ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আবারও সরাসরি সংঘাতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়(Harvard University)। মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে, তারা হার্ভার্ডের অতিরিক্ত ৪৫ কোটি ডলার (প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) অনুদান বন্ধ করতে চলেছে। এর আগে তারা ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি অনুদান বন্ধ করেছিল। অর্থাৎ, মোট অনুদান বন্ধের অঙ্ক দাঁড়াল ২৫০ কোটি ডলার (প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা)।
সংঘাতের উৎস কী? (Harvard University)
এই সংঘাতের মূলে রয়েছে পশ্চিম এশিয়ার হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ এবং তার প্রেক্ষিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্যালেস্টিনপন্থী ছাত্র বিক্ষোভ(Harvard University)। এই বিক্ষোভে ইহুদি ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মার্কিন প্রশাসনের কর্তারা। তাদের দাবি, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি।
হার্ভার্ডের অবস্থান (Harvard University)
সোমবার হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালেন গার্বার শিক্ষাসচিব লিন্ডা ম্যাকমোহন-কে চিঠি দিয়ে জানান, “বিক্ষোভ ঘিরে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ছাত্রদের রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অবস্থান গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়(Harvard University)। হার্ভার্ড কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শে দীক্ষিত নয়, এটি মুক্তচিন্তার স্থান।” এই বক্তব্য ট্রাম্প প্রশাসন মেনে নেয়নি। তাদের মতে, ইহুদি ছাত্রদের প্রতি বৈষম্য এবং হুমকির ঘটনা উপেক্ষা করা হয়েছে, ফলে অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: Trump Tower : নিমেষেই বিক্রি হল ট্রাম্প টাওয়ারের সমস্ত ফ্ল্যাট, নজির গড়ল ট্রাম্প ব্র্যান্ড !
করমুক্ত মর্যাদা প্রত্যাহার (Harvard University)
ট্রাম্প (Donald J. Trump) প্রশাসন সম্প্রতি হার্ভার্ডের করমুক্ত মর্যাদা (tax-exempt status)-ও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় । এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আয়ে বহু কোটি ডলার অতিরিক্ত কর দিতে হতে পারে। হার্ভার্ড প্রশাসনের দাবি, এই পদক্ষেপ একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা-র উপর হস্তক্ষেপ।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে (Harvard University)
এই অনুদান কাঁটছাঁট এবং চাপের কৌশল শুধু হার্ভার্ডে সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রতি এমআইটি, কলম্বিয়া, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া প্রভৃতি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুদান সংকোচনের হুমকির মুখে পড়েছে। সব ক্ষেত্রেই ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন বিরোধ নিয়ে ছাত্র বিক্ষোভে প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে অভিযোগ তুলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

আরও পড়ুন: Russia Ukraine War : তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই বৃহস্পতিতে জ়েলেনস্কির সঙ্গে ইস্তানবুলে বৈঠকে পুতিন!
হার্ভার্ডের আইনি পদক্ষেপ (Harvard University)
এই পরিস্থিতিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, “সরকারের অনুদান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়ার একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। এটি শুধু হার্ভার্ড নয়, সমগ্র উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের স্বাধীনতার উপর আঘাত।”
শিক্ষাক্ষেত্রে নয়া সংকট? (Harvard University)
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই স্বনির্ভর ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর নির্ভরশীল। সরকারি অনুদান কাঁটছাঁট করে ছাত্র আন্দোলনের উপর চাপ তৈরি করার এই প্রবণতা গণতান্ত্রিক শিক্ষার জন্য বিপজ্জনক।শিক্ষাবিশ্লেষক ডেভিড ব্রুকস এক প্রতিবেদনে বলেন, “ছাত্র আন্দোলন ও মতপ্রকাশ কখনওই বন্ধ করা যায় না অনুদান বা ট্যাক্স অস্ত্র ব্যবহার করে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চিহ্ন।”
আইনি ও নীতিগত লড়াই(Harvard University)
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখন এক যুগান্তকারী আইনি ও নীতিগত লড়াইয়ের মুখোমুখি। শুধু অর্থনৈতিক অনুদান নয়, প্রশ্ন উঠছে শিক্ষার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ শিক্ষা ও রাজনীতির সম্পর্ককে আমূল বদলে দেওয়ার মতো—যার প্রভাব ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হতে পারে।