ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের প্রতিরক্ষা ইতিহাসে এক সাহসী অধ্যায়ের নাম হয়ে উঠেছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শিবাঙ্গী সিংহ (Rafale Fighter Jet Woman Pilot)। তিনি শুধু রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রথম মহিলা পাইলটই নন, বর্তমানে ভারতের ভবিষ্যৎ মহাকাশ মিশনে অংশ নেওয়ার স্বপ্নপূরণের পথেও হাঁটছেন। তাঁর জীবনকথা আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।
শুরুটা বারাণসী থেকে (Rafale Fighter Jet Woman Pilot)
শিবাঙ্গীর জন্ম উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে(Rafale Fighter Jet Woman Pilot)। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন তুখোড়, কিন্তু শুধু একাডেমিক নয়, খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডেও সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। পড়াশোনার গুণে তিনি ভর্তি হন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে ২০১৬ সালে তিনি বায়ুসেনার অ্যাকাডেমিতে প্রবেশ করেন।একটি সাক্ষাৎকারে শিবাঙ্গী জানান, ছোটবেলায় নয়াদিল্লির বিমানবাহিনীর জাদুঘরে ঘুরতে গিয়ে যুদ্ধবিমানের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ জন্মায়। সেখান থেকেই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এই স্বপ্নপূরণে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর মা। শিবাঙ্গীর কথায়, “মা শুধু শিক্ষিত হতে বলেনি, মা বলেছিল, স্বাবলম্বী হতে হবে। আমি যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি, সেই স্বপ্ন দেখেছিল মা। মা-ই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।”
নারী পাইলটদের ইতিহাসে এক মাইলফলক(Rafale Fighter Jet Woman Pilot)
ভারতীয় বায়ুসেনায় মহিলাদের প্রথম নিয়োগ হয় ১৯৯৫ সালে, কিন্তু সেসময় তাঁদের যুদ্ধবিমান চালানোর অনুমতি ছিল না। ২০১৫ সালে এই নীতি বদলে যায় এবং ২০১৬ সালে অবনী চতুর্বেদী, ভাবনা কান্ত ও মোহনা সিংহকে নিয়ে গঠিত হয় প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলট ব্যাচ। তাঁদের পথ অনুসরণ করে, শিবাঙ্গী নিজের পরিচিতি গড়েন রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রথম মহিলা চালক হিসেবে।

মিগ থেকে রাফাল(Rafale Fighter Jet Woman Pilot)
শিবাঙ্গীর ফাইটার পাইলট হিসেবে যাত্রা শুরু মিগ-২১ বাইসন চালিয়ে (Rafale Fighter Jet Woman Pilot)। রাজস্থানের একটি বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পোস্টিং থাকা অবস্থায় তিনি দেশের সাহসী পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের সঙ্গে মিগ-২১ চালান। অভিনন্দন সেই বীর যিনি ২০১৯ সালের বালাকোট স্ট্রাইকের পর পাক সেনার হাতে বন্দি হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে উড়ান শিবাঙ্গীর পেশাগত জীবনে এক গর্বের অধ্যায়। মিগ-২১ থেকে রাফালে উত্তরণ সহজ ছিল না। ‘কনভারসন ট্রেনিং’ নামক এক কঠিন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কারণ প্রতিটি যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তিগত ধরন আলাদা। এরপর শিবাঙ্গী রাফাল ওড়ানোর জন্য ফরাসি প্রশিক্ষকদের সঙ্গে সিমুলেটর ট্রেনিং গ্রহণ করেন এবং সফলভাবে উত্তীর্ণ হন।অম্বালার ‘গোল্ডেন অ্যারোজ’ স্কোয়াড্রনে রাফাল চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। তখন ভারতীয় বায়ুসেনায় মাত্র ১০ জন মহিলা ফাইটার পাইলট ছিলেন, আর তাঁদের মধ্যে শিবাঙ্গীই প্রথম যিনি রাফালের ককপিটে বসেন। এই কৃতিত্ব তাঁকে দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক নতুন পরিচিতি দেয় (Rafale Fighter Jet Woman Pilot)।

দেশপ্রেমের মঞ্চে নারী শক্তির প্রকাশ (Rafale Fighter Jet Woman Pilot)
২০২২ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ভারতীয় বায়ুসেনার ট্যাবলোর অংশ হিসেবে শিবাঙ্গীকে দেখা যায় (Rafale Fighter Jet Woman Pilot)। লক্ষ মানুষের সামনে তিনি তুলে ধরেন নারী ক্ষমতায়নের এক দৃষ্টান্ত। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনেও সফল শিবাঙ্গী— তিনি বিয়ে করেছেন এক সহকর্মী ফাইটার পাইলটকে।
মহাকাশের স্বপ্ন (Rafale Fighter Jet Woman Pilot)
বর্তমানে তাঁর লক্ষ্য আরও বড়(Rafale Fighter Jet Woman Pilot)। ভারত যখন প্রথমবারের মতো গগনযান অভিযানের মাধ্যমে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেই মিশনের অংশ হতে চান শিবাঙ্গী। ইতিমধ্যেই তিনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (DRDO)-র অধীনে টেস্ট পাইলট প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি মহাকাশযাত্রী হওয়ার লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যেতে চান।
এক সাহসী নারীর প্রতিকৃতি (Rafale Fighter Jet Woman Pilot)
শিবাঙ্গী সিংহ আজ কেবল একজন পাইলট নন, তিনি ভারতীয় নারীদের প্রতিকৃতি, আত্মবিশ্বাস ও সাহসের প্রতীক(Rafale Fighter Jet Woman Pilot)। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় প্রমাণ করে, যদি স্বপ্ন থাকে এবং তার সঙ্গে থাকে অধ্যবসায়, তবে কোনও বাধাই আটকাতে পারে না।দেশ যখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখছে, তখন শিবাঙ্গী সিংহর মতো সাহসিনী কন্যারা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন। তাঁর মতো মহিলারা শুধু আকাশ নয়, মহাকাশকেও জয় করবেন— এমনটাই আজ দেশের আশা।