ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের প্রতিশোধের আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। ভারতের সঙ্গে চলমান সামরিক উত্তেজনার আবহে জেল থেকেই পাকিস্তানবাসীকে সতর্ক করে বার্তা দিলেন তিনি—”মোদী প্রতিশোধ নেবেন, কোনও অবস্থাতেই তাঁকে বিশ্বাস করা যাবে না(India Pakistan Tensions)।” ইমরানের এই বার্তা তাঁর বোন আলিমা খানের মাধ্যমে সামনে এসেছে, যিনি সম্প্রতি জেলে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।এই বার্তার কিছু অংশ ইমরানের আনুষ্ঠানিক এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলেও প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও ইমরান সরাসরি ওই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন না, তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল ও পরিবারই সেটি চালায় বলে সূত্রের খবর।
যুদ্ধের আবহে জেল থেকেই কড়া হুঁশিয়ারি (India Pakistan Tensions)
ইমরান খান বলেছেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে প্রতিটি মুহূর্তে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। পাকিস্তানকে সতর্ক থাকতে হবে(India Pakistan Tensions)। মোদী (Narendra Modi) কোনওভাবেই ছাড় দেবেন না—তিনি প্রতিশোধ নেবেন। আমরা অতীতেও দেখেছি, ভারত কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়।” পাক সংবাদমাধ্যম-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমরান তাঁর সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, “এই দেশ আমার, সেনাবাহিনীও আমার। আমি সবসময় সেনার পাশে থেকেছি। আমাদের সেনা আকাশপথে ও স্থলপথে মোদীকে পরাস্ত করেছে।”
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও ইমরানের প্রতিক্রিয়া(India Pakistan Tensions)
গত ৬ মে রাতে ভারতের তরফে চালানো হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি (India Pakistan Tensions)। ভারতীয় সেনা সূত্রে জানানো হয়, অভিযানের লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড, অস্ত্র ভাণ্ডার এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ভারত দাবি করেছে, তাদের বাহিনী শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকেই নিশানা করেছে। বেসামরিক জনগণের কোনও ক্ষতি হয়নি।অন্যদিকে, পাকিস্তানের দাবি, এই অভিযানে সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইমরান খান সেই অভিযোগকে তুলে ধরে বলেছেন, “ভারতের কাপুরুষোচিত হামলায় পাকিস্তানের অনেক সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রয়েছে। আমাদের বায়ুসেনা দুর্দান্ত কাজ করেছে, যা সারা দেশের জন্য গর্বের বিষয়।”

পাল্টা হামলা ‘অপারেশন বুনিয়ান-আন-মারসুস’(India Pakistan Tensions)
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাবে পাকিস্তান ঘোষনা করে ‘অপারেশন বুনিয়ান-আন-মারসুস’, যার আওতায় জম্মু-কাশ্মীরসহ ভারতের পশ্চিম সীমান্তবর্তী এলাকায় গুলি ও রকেট ছোঁড়া হয়(India Pakistan Tensions)। ভারতের আধিকারিকদের দাবি, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে পাক হামলা রুখে দিয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।এই সংঘাতের পটভূমিতে ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরই প্রেক্ষিতে ভারত সিদ্ধান্ত নেয়, সীমান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ ও তাদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে চালানো হবে সামরিক অভিযান। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, এটি ছিল একটি “সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান”(India Pakistan Tensions)।

সাময়িক শান্তি, কিন্তু আশঙ্কা রয়ে গেল(India Pakistan Tensions)
১২ মে শনিবার ভারত ও পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে(India Pakistan Tensions)। এরপরও কিছু সীমান্তবর্তী এলাকায় গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে অভিযোগ ওঠে। তবে সামগ্রিকভাবে রবিবার থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। দুই দেশের ডিজিএমও (Director General of Military Operations)-র মধ্যে ‘হটলাইন’ মারফত আলোচনা হয়, যা সাময়িক স্থিতাবস্থার ইঙ্গিত দেয়।তবু এই শান্তির মধ্যেই ইমরান খানের সতর্কবার্তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। তিনি মনে করছেন, ভারতের তরফে পুনরায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে পারে এবং সেটি হয়তো আরও জোরালো হবে।
রাজনৈতিক বার্তা না কৌশলগত? (India Pakistan Tensions)
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ইমরানের এই বার্তা শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত নয়, বরং একটি কৌশলগত রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছোড়া(India Pakistan Tensions)। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব, এবং বিদেশনীতি নির্ধারণে রাজনৈতিক নেতাদের সীমিত ভূমিকার কথা মাথায় রেখেই ইমরান নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাইছেন—তিনি সেনাবাহিনীর পাশে আছেন, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবই চান।তাঁর বক্তব্যে মোদী সরকারের প্রতি অবিশ্বাসের সুর প্রবল। বলেছেন, “মোদীকে বিশ্বাস করা যাবে না, কোনওভাবেই না। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমাদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির উপর।”
ইমরানের বার্তার রাজনৈতিক প্রভাব (India Pakistan Tensions)
ইমরান খান বর্তমানে দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি(India Pakistan Tensions)। তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI) নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও, জনমতের এক বড় অংশ তাঁর পক্ষে রয়েছে। জেল থেকেই বিভিন্ন সময় তিনি বার্তা পাঠিয়ে চলেছেন তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে।এই প্রেক্ষাপটে ভারতের বিরুদ্ধে এমন একটি বার্তা পাঠিয়ে তিনি পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী আবেগকে জাগ্রত করতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত যখন তাঁর দল রাজনীতির মূল মঞ্চ থেকে অনেকটাই দূরে, তখন এই বার্তা তাঁকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে তুলে এনেছে।