ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শুধু চিকিৎসা নয়, ভালোবাসা আর মর্যাদাপূর্ণ জীবনের স্বীকৃতি — এটাই যেন বেহালা বোধয়নের মূলমন্ত্র। মানসিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুদের জন্য তৈরি একটি আবাসিক স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘বেহালা বোধয়ন’ (Behala Bodhayan)। এ বছর তাদের ২৫ বছরের যাত্রাপথে পা দিল। এই বিশেষ উপলক্ষে কলকাতার সুজাতা সদনে আয়োজিত হল এক ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান — “মনন, মমতা ও প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তি”।
এই অনুষ্ঠান যেন ছিল শুধুই আনন্দের নয়, ছিল এক অন্যরকম উপলব্ধির জায়গা, যেখানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে অনুভব করলেন, জীবনের সৌন্দর্য। কেবল স্বাভাবিকতা নয়, ব্যতিক্রমীতার মাঝেও লুকিয়ে থাকে এক অদ্ভুত আলো।
উদ্বোধনী ভাষণে মানবিকতার বার্তা (Behala Bodhayan)
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বালিগঞ্জ শাখার স্বামী দিব্যজ্ঞানানন্দ মহারাজ। তিনি বলেন, “এইসব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়ানো মানেই সমাজের প্রতি এক নৈতিক দায়িত্ব পালন করা। সবাই মিলে এদের জন্য একটুকু সহানুভূতির জায়গা তৈরি করতে পারলে, সমাজ অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠবে।”
আরও পড়ুন: Tragic Bike Crash: উল্টোডাঙ্গা ফ্লাইওভারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, বাইক থেকে ছিটকে মৃত্যু ২ যুবকের
সম্মান জানানো হল লড়াই জয়ে পথপ্রদর্শকদের (Behala Bodhayan)
অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় বেহালা বোধয়নের দুই প্রাক্তন ছাত্র গৌরব ঘোষ ও রবীন সাউ-কে, যাঁরা নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে হার মানিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। তাঁদের উপস্থিতি ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

তিনজন লেখক — অহন সেনগুপ্ত, সৃজন সেনগুপ্ত ও সৌম্য উপাধ্যায়-কেও সম্বর্ধনা জানানো হয়। এই তিনজন ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা সমাজের কাছে এক গভীর বার্তা বহন করে — “প্রতিভা কখনও প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মানে না।”
প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের কণ্ঠে কণ্ঠে সংগ্রামের ইতিহাস (Behala Bodhayan)
বেহালা বোধয়নের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিক্তা ঘোষ বলেন, “এই ২৫ বছরের পথচলা ছিল খুব সহজ নয়। সমাজের মূলস্রোতের বাইরে থাকা এই শিশুদের জন্য একটু ভালোবাসা, একটু স্বীকৃতি পেতে বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু আজকের এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে — সমস্ত লড়াই সার্থক হয়েছে।”
চিকিৎসার বাইরে ভালোবাসাও এক থেরাপি (Behala Bodhayan)
বিশিষ্ট শ্রবণ ও বাক্ বিশেষজ্ঞ, অডিওলজিস্ট ও স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজিস্ট মোঃ সহিদুল আরফিন বলেন, “আমি আজ এখানে এসে বুঝলাম, শুধু ওষুধ বা থেরাপি যথেষ্ট নয়। ভালোবাসা, মর্যাদা ও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার দেওয়াটাই আসল থেরাপি। বেহালা বোধয়নের কাজ সমাজের মানবিকতার প্রতিচ্ছবি।”
আরও পড়ুন: Dalian Metro Rakes: ‘স্মার্ট মেট্রো’র পথে কলকাতা, আধুনিক রেকে সাজছে শহরের মেট্রোরেল
প্রতিভা যখন প্রতিবন্ধকতা জয় করে (Behala Bodhayan)
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে বেহালা বোধয়নের ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনায় এক মনোগ্রাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তাঁদের গান, নাচ ও নাটকের মাধ্যমে ফুটে উঠেছিল আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা এবং জীবনের প্রতি অসীম ভালোবাসা।
প্রত্যেকটি পরিবেশনায় ছিল এক ধরনের স্পষ্ট বার্তা — প্রতিবন্ধকতা জীবনের বাধা হতে পারে, তবে তা কখনও আনন্দের, প্রতিভার বা আশার অন্তরায় হতে পারে না।
বোধয়নের বার্তা সমাজের জন্য আয়না (Behala Bodhayan)
‘বেহালা বোধয়ন’-এর এই পঁচিশ বছরের পথচলা আমাদের শিখিয়ে দেয়, মানবিকতা যখন নীতিতে নয়, কাজে মেলে — তখনই একটি সমাজ সত্যিকারের সুন্দর হয়ে ওঠে। এই উদ্যোগ যেন আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়াতে।