ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে পশ্চিম সীমান্তে মোতায়েন করা হল রাশিয়া থেকে সদ্য আমদানি করা ‘ইগলা-এস’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা(IGLA-S Air Defence Missiles)। অপারেশন ‘সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তান জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিল বলেই জানিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে এই আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।
‘ইগলা-এস’ (IGLA-S Air Defence Missiles)
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইগলা-এস’ হল এক ধরনের ‘ভেরি শর্ট রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ (VSHORADS), যার মূল লক্ষ্য নিম্ন উচ্চতায় উড়তে থাকা ড্রোন, হেলিকপ্টার ও কম উচ্চতায় উড়ে আসা যুদ্ধবিমানকে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করা। এই ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা, এটি ‘ম্যান পোর্টেবল’, অর্থাৎ কোনও বাহন ছাড়াই একজন পদাতিক সেনা কাঁধে করে এই অস্ত্র বহন করতে পারেন ও লঞ্চ করতে পারেন(IGLA-S Air Defence Missiles)।অত্যাধুনিক ‘ইনফ্রারেড হোমিং’ প্রযুক্তিতে তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্র তাপ নির্গতকারী লক্ষ্যবস্তুকে নিজে থেকেই শনাক্ত করে আঘাত হানে। প্রায় ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লার এই অস্ত্র ৩.৫ কিমি উচ্চতায় থাকা লক্ষ্যবস্তুকেও নির্ভুলভাবে ধ্বংস করতে পারে। সেনার এক কর্তা বলেন, “এই ক্ষেপণাস্ত্র শুধু প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত নয়, এটি সীমান্তের প্রতিরক্ষার এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।”
পাকিস্তানে আতঙ্ক, শেয়ার বাজারে ধস(IGLA-S Air Defence Missiles)
অপারেশন ‘সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানে একাধিক বিমানঘাঁটি ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে(IGLA-S Air Defence Missiles)। ইসলামাবাদে সাইরেন বাজানোর ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যদিও ইসলামাবাদের ডেপুটি কমিশনার সেই ভিডিওকে গুজব বলে দাবি করেছেন, তবু সাধারণ মানুষের মধ্যে স্পষ্টই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শেয়ার বাজারে ধস নামা, বিমানবন্দর বন্ধ রাখা, ট্রেন বাতিল—সবই সেই আতঙ্কের প্রমাণ।

আরও পড়ুন: Operation Sindoor : পাকিস্তানে বাজছে সাইরেন,বাতিল ট্রেন! উত্তেজনার মুহূর্তে ধস পাক শেয়ার বাজারেও
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ(IGLA-S Air Defence Missiles)
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় ২৬০ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা চুক্তি করে এই ‘ইগলা-এস’ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি নতুন ব্যাচ আমদানি করা হয়েছে(IGLA-S Air Defence Missiles)। এর আগে, ভারত ১৯৯০ সাল থেকেই ‘ইগলা’ ব্যবহার করে এলেও, ‘ইগলা-এস’ হল প্রযুক্তিগতভাবে আরও উন্নত সংস্করণ। সূত্র আরও জানিয়েছে, নতুন ব্যাচ হাতে আসার পর ভারতীয় সেনা আরও ৪৮টি লঞ্চার এবং ৯০টি ক্ষেপণাস্ত্রের বরাত দিয়েছে।পাশাপাশি, দেশীয় প্রযুক্তিতেও আস্থা রাখছে ভারত। ইতিমধ্যেই ডিআরডিও সফলভাবে পরীক্ষা করেছে ‘এমকে-টু(এ) লেজ়ার ওয়েপন সিস্টেম’, যা সরাসরি শক্তির সাহায্যে ড্রোন বা অন্যান্য আকাশপথের হামলা রুখে দিতে পারে। এছাড়া, জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘মার্ক-১’ অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, যার পাল্লা ৮ কিমি।

অস্ত্রভাণ্ডারে রুশ হাইপারসোনিক প্রযুক্তি(IGLA-S Air Defence Missiles)
প্রতিরক্ষা মহলে গুঞ্জন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্ভাব্য রাশিয়া সফরে আলোচনায় উঠে আসতে পারে ‘৩এম২২ জ়ারকন’ হাইপারসোনিক ক্রুজ মিসাইল ও ‘ওরেশনিক’ ICBM। গত বছরের নভেম্বরে রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। শব্দের চেয়ে ১০ গুণ গতিতে উড়তে পারে এই অস্ত্র।ভারত নিজেও ‘ব্রহ্মোস-২’ হাইপারসোনিক মিসাইল তৈরির পথে এগোচ্ছে, যার প্রযুক্তিগত অনুপ্রেরণা রাশিয়ার ‘জ়ারকন’ থেকে। অর্থাভাবে যদিও প্রকল্পটি কিছুটা স্থবির, তবুও সামরিক কৌশলের নিরিখে এই প্রকল্পকে ফের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আকাশ প্রতিরক্ষায় রাডার শক্তি(IGLA-S Air Defence Missiles)
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ‘ভোরোনেজ়’ রাডার সিস্টেম কেনার কথাও চলছে। এই রাডার ৮ হাজার কিমি পর্যন্ত দূরত্বে একসঙ্গে ৫০০-র বেশি লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করতে পারে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মস্কো সফরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ (Rajnath Singh) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন।

উপসংহার: ‘সিঁদুর’-এর পর নতুন সমীকরণ(IGLA-S Air Defence Missiles)
অপারেশন ‘সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানের পাল্টা হামলার সম্ভাবনা থাকলেও, ভারতীয় সেনা প্রস্তুত। রুশ প্রযুক্তি, দেশীয় উদ্ভাবন ও কৌশলগত পদক্ষেপের মিশেলে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল। এখন শুধু প্রতিরোধ নয়, প্রতিক্রিয়া ও প্রতিহিংসার নীতিতে ভারত বলিষ্ঠ বার্তা দিচ্ছে—সীমান্তে যদি আগুন লাগে, তবে জবাব আরও প্রবল হবে।