ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : কথায় আছে হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বন। আর এই পার্বনের মধ্যে একটি হল অক্ষয় তৃতীয়া (Akshaya Tritiya)। শাস্ত্র মতে, অক্ষয় শব্দের অর্থ হয় যার কোনও ক্ষয় নেই। সঙ্গে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। তাই এই দিন কোনও কাজ শুরু করলে তা চিরস্থায়ী হয় বলে মনে করা হয়। এই তিথিতে লক্ষ্মী ও গণেশের পুজো হয়। এই দিনে দোকানে দোকানে হাল খাতা খোলার রীতিও আছে। শাস্ত্র মতে, শুভ প্রদানকারী একটি তিথি হল অক্ষয় তৃতীয়া।
কেন অক্ষয় তৃতীয়াই শুভারম্ভের জন্য শুভ? (Akshaya Tritiya)
কেন অক্ষয় তৃতীয়াকেই (Akshaya Tritiya) শুভারম্ভের জন্য সবচেয়ে শুভ তিথি বলে মনে করা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ব্রহ্মপুরাণ, নানা পৌরাণিক কাহিনি ও পুরাণবিদদের ব্যাখ্যায়। অনেকের মতে, এই তিথিতেই মহাভারত রচনার সূচনা হয়েছিল, যেখানে জড়িয়ে আছে গণেশের ভাঙা দাঁতের কিংবদন্তি। এই দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণুর দশম অবতার পরশুরাম। আবার, এই দিনেই গঙ্গা অবতীর্ণ হয়েছিলেন মর্ত্যে।বলা হয়, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনই শুরু হয়েছিল সত্যযুগ—যার ফলে এই তিথিকে ‘যুগারম্ভ’ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়া যুগ যুগ ধরে শুভারম্ভ ও পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
অক্ষয় তৃতীয়ায় গঙ্গার মর্ত্যে আগমন (Akshaya Tritiya)
অক্ষয় তৃতীয়ার (Akshaya Tritiya) সঙ্গে জড়িয়ে আছে গঙ্গার মর্ত্যে আগমনের কাহিনিও। ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ ও দীর্ঘতম নদী গঙ্গা—যার প্রবাহ এক সময় শুধুই স্বর্গে সীমাবদ্ধ ছিল। ব্রহ্মার মানসকন্যা গঙ্গাকে মর্ত্যলোকে আনেন রাজা ভগীরথ, পিতৃর মুক্তির আশায়। বিশ্বাস করা হয়, এই ঐতিহাসিক দিনটি ছিল অক্ষয় তৃতীয়া। তবে এই বিষয়ে পুরাণবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, গঙ্গা বৈশাখ নয়, জ্যৈষ্ঠ মাসে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। আবার অনেকের মতে, গঙ্গা যদি সরাসরি মর্ত্যে নামতেন, তাহলে তার প্রচণ্ড প্রবাহে ধ্বংস নেমে আসত। সেই সংকটের সমাধান করেন দেবাদিদেব শিব। তিনি গঙ্গাকে নিজের জটায় ধারণ করে তার প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এবং শাস্ত্র মতে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণটিও ছিল অক্ষয় তৃতীয়া।
পরশুরাম জয়ন্তী
অক্ষয় তৃতীয়াকে দেশের অনেক প্রান্তে পরশুরাম জয়ন্তীও বলা হয়। এই দিন জন্মেছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। ঋষি জমদগ্নি ও মাতা রেণুকার পুত্র পরশুরাম জাতিতে ব্রাহ্মণ হলেও আচার আচরণে ছিলেন ক্ষত্রিয়। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে তিনি পৃথিবীকে ২১ বার ক্ষত্রিশূন্য করেছিলেন। অনেক বিষ্ণুমন্দিরে এই অক্ষয় তৃতীয়াকে পরশুরাম জয়ন্তী হিসাবে পালন করা হয়। ‘দেবী ভাগবত’, ‘বিষ্ণুপুরাণ’ ও ‘বায়ুপুরাণে’ পরশুরামের জন্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন কিংবদন্তি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন : Akshaya Tritiya 2025: জেনে নিন অক্ষয় তৃতীয়ার দিন কোন রাশির জাতকের কী কেনা শুভ
মহাভারতের সঙ্গে অক্ষয় তৃতীয়ার কী সম্পর্ক?
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার আদেশে মহর্ষি ব্যাস মহাভারত রচনায় মনোনিবেশ করেন। কিন্তু এই বিশাল কাব্য রচনার জন্য একজন দক্ষ লিপিকার প্রয়োজন হয়। তখন তিনি আহ্বান জানান গণেশকে। সিদ্ধিদাতা গণেশ রাজি হন একটি শর্তে—লিখতে হবে একটানা, কোনও বিরতি ছাড়া। ব্যাসদেবও তাতে সম্মত হন, তবে একটি পাল্টা শর্ত দেন—লেখার মানে যদি বোঝা না যায়, গণেশকে থেমে যেতে হবে।বিশ্বাস করা হয়, এই মহৎ কাজের সূচনা হয়েছিল বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে, অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন। আর দীর্ঘ সময় ধরে একটানা লিখতে লিখতে গণেশের কলম একসময় ভেঙে যায়। কিন্তু লেখা থামিয়ে না দিয়ে গণেশ নিজের একটি দাঁত ভেঙে কলমরূপে ব্যবহার করেন। এইভাবেই অক্ষয় তৃতীয়ার সঙ্গে চিরকাল জড়িয়ে যায় মহাকাব্য ‘মহাভারত’ এবং গণেশের অর্ধভগ্ন দাঁতের ঐতিহাসিক গল্প।
বৈভবলক্ষ্মীর পুজো
অক্ষয় তৃতীয়ার দিনই কুবেরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অসীম ধন ও ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এই কারণে এই দিন বৈভবলক্ষ্মীর পুজো হয়। এই দিন কিছু করলে তা অক্ষয় থাকে বলে মনে করা হয়।