ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের চিত্র বদলে দিয়েছে পহেলগাঁও কাণ্ড (Pahalgam Terror Attack )। একদিকে কাশ্মীরকে ‘স্বর্গ’ হিসেবে তুলে ধরার পর্যটন প্রচেষ্টা, অন্যদিকে সেই স্বর্গেই নিরীহ পর্যটকদের নির্মম হত্যাকাণ্ড— এই ঘটনার পর যেন উপত্যকার মাটি আরও রক্তাক্ত। হামলার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ২৫ দিন। অথচ এখনো পর্যন্ত মূল অভিযুক্তরা অধরা। তদন্তে কিছু অগ্রগতি হলেও, এখনও বহু প্রশ্নের উত্তর অধরা।
এনআইএ কী জানতে পারে? (Pahalgam Terror Attack )
বৈসরন উপত্যকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছিলেন কয়েকজন পর্যটক(Pahalgam Terror Attack )। সেখানেই বেছে বেছে তাদের উপর হামলা চালায় একদল জঙ্গি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুযায়ী, তারা পর্যটকদের চিনে নিয়েই গুলি চালায়। তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ (NIA) ও নিরাপত্তাবাহিনী প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, অন্তত ৫-৭ জন জঙ্গি এই হামলায় যুক্ত ছিল। চার জনের স্কেচ প্রকাশ করা হয়। ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ নামক জঙ্গি সংগঠন হামলার দায় স্বীকার করে। এটি মূলত পাকিস্তান-সমর্থিত লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরেই এই সংগঠন কাশ্মীরে নাশকতা চালিয়ে আসছে।
মূল চক্রী কে?(Pahalgam Terror Attack )
তদন্তে উঠে এসেছে একটি পরিচিত নাম—শেখ সাজ্জাদ গুল(Pahalgam Terror Attack )। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির বাসিন্দা সাজ্জাদ অতীতে ‘সাজ্জাদ আহমেদ শেখ’ নামেও পরিচিত ছিল। কাশ্মীর উপত্যকায় তার সন্ত্রাসবাদী ইতিহাস দীর্ঘ:
- ২০২০ ও ২০২৪ সালে কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষয়ী হামলা
- ২০২৩-এ মধ্য কাশ্মীরে গ্রেনেড হামলা
- অনন্তনাগে পুলিশ হত্যা-সহ একাধিক নাশকতা
এনআইএ তার মাথার দাম ঘোষণা করেছে ₹১০ লক্ষ। তবে এত কড়া নজরদারি সত্ত্বেও তার বর্তমান অবস্থান অধরাই রয়ে গিয়েছে।

ভারতের কূটনৈতিক এবং সামরিক প্রতিক্রিয়া(Pahalgam Terror Attack )
হামলার পরপরই ভারত সরকার কূটনৈতিক স্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়। তারই পরিণতি ‘অপারেশন সিঁদুর’। গভীর রাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবিরে ভারতীয় বাহিনীর আচমকা হামলা করে জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস করা হয়। এর পর কিছুদিন ধরে সীমান্তে ব্যাপক সংঘর্ষ চলার পর আপাতত সংঘর্ষবিরতি কার্যকর।

উপত্যকায় ধরপাকড় এবং অভিযান(Pahalgam Terror Attack )
কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে সেনা ও এনআইএ যৌথ অভিযান চালাচ্ছে(Pahalgam Terror Attack )। সোপিয়ান, পুলওয়ামা ও ত্রালে অন্তত ৯ জন জঙ্গি নিকেশ হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে লশকর-এ-ত্যায়বা এবং জইশ-ই-মহম্মদের সদস্য। অনেক জায়গায় জঙ্গিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।এছাড়াও লশকর সহযোগী দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য পাওয়ার আশায় রয়েছেন তদন্তকারীরা।
‘হিট লিস্ট’ ও স্থানীয় যোগসূত্র(Pahalgam Terror Attack )
তদন্তকারীরা একটি ১৪ জনের ‘হিট লিস্ট’ প্রস্তুত করেছে। নিহত ৬ জন এই তালিকায় ছিল(Pahalgam Terror Attack )। এখনও ৮ জন অধরা। এদের মধ্যে রয়েছে:
- আদিল রহমান দেন্তু (লশকর কমান্ডার, সোপোর)
- হরিশ নাজির (লশকর, পুলওয়ামা)
- আসিফ আহমেদ কন্ডে (হিজবুল)
- জুবের ও জুবেইর ওয়ানি (হিজবুল ও লশকর, অনন্তনাগ ও কুলগাম)
গোয়েন্দাদের মতে, এত দিন পরেও জঙ্গিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, মানে তারা স্থানীয় স্তরে সাহায্য পাচ্ছে। সেই স্থানীয় সহযোগীদের চিহ্নিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান(Pahalgam Terror Attack )
তল্লাশি অভিযানে বেশ কিছু মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে(Pahalgam Terror Attack )। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে সেগুলি। এর আগে সোনমার্গ সুড়ঙ্গে হামলার ষড়যন্ত্রের সূত্র মিলেছিল জঙ্গি জুনায়েদ ভাটের মোবাইল থেকে। এবারও এনআইএ সেই পথেই হাঁটছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ ও স্কেচ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি থাকায় তাদের কাছ থেকে নতুন করে তথ্য নেওয়া হচ্ছে।
সমাজমাধ্যমে থাকা ক্লু এবং এনআইএ-এর আহ্বান(Pahalgam Terror Attack )
হামলার দিন পর্যটকদের কেউ না কেউ ছবি বা ভিডিও তুলেছিলেন—এমনটাই ধারণা এনআইএ-এর। সেইসব সোশ্যাল মিডিয়া ক্লিপিংস ঘেঁটে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে এনআইএ আহ্বান জানিয়েছে—কারও কাছে ভিডিও, ছবি বা সন্দেহজনক তথ্য থাকলে, তা যেন সংস্থার কাছে তুলে দেওয়া হয়।
মিলবে সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক?(Pahalgam Terror Attack )
পহেলগাঁও কাণ্ড কেবল একটি বিচ্ছিন্ন জঙ্গি হামলা নয়। এটি একটি বিস্তৃত ষড়যন্ত্রের অংশ—যা পাকিস্তানের মাটিতে বসে চালাচ্ছে একটি সংগঠিত সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক। যদিও ভারতীয় বাহিনী প্রতিক্রিয়ায় তৎপর, তবুও মূল অপরাধীদের ধরা না-পড়া পর্যন্ত শান্তি স্থায়ী নয়। এই ঘটনায় কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট, এবং আন্তর্জাতিক মহলের জন্যও এটি এক বড় প্রশ্নচিহ্ন: পর্যটন কেন্দ্রকে নিশানা করে আতঙ্ক ছড়ানো কি নতুন কৌশল?