেই কেন? রাজ্য সরকার অনুমতি দিলে আমরা করে দেব৷ বা আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করতে হবে কেন? ভূগোলে ৪৪ শূন্যপদের ৩৬ নিয়োগ সম্পূর্ণ। বাকি নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি সমস্যায় থাকলে সমস্যা তাদেরকে মেটাতে হবে।’
আরও পড়ুন : BJP : গেরুয়া শিবিরের রাজ্য সভাপতি পদে কে? পহেলগাঁও হামলায় থমকে বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন
১৬ মে-এর মধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের নির্দেশ
আগামী ১৬ মে মামলা রাখা হবে বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে কি না, সেদিন তা বিবেচনা করা হবে। বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘১৬ তারিখ পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। আপনারা আদালতের সঙ্গে খেলছেন। নিজেদের রক্ষা করতে চাইছেন। আপনার চেয়ারম্যানকে ১৬ তারিখের মধ্যে নির্দেশ কার্যকর করতে বলুন। তারপর আদালতে জানাতে বলুন। নয়তো আদালত অবমাননার পদক্ষেপ করা হবে। হলফনামা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস করবো না। আপনারা স্রেফ খেলছেন। আপনাদের ১৫ দিনেরও বেশি সময় দেওয়া হল।আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডাকতে হবে।’