ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’ সফল হলেও, তার জের এসে পড়েছে উত্তরের পর্যটন ব্যবসায় (Tourism Hit North Bengal)। গ্রীষ্মের ছুটিতে যখন সিকিম, দার্জিলিং, ডুয়ার্স পর্যটকে পরিপূর্ণ থাকার কথা, তখন বুকিং বাতিল শুরু হয়ে গিয়েছে। আতঙ্কের মূল কারণ — ‘চিকেনস নেক’ করিডর ঘিরে সম্ভাব্য সামরিক ঝুঁকি।
পর্যটকদের এক বড় অংশের আশঙ্কা, এই অঞ্চলও এখন টার্গেটে পরিণত হতে পারে। কারণ এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই করিডর ঘিরে রয়েছে চিন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ, যা একে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগকারী একমাত্র রাস্তা করে তুলেছে। এমন অবস্থায় যদি এখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে আটকে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক (Tourism Hit North Bengal)
রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু জানাচ্ছেন, “দিনভর বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে ফোন এসেছে। প্রায় সবাই ‘চিকেনস নেক’ এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইছেন। তারা দার্জিলিং, সিকিম ঘুরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করলেও কেউ ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।”
আরও পড়ুন: Summer Travel Destinations: ‘তিন পাহাড়ের স্বপ্ন’ নিয়ে এই গরমে ঘুরে আসুন তিন পাহাড়ি গ্রাম থেকে
ছেঁটে ফেলা হচ্ছে ভ্রমণসূচি (Tourism Hit North Bengal)
পর্যটকরা অনেকে সোজা পাহাড় থেকে নিচে নেমে যাচ্ছেন। যেমন দমদমের সৌমেন দাস। পরিবারের সঙ্গে সিকিমে ঘুরতে এসে বুধবার উত্তর সিকিম যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে তিনি সোজা বাসে করে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। তাঁর কথায়,
“চিকেনস নেক বলে কথা। আটকে গেলে কী যে হবে বোঝা যাচ্ছে না। ট্রেন বাতিল করে বাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বন্ধ হয়েছে নতুন বুকিং (Tourism Hit North Bengal)
দার্জিলিং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় খান্না বলেন, “যুদ্ধের খবর আসতেই নতুন বুকিং বন্ধ। আগের বুকিংগুলিও কতটা টিকবে বলা যাচ্ছে না। পর্যটকেরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।”
ডুয়ার্সের চিত্রও ভিন্ন নয়। লাটাগুড়ি রিসর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দে বলেন, “পরিস্থিতি বুঝেই অনেকে ভ্রমণ বাতিল করছেন। বুকিং নেই বললেই চলে।”
আরও পড়ুন: North Sikkim: উত্তর সিকিমে পর্যটনে ছাড়, তবে শর্তসাপেক্ষে— সময় মেনে না চললে বিপদ!
ধস নামতে পারে হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় (Tourism Hit North Bengal)
প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসে পাহাড় ও ডুয়ার্সে পর্যটনের মূল আয় হয়। কিন্তু চলতি পরিস্থিতিতে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হলে পুরো মরশুমটাই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

পাক অধিকৃত অঞ্চলে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনার অভিযান সফল হলেও, তার ছায়া পড়েছে দেশের ভেতরের পর্যটন অর্থনীতিতে। উত্তরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্রগুলি এখন ত্রস্ত, বুকিং বাতিলের হিড়িক শুরু হয়ে গিয়েছে। সরকার এবং পর্যটন দপ্তরের উচিত পরিস্থিতি সম্পর্কে যথাযথ বার্তা দেওয়া, যাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে এবং বিপুল ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যায় উত্তরবঙ্গের পর্যটনশিল্পকে।