ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের আকাশসীমায় জোড়া হুমকি! একদিকে পাকিস্তান, অন্যদিকে চিন! সুযোগের পেলেই নিঃশব্দে ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়তে পারে ঘাতক ড্রোন, ফাইটারজেট ও ক্ষেপণাস্ত্র! তাই সদা সতর্ক ভারতীয় বায়ু সেনা (Air Defence System)।অপারেশনের সিঁদুরের পর তুরস্কের ANKA-S ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান।
সেই হামলা নিখুঁত ভাবে রুখে দিয়েছে ভারতীয় বায়ু সেনা। ভারতের নিশ্ছিদ্র বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি Air Defence System তার ভেলকি দেখিয়েছে। যার পর থেকে চোখে সর্ষে ফুল দেখছে পাক সেনা। কেননা, যখনই ভারতের আকাশে হামলার চেষ্টা করেছে শত্রুরা, তখনই সক্রিয় হয়েছে ভারতের Multi-Layer Air Defence System! ভারতীয় বাহিনী বার বার প্রমান করেছে, ভারত সদা প্রস্তুত যেকোনো হামলা রুখে দিতে! ভারতের আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতে কোন কোন বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে ভারতের হাতে?
‘আকাশ’ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম (Air Defence System)
ভারতের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে একাধিক স্তর! সবচেয়ে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘আকাশ’ (Air Defence System)! এটি হল Surface to Air Missile Defence System! ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে এবং ১৮ কিমি উচ্চতায় থাকা যেকোনো ফাইটারজেট, ঘাতক ড্রোন এবং ক্রুজ মিসাইলকে নিমেষেই ধ্বংস করতে পারে এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ‘আকাশ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম’ ৫৫ কেজি পর্যন্ত ওয়ারহেড বহন করে দিনে বা রাতে যেকোনো আবহাওয়াতে নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম!

ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি নির্মাণ করেছে। এই মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে তিনটি অংশ! প্রথম অংশে রয়েছে- 3D র্যাডার সিস্টেম “রাজেন্দ্র”। যা ১০০ কিমি দূরত্ব থেকে আসা ৬০টির বেশি লক্ষ্য বস্তুকে একসাথে শনাক্ত করতে পারে। র্যাডার শনাক্ত করে সেই ডেটা পৌছে দেয় কন্ট্রোল রুমে। যেখানে ঠিক হয় কোন লক্ষ্য বস্তুকে আগে আঘাত করতে হবে। সেখান থেকে সংকেত যায় মিসাইল লঞ্চারে! এরপরেই মোবাইল লঞ্চারে থাকা মিসাইল ফায়ার হয়। এই ডিফেন্স সিস্টেমের প্রতিটি ইউনিটে ৪টি করে মোবাইল মিসাইল লঞ্চার থাকে। প্রতিটি লঞ্চার ৩টি করে মিসাইল লঞ্চ করতে পারে। মাত্র ৪০ সেকেন্ডে ১২টি মিসাইল লঞ্চ করতে সক্ষম ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা “আকাশ” (Air Defence System)।

আরও পড়ুন: Infiltration Foiled : ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরই ৫০ জঙ্গিকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা পাকিস্তানের!
ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম (Air Defence System)
ভারতের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দুটি ভাগ রয়েছে- ফেজ ১ এবং ফেজ ২ (Air Defence System)।
ফেজ ১-এ রয়েছে Prithvi Air Defence System! এটি একটি এক্সো-অ্যাটমোসফেরিক ইন্টারসেপ্টর! অর্থাৎ, বায়ু মণ্ডলের বাইরে ধ্বংস করে দেয় মিসাইলকে! পৃথিবী থেকে ৮০-১২০ কিমি উচ্চতায় থাকা যে কোনো ব্যালেস্টিক মিসাইল কে ধ্বংস করতে পারে এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ফেজ ২-এ রয়েছে Advanced Air Defence System! এটি একটি এন্ডো-অ্যাটমোসফেরিক ইন্টারসেপ্টর! অর্থাৎ, বায়ু মণ্ডলের ভিতরে ধ্বংস করে দেয় পরমাণু অস্ত্রবাহী ব্যালেস্টিক মিসাইলকে! পৃথিবী থেকে ২০-৪০ কিমি উচ্চতায় থাকা যে কোনো ব্যালেস্টিক মিসাইল কে ধ্বংস করতে পারে এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এই ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে দুটি ধাপে, বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের আগে এবং পরে, উভয় ক্ষেত্রেই ধ্বংস করা যায় ব্যালেস্টিক মিসাইলকে। এই মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমে রয়েছে Active radar homing এবং হিট-টু-কিল টেকনোলজি। যা নিমেশেই ভারতের আকাশসীমার দিকে এগিয়ে আসা পরমাণু অস্ত্রবাহী ব্যালেস্টিক মিসাইলকেও ধ্বংস করে দিতে পারে।

S-400 “সুদর্শনচক্র” (Air Defence System)
ভারতের বায়ু প্রতিরক্ষা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তৃতীয় স্তরে রয়েছে রাশিয়া থেকে কেনা “সুদর্শন চক্র” S-400 Air Defence System ! আকাশসীমা শত্রুর আক্রমণ রুখতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুলোর তালিকায় নাম রয়েছে এই S-400 Air Defence System এর(Air Defence System)। ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব এবং ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে পারে স্টেলথ জেট থেকে হাইপারসনিক মিসাইলকেও। এই Air Defence System রুখে দিতে পারে যেকোনো ফাইটার জেট, ব্যালেস্টিক মিসাইল, ক্রজ মিসাইল ও ড্রোন হামলাকে।
হিন্দু পুরাণের অমৃত রক্ষার মতোই ভারতের আকাশসীমাকেও নিশ্ছিদ্র নিরাপদ বলয়ে ঘিরে রেখেছে “সুদর্শন চক্র”-S-400 বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা! এর প্রতিটি ইউনিট বা ব্যাটারি ৪০০ কিলোমিটারের ৩৬০ ডিগ্ৰি কভারেজে এক সঙ্গে ৮০টি টার্গেটকে ট্র্যাক এবং ১৬টি টার্গেটকে অ্যাটাক করতে পারে।
এই Air Defence System এ রয়েছে চারটি অংশ (Air Defence System)। প্রথম ভাগে থাকে Survallence Radar! যেটা ৬০০ কিমি দূরে থাকা ফাইটার জেট, মিসাইল ও ড্রোনকে শনাক্ত করতে পারে। টার্গেট শনাক্ত হলেই Survallence Radar সেই ডেটা পৌঁছে দেয় Fire Control Radar এ। Fire Control Radar ৪০০ কিমির মধ্যে আসলেই লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করার জন্য মোবাইল লঞ্চার থেকে এক সঙ্গে ২টি মিসাইল লঞ্চ করে। এরপর কম্যান্ড পোস্ট নিশ্চিত করে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস হয়েছে কিনা! ভারতের কাছে এই মুহূর্তে ৩টি S-400 Regiment রয়েছে। প্রতিটি রেজিমেন্টে ৮টি করে মোবাইল মিসাইল লঞ্চার রয়েছে। প্রতিটি মোবাইল মিসাইল লঞ্চার ৪টি করে আলাদা আলাদা রেঞ্জের মিসাইল ফায়ার করতে সক্ষম। যা ভারতের আকাশসীমাকে অদৃশ্য সুরক্ষা বলয়ের চাদরে ঢেকে রেখেছে।
“বারাক-৮–সমুদ্র থেকে আকাশে সুরক্ষা” (Air Defence System)
ভারতের আকাশসীমাকে সুরক্ষিত রাখতে চতুর্থ স্তরের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হল- বারাক-৮ (Air Defence System)! ভারতের দীর্ঘ সমুদ্রসীমা বরাবর আকাশকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করছে ভারত ও ইজরায়েলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি Barak-8 Surface to Air Missile Defence System! এটি ১০০ কিমি দূরে এবং ১৬ থেকে ২০ কিমি পর্যন্ত উচ্চতায় থাকা যেকোনো লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাইটার জেট, ড্রোন, মিসাইল এবং যুদ্ধ জাহাজের আক্রমণকে রুখে দিতে পারে। এটি Active Radar Homing Technology ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আঘাত হানে লক্ষ্যবস্তুতে। ভারতের বিমানবাহী রণতরী INS Vikrant-এ মোতায়েন রয়েছে এই Barak-8 Surface to Air Missile Defence System! ভারতের সামুদ্রিক প্রাচীরের মতোই ভারতকে সুরক্ষা দেওয়ার করছে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
“দুর্ভেদ্য সুরক্ষা বলয়ে মোড়া দেশ” (Air Defence System)
“পাকিস্তান হোক বা চীন, সন্ত্রাসবাদ হোক বা সাইবার হুমকি—ভারতের আকাশ দুর্ভেদ্য সুরক্ষা বলয়ে মোড়া (Air Defence System)। আধুনিক প্রযুক্তি, দেশীয় উদ্ভাবন এবং কৌশলগত সহযোগিতা ভারতের মাথার ওপর এক অদৃশ্য কিন্তু অবিচল ঢাল তৈরি করেছে।” “শত্রু যদি আকাশ ছুঁতে চায়, ভারত তাকে আগুনে জবাব দেবে—কারণ এখন, ভারতের আকাশে শানিত তরবারির মতো ঝুলে আছে আকাশবর্ম।”