ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দীর্ঘদিনের ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগের বিষয় (India Bangladesh Relation)। এতদিন সেই সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ হয়ে ‘ট্রানজিট রুট’ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বড় পরিবর্তন এসেছে, যা এই পরিকল্পনায় অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার এখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগের জন্য একটি বিকল্প আন্তর্জাতিক রুট গঠনের পথে এগোচ্ছে, যার ভরকেন্দ্র হবে কলকাতা এবং রূপরেখা বিস্তৃত হবে মায়ানমার ও বঙ্গোপসাগরের জলের উপর ভর করে (India Bangladesh Relation)।
বাংলাদেশে স্থগিত ‘ট্রানজিট রুট’ (India Bangladesh Relation)
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। হাসিনার শাসনকালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা হয়েছিল ‘ট্রানজিট রুট’ নিয়ে, তা এই পরিবর্তনের জেরে আপাতত স্থগিত হয়ে পড়েছে। ইউনূস সরকারের প্রশাসনিক অগ্রাধিকারে এই প্রকল্প স্থান না পাওয়ায় নয়াদিল্লি এখন বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হয়েছে (India Bangladesh Relation)।
নতুন রুটের রূপরেখা (India Bangladesh Relation)
এনএইচআইডিসিএল-এর (National Highways and Infrastructure Development Corporation Limited) একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারত সরকার এখন নতুনভাবে শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত চার লেনের ১৬৭ কিমি দীর্ঘ জাতীয় সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে (India Bangladesh Relation)। এই সড়ক অসম-মেঘালয়ের অভ্যন্তরে নির্মিত হবে এবং মায়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি পাঁচগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এছাড়া, কলকাতা বন্দর থেকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সিট্টে (Sittwe) বন্দরে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। এরপর সিট্টে থেকে কালাদান নদীপথে পালেটওয়া পর্যন্ত জাহাজ চলাচল সম্ভব হবে। পালেটওয়া থেকে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত সড়কপথ গড়ে তোলা হবে। পরবর্তী ধাপে এই সড়ক লুংলেই হয়ে আইজল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।এই পুরো প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, শিলচর ও অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রক্ষা করা যাতে বাংলাদেশ হয়ে আসার বিকল্পে নির্ভর করতে না হয় (India Bangladesh Relation)।

‘কালাদান মাল্টিমোডাল প্রজেক্ট’ ও মায়ানমারের চ্যালেঞ্জ (India Bangladesh Relation)
এই পুরো পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হল কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প, যার মাধ্যমে জল, সড়ক ও নদীপথ মিলিয়ে একটি সংযুক্ত করিডর তৈরি করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে ভারত (India Bangladesh Relation)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এই প্রকল্পে প্রায় ₹২২,৮৬৪ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছেন। তবে মায়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং সামরিক জুন্টা সরকারের বিপর্যস্ত অবস্থা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাখাইন প্রদেশের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা এখন বিদ্রোহী রাখাইন আর্মি-র নিয়ন্ত্রণে। ফলে, জলপথ ও সড়কপথে নিরাপদে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণ করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : Ishaq Dhar : সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়াতে ভুয়ো প্রতিবেদন দেখালো পাক বিদেশমন্ত্রী! ভুল ধরলো সংবাদ মাধ্যমই
কৌশলগত গুরুত্ব (India Bangladesh Relation)
নতুন এই করিডর শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, কৌশলগত ভাবেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ (India Bangladesh Relation)।
- উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সেখানে সেনা এবং লজিস্টিক সাপোর্ট পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে
- এই অঞ্চলে চিনা প্রভাব মোকাবিলায় ভারতীয় বাহিনীর প্রতিক্রিয়া সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে
- পাশাপাশি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে কলকাতা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে দ্বিমুখী চলাচল গতি পাবে
বর্তমানে শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা। নতুন সড়ক চালু হলে এই সময়সীমা কমে ৫ ঘণ্টায় এসে দাঁড়াবে।
রাজনৈতিক বার্তা (India Bangladesh Relation)
যে সময়ে মুহাম্মদ ইউনূস চিন সফরে গিয়ে বলেছিলেন, “উত্তর-পূর্ব ভারত স্থলবেষ্টিত এবং বাংলাদেশই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক,” তখন থেকেই নয়াদিল্লি সচেতন হয়ে পড়ে বিকল্প পথের রূপরেখা নিয়ে (India Bangladesh Relation)। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং চিন-মায়ানমার ঘনিষ্ঠতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এই প্রকল্পকে শুধু উন্নয়নমূলক নয়, বরং কৌশলগত জবাব হিসেবেও ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সংযোগের প্রশ্নে একটি মোড় পরিবর্তনের সূচনা করেছে (India Bangladesh Relation)। যদিও কালাদান প্রকল্প বহু আগেই পরিকল্পিত ছিল, বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেটি কার্যকর হয়ে উঠছে জরুরি ভিত্তিতে। এই রুট চালু হলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিকাশ ত্বরান্বিত হবে এবং জাতীয় নিরাপত্তাও পাবে দৃঢ়তা। তবে মায়ানমারের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এই অভিযানে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেল।