ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন একাধিক ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী ও নিরীহ নাগরিক(India Strike on Pakistan)। স্বাভাবিক ভাবেই দেশ জুড়ে ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে নেটদুনিয়া— সকলেই বদলার সুরে সোচ্চার। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে এখনও পর্যন্ত কোনও সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি ভারত সরকার। এই অবস্থানে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে— তবে কি শুধু কথার লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে কেন্দ্রের মোদী সরকার? পাকিস্তানের পরমাণু শক্তির ভয়েই কি ফৌজি অভিযানে দোটানায় নয়াদিল্লি?
তাড়াহুড়োর সময় নয় (India Strike on Pakistan)
এই প্রশ্নের জবাবে ভারতের প্রাক্তন সেনা অফিসার ও কূটনীতিকরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের ‘ধীরে চলো’ নীতির পক্ষেই সওয়াল করেছেন(India Strike on Pakistan)। তাঁদের মতে, প্রত্যাঘাতের জন্য শুধু আবেগ নয়, চাই সুনির্দিষ্ট কৌশল ও উপযুক্ত সময়।ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ এস পানাগ সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডলে (পূর্বতন টুইটার) লেখেন, “এই মুহূর্তে কোনও তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। ভারতের ফৌজ ঠিক সময় বুঝেই প্রত্যাঘাত শানাবে। কোথায়, কখন এবং কোন পরিস্থিতিতে হামলা হবে, সেটা আমজনতা নয়, ঠিক করবে সশস্ত্র বাহিনী।”তাঁর মতে, ভারতের তরফে কোনও তড়িঘড়ি হামলা না চালিয়ে বরং মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলা হয়েছে পাকিস্তানকে। যার ফলে সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও মহড়ার সংখ্যা বেড়েছে। এ ভাবে পাক অর্থনীতিতে চাপ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে— যা বর্তমান সংকটে থাকা পাকিস্তানের জন্য মারাত্মক আঘাত।
‘নেকড়ে কান্না’ কৌশল পাকিস্তানের(India Strike on Pakistan)
পাকিস্তানের সরকার ও সেনার তরফে লাগাতার প্রচার চলছে— ভারত যে কোনও সময় হামলা চালাতে পারে(India Strike on Pakistan)। আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়তেই এই প্রচার চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সাবেক সেনা অফিসার পানাগের মতে, এই দীর্ঘস্থায়ী কান্নাকাটি আন্তর্জাতিক মহলে এক সময় গুরুত্ব হারাবে। তখনই আসবে প্রত্যাঘাতের মোক্ষম সময়।

আরও পড়ুন: Supreme Court : দেশ থেকে বহিষ্কার রুখতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ কাশ্মীরি পরিবার!
ভারতের কৌশলী সংযম(India Strike on Pakistan)
প্রাক্তন কূটনীতিকরা বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন ২০২১ সালের আফগানিস্তান পরিস্থিতির(India Strike on Pakistan)। তালিবান ফের ক্ষমতায় ফিরলে প্রথমে ভারত (Narendra Modi) সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সংযম দেখায়। পরে, কৌশলী কূটনীতির মাধ্যমে তালিবান সরকারের সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ শুরু করে। এই কৌশলেই ভারত আজ আফগানিস্তানে পুরনো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ফের চালু করার ছাড়পত্র পেয়েছে। এর পাশাপাশি, তালিবান ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধও ভারতের পক্ষে পরিস্থিতিকে সহজতর করেছে।

আরও পড়ুন: Jerusalem Wildfire : জেরুসালেমের দাবানলে হামাস যোগ! ইজ়রায়েলের অভিযোগের পেছনে কারণ কি?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যের কূটনীতি(India Strike on Pakistan)
২০২৫ সালে দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখনও ভারত তড়িঘড়ি পাল্টা প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ধৈর্য ও কূটনীতি অবলম্বন করে। এর ফলেই আজ দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান ইস্যুতেও সেই একই ধৈর্যের পথ অনুসরণ করছে নয়াদিল্লি।
প্রতিক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, কিন্তু অনিবার্য(India Strike on Pakistan)
প্রাক্তন সেনা অফিসার জি ডি বক্সী বলেন, “সীমান্তে পাকিস্তান সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। এই অবস্থায় তড়িঘড়ি কোনও পদক্ষেপ আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই বদলার জন্য চাই সময় এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতি।”তাঁর মতে, সেনাবাহিনীর হাতে যখন সময়, কৌশল ও প্রস্তুতির স্বাধীনতা থাকে, তখন প্রত্যাঘাত হয় আরও বেশি কার্যকর এবং ভয়াবহ।

কূটনৈতিক চাপের কৌশল(India Strike on Pakistan)
পাকিস্তান এখন পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়ে ভারতকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে ইজ়রায়েল ও আমেরিকার বিরুদ্ধেও কড়া ভাষায় মন্তব্য করছে। এর ফলে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলির সহানুভূতি হারাচ্ছে ইসলামাবাদ। ভারতের তরফে এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে কাজে লাগানো হচ্ছে বলেই মত কূটনীতিকদের।
উপসংহার: প্রত্যাঘাত সময়ের অপেক্ষা(India Strike on Pakistan)
পহেলগাঁও হামলার বদলা যে ভারত নেবেই, তা নিয়ে সামরিক বা কূটনৈতিক মহলে কোনও দ্বিমত নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে। কীভাবে এবং কখন সেই প্রত্যাঘাত আসবে— তা নির্ধারণ করবে সেনার কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা। বদলার তীব্রতা কেমন হবে, তার উত্তর দেবে সময়।