ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পুরী থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘায় ২৪ একর জমিতে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে (Puri Concerned About Digha)। কিন্তু এই মন্দির সম্পর্কে চিন্তায় কেন পুরী?
দিঘায় নতুন জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন (Puri Concerned About Digha)
পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় ২৪ একর জমিতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে একটি নতুন জগন্নাথ মন্দির (Puri Concerned About Digha)। এই মন্দিরটি পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের আদলে নির্মিত হয়েছে এবং এর উচ্চতা ২১৩ ফুট। মন্দিরটি কালিঙ্গ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত হয়েছে এবং এতে প্রভু জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা ও মহালক্ষ্মীর বিগ্রহ স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মন্দিরটি উদ্বোধন করেন।
পুরীর সেবায়েতদের আপত্তি (Puri Concerned About Digha)
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত গোষ্ঠী, যেমন সুয়ার মহাসুয়ার নিযোগ ও পুষ্পলক নিযোগ, তাদের সদস্যদের দিঘার মন্দিরে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে (Puri Concerned About Digha)। তারা মনে করেন, পুরীর মন্দিরের প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠান অন্য কোথাও পালন করলে মূল মন্দিরের গুরুত্ব হ্রাস পাবে। সুয়ার মহাসুয়ার নিযোগের সভাপতি পদ্মনাভ মহাসুয়ার বলেন, “আমরা দিঘার মন্দির উদ্বোধনকে স্বাগত জানাই, কিন্তু পুরীর মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান সেখানে পালন করা উচিত নয়।”
‘ধাম’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক
পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিঘার মন্দিরকে ‘জগন্নাথ ধাম’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা নিয়ে ওড়িশার ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও সেবায়েতদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, হিন্দু ধর্মে মাত্র চারটি ‘ধাম’ রয়েছে। সেগুলি হল বদ্রীনাথ, দ্বারকা, পুরী ও রামেশ্বরম। পুরীর দৈতাপতি রামচন্দ্র দাসমহাপাত্র বলেন, “দিঘার মন্দিরে পাথরের বিগ্রহ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে জগন্নাথদেবের বিগ্রহ সর্বদা নিম কাঠের তৈরি হওয়া উচিত।”
আরও পড়ুন: Nepali Student Suicide: ব্যবধান মাত্র তিন মাসের, ওড়িশার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের নেপালি ছাত্রীর মৃত্যু!
অর্থনৈতিক প্রভাব ও পর্যটন
ওড়িশার পর্যটন শিল্পের একটি বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল। ২০২৩ সালে ওড়িশায় ৯৭.২৫ লক্ষ অভ্যন্তরীণ পর্যটকের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন। দিঘার নতুন মন্দির পুরীর পর্যটনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পর্যটন সংস্থাগুলি মনে করছেন, দিঘা এখনও পুরী, কোনার্ক বা চিলিকার পর্যটন পরিকাঠামো ছুঁতে পারেনি, তবে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়তে পারে যদি ওড়িশা সরকার পুরীর মন্দিরে দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা উন্নত না করে।
আরও পড়ুন: Delhi-NCR : প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বিপর্যস্ত রাজধানী, দুর্যোগে মৃত ৪, ব্যাহত বিমান পরিষেবা
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
দিঘার মন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপকে হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবে দেখছেন। বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে মন্দির হিসেবে উপস্থাপন করছেন।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই মন্দিরটি মানুষের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে এবং এটি হাজার হাজার বছর ধরে তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।”
এই বিতর্কের মধ্যেও দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন পশ্চিমবঙ্গের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।