ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শনিবার রাতে ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা ও ড্রোন বাহিনী যে আক্রমণ শুরু করে, তার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০৫ জন প্যালেস্টাইনি নাগরিকের (Israel Hamas Conflict)। আহত শতাধিক। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজ়ার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিস, দেইর আল-বালাহ এবং গাজ়া সিটির বিস্তীর্ণ এলাকা। এই ভয়াবহ হামলার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ—হামাসের শীর্ষ নেতা মহম্মদ সিনওয়ার সম্ভবত ইজ়রায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। যদিও এই দাবি এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েল বা হামাস, কোনও পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, না-ই খণ্ডন করেছে। তবু এই খবর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও সংবাদ মহলে তীব্র আলোড়ন তুলেছে।
কে এই মহম্মদ সিনওয়ার? (Israel Hamas Conflict)
মহম্মদ সিনওয়ার ছিলেন হামাসের প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই। ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু ইজ়রায়েল আগেই ঘোষণা করেছিল এবং তাকে ‘গাজ়ায় সন্ত্রাসের মস্তিষ্ক’ বলে অভিহিত করেছিল ইজ়রায়েলি নেতৃত্ব। তার পরে মহম্মদই হামাসের কৌশলগত ও রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণে প্রভাবশালী ভূমিকা নেন (Israel Hamas Conflict)। ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’ সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার রাতে খান ইউনিস এলাকায় চালানো এক নির্দিষ্ট অভিযানে ইজ়রায়েলি বাহিনী মোতায়েন করে বিশেষ কমান্ডো স্কোয়াড। সেই অভিযানের টার্গেট ছিল সিনওয়ার পরিবারের আস্তানা। এই অভিযানে হামলার পরপরই বিস্ফোরণ হয়, ধ্বংস হয় গোটা ভবন(Israel Hamas Conflict)। তবে ওই অভিযানে সিনওয়ারের মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা এখনও অস্পষ্ট। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এক রিপোর্টে দাবি করেছে, ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাট্জ় পার্লামেন্টের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জানিয়েছেন, মহম্মদ সিনওয়ার সম্ভবত নিহত হয়েছেন। যদিও এই মন্তব্য ইজ়রায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি(Irael Hamas Conflict)।
শান্তি আলোচনায় অনিশ্চয়তা (Israel Hamas Conflict)
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—এই ঘটনা কি দোহায় চলমান শান্তি আলোচনা ব্যাহত করবে? গত সপ্তাহ থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় ইজ়রায়েল ও হামাস প্রতিনিধিদলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছিল (Israel Hamas Conflict)। সেই আলোচনা আরব লিগ, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এগোচ্ছিল। কিন্তু সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর, যদি সত্যি হয়, তা হলে এই আলোচনায় স্থবিরতা আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল। ‘রয়টার্স’-এর সূত্র বলছে, হামাস নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন দেখা দিচ্ছে। সিনওয়ারপন্থী গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া যাই হোক, এ ধরনের অপারেশন পরবর্তী প্রতিশোধের আশঙ্কা প্রবল। এর ফলে গাজ়া জুড়ে সংঘর্ষ আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে (Israel Hamas Conflict)।

মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া (Israel Hamas Conflict)
ইতিমধ্যে গাজ়ার হাসপাতালগুলি রোগীতে উপচে পড়ছে (Israel Hamas Conflict)। বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জলের সংকট চরমে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজ়ার প্রায় ৮০ শতাংশ জনগণ বাস্তুচ্যুত। শত শত শিশু ও মহিলার মৃত্যু ইতিমধ্যেই সংঘাতটিকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে অভিহিত করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলি।যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির মতো দেশগুলো ইজ়রায়েলকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে(Israel Hamas Conflict)।

তবে ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) জানিয়েছেন, “যতক্ষণ না শেষ সন্ত্রাসবাদী নিঃশেষ হচ্ছে, অভিযান চলবে।” মহম্মদ সিনওয়ারের সম্ভাব্য মৃত্যু গাজ়া যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। একদিকে যেমন হামাস নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হবে, অন্যদিকে প্রতিশোধ পর্বের আশঙ্কায় বাড়তে পারে সংঘাতের তীব্রতা। দোহা আলোচনার ভবিষ্যৎ এখন সময়ই বলবে। তবে এই মুহূর্তে গাজ়ার আকাশে শান্তির আলো দূরের স্বপ্নমাত্র (Israel Hamas Conflict)।