ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: তালিবান-শাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে এগিয়ে এল পাকিস্তান (Pakistan Afganistan Ties)। শুক্রবার পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার ঘোষণা করেন, খুব শীঘ্রই কাবুলে রাষ্ট্রদূত পাঠাতে চলেছে ইসলামাবাদ। তালিবান সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক দূরত্ব ঘোচাতে এই সিদ্ধান্ত যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, তা স্পষ্ট কূটনৈতিক মহলে। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রক্রিয়ার মূল কাণ্ডারী চিন, যে দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তালিবান-পাক সম্পর্কের অবনতি (Pakistan Afganistan Ties)
২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর অধিকাংশ দেশই এখনও পর্যন্ত সরকারটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তানও এ যাবৎ কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেনি (Pakistan Afganistan Ties)। যদিও ভৌগোলিক নৈকট্য এবং নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ একেবারে ছিন্ন হয়নি। তবে সম্প্রতি বিদ্রোহী সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP)-এর একাধিক হামলায় পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় অশান্তি ছড়িয়েছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে মদত দিচ্ছে আফগান তালিবান সরকার, ফলে সম্পর্কের অবনতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
চিন কৌশলগতভাবে সক্রিয় (Pakistan Afganistan Ties)
এই প্রেক্ষাপটে চিন কৌশলগতভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কূটনৈতিক সূত্রে খবর, কিছুদিন আগেই বেজিংয়ে বৈঠকে বসেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই, পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার এবং তালিবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি(Pakistan Afganistan Ties)। সেই বৈঠকে তিন দেশের মধ্যে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়। সূত্রের দাবি, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের (Shehbaz Sharif) মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান চিনের বিদেশমন্ত্রী। মূলত তাঁর মধ্যস্থতাতেই ইসলামাবাদ কাবুলে রাষ্ট্রদূত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

আরও পড়ুন: Russia Ukraine War : রাশিয়ায় জঙ্গি হামলার ছক! হামলার নিন্দা পুতিনের
ভারতের সঙ্গে তালিবানের সম্পর্ক (Pakistan Afganistan Ties)
এই কূটনৈতিক পালাবদলের পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ভারতের সঙ্গে তালিবান সরকারের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল(Pakistan Afganistan Ties)। পহেলগাঁও হামলার ঘটনায় তালিবান সরকারের নিন্দা ও নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া, উভয়েই দেখিয়েছে যে কাবুলে ভারতের প্রভাব বাড়ছে। একসময় আফগানিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার কৌশল নিলেও, বর্তমান তালিবান সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। এই প্রেক্ষাপটে চিন এবং পাকিস্তান উভয়েই নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে নতুন কৌশল নিয়েছে।

আরও পড়ুন: US Tariff Row : পাকিস্তানের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার সময় জানিয়ে দিল ট্রাম্প! ভারতের সঙ্গে কবে?
চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর (Pakistan Afganistan Ties)
দ্বিতীয়ত, চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর অন্যতম অঙ্গ চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর (CPEC) (Pakistan Afganistan Ties)। এই করিডরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে চিনের বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রকল্প বিপন্ন হতে পারে। আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে পরিচালিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির আক্রমণ সেই আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে বেজিং চায়, পাকিস্তান যেন কাবুলে প্রভাব বিস্তার করে এবং আফগানিস্তানকে স্থিতিশীল রাখে।এখনও পর্যন্ত মাত্র তিনটি দেশ—চিন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং উজবেকিস্তান তালিবান সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রদূত পাঠালে তারা হবে চতুর্থ দেশ। যদিও এখনও রাষ্ট্রদূতের নাম প্রকাশ করেনি ইসলামাবাদ, এবং তালিবান সরকারের তরফেও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি(Pakistan Afganistan Ties)।
আফগানিস্তানে আমেরিকা ও পশ্চিমি শক্তির প্রভাব(Pakistan Afganistan Ties)
আন্তর্জাতিক মহলের মতে, আফগানিস্তানে আমেরিকা ও পশ্চিমি শক্তির প্রভাব হ্রাস পাওয়ার পর চিন সেই শূন্যস্থান পূরণে মরিয়া(Pakistan Afganistan Ties)। আর পাকিস্তান, যা এতদিন তালিবান প্রশ্নে দ্বিধায় ছিল, এখন তার পুরনো ‘কৌশলগত গভীরতা’ ফিরে পেতে চাইছে চিনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে।দেখা যাক, এই নতুন কূটনৈতিক সমীকরণে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে কতটা পরিবর্তন আসে। তবে এটা স্পষ্ট, তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান এখন আর কেবল একা দাঁড়িয়ে নেই—বরং তার চারপাশে শক্তিশালী খেলোয়াড়েরা নতুন নতুন সমীকরণ গড়তে শুরু করেছে।