ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ১৬ বছর পর ২০২৭-এর ১ মার্চ থেকে দেশজুড়ে শুরু হবে জনগণনা(Census)।তবে লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের হিমালয় ঘেরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা সে সময় তুষারাবৃত থাকবে। তাই ওই এলাকাগুলিতে ২০২৬-এর অক্টোবর থেকেই শুরু হবে জনগণনার কাজ। এর সঙ্গে জাতভিত্তিক গণনাও হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি (Census)
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘২০২৭ সালের জনগণনা দুই পর্যায়ে পরিচালিত হবে এবং এতে জাতিগত তথ্য সংগ্রহও অন্তর্ভুক্ত থাকবে(Census)।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের জন্য জনগণনার রেফারেন্স তারিখ হবে ২০২৭ সালের ১ মার্চ। তবে, লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের তুষারাবৃত অ-সিঙ্ক্রোনাস অঞ্চলের জন্য রেফারেন্স তারিখ হবে ২০২৬ সালের ১ অক্টোবর।সরকার আরও জানিয়েছে, এই সময়সীমা মেনে জনগণনা পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ সালের ১৬ জুন অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশিত হবে। এটি সেন্সাস অ্যাক্ট, ১৯৪৮-এর ৩ নম্বর ধারার অধীনে করা হবে, যা ভারতে দশবার্ষিক জনগণনার আইনি কাঠামো নির্ধারণ করে।

জনগণনার আইনি কাঠামো (Census)
ভারতের জনগণনা সেন্সাস অ্যাক্ট, ১৯৪৮ এবং সেন্সাস রুলস, ১৯৯০-এর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়(Census)। সর্বশেষ জনগণনা ২০১১ সালে দুই পর্যায়ে পরিচালিত হয়েছিল: (১) প্রথম পর্যায় – গৃহ তালিকাভুক্তি (১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০) এবং (২) দ্বিতীয় পর্যায় – জনসংখ্যা গণনা (৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১১), যার রেফারেন্স তারিখ ছিল ২০১১ সালের ১ মার্চ।তবে, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশের তুষারাবৃত অ-সিঙ্ক্রোনাস অঞ্চলের জন্য এটি ১১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০-এ পরিচালিত হয়েছিল, রেফারেন্স তারিখ ছিল ১ অক্টোবর, ২০১০। ২০২১ সালের জনগণনাও একইভাবে দুই পর্যায়ে পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল, যার প্রথম পর্যায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় পর্যায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
আরও পড়ুন- Rahul Gandhi: ‘রাহুল মানসিকভাবে অসুস্থ!’ মোদীর ‘আত্মসমর্পণ’ তত্ত্বের পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিজেপির
জনগণনার পরিকল্পনা এবং সময়সীমা (Census)
২০২৭ সালের জনগণনা দুই পর্যায়ে পরিচালিত হবে: প্রথম পর্যায়ে গৃহ তালিকাভুক্তি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে জনসংখ্যা গণনা(Census)। গৃহ তালিকাভুক্তির পর ছয় থেকে আট মাসের ব্যবধানে জনসংখ্যা গণনা পরিচালিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতিটি ব্যক্তির বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, তফসিলি জাতি/উপজাতি, মাতৃভাষা, শিক্ষার স্তর, প্রতিবন্ধিতা, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, মাইগ্রেশন এবং নারীদের ক্ষেত্রে উর্বরতার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই জনগণনায় প্রথমবারের মতো জাতিগত তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ১৯৩১ সালের পর প্রথমবার জাতিগত তথ্যের জাতীয় স্তরে গণনা হবে।২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি জনগণনায় জাতিগত তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন- Bengaluru: বেঙ্গালুরুতে আরসিবি’র সেলিব্রেশনে মৃত্যু মিছিল, থামল না উৎসব
জাতিগত তথ্য সংগ্রহ (Census)
জাতিগত তথ্য সংগ্রহ ভারতে একটি বিতর্কিত এবং রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়(Census)। ব্রিটিশ শাসনকালে ১৮৮১ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত জনগণনায় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করা হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালের জনগণনা থেকে তফসিলি জাতি (এসসি) এবং তফসিলি উপজাতি (এসটি) ছাড়া জাতিগত তথ্য সংগ্রহ বন্ধ করা হয়। ২০১১ সালে সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং জাতিগত স্থিতি (এসইসিসি) জনগণনার মাধ্যমে জাতিগত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু এটি প্রকাশ্যে প্রকাশিত হয়নি কারণ এতে লক্ষাধিক জাতি/উপজাতির তথ্য সংগ্রহ হয়েছিল।২০২৭ সালের জনগণনায় জাতিগত তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্তটি বিরোধী দলগুলোর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে।

বিলম্বের কারণ (Census)
২০২১ সালের জনগণনা কোভিড মহামারীর কারণে স্থগিত হয়েছিল(Census)। প্রশাসনিক সীমানা ফ্রিজ করার সময়সীমা বারবার বাড়ানো হয়, সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ পর্যন্ত। এই বিলম্বের ফলে জনগণনা ২০২৪ বা ২০২৫ সালের শুরুতে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। জনগণনা সম্পন্ন হতে কমপক্ষে ১১ মাস সময় লাগে, এবং এটি প্রশাসনিক সীমানা ফ্রিজ হওয়ার তিন মাস পর শুরু হতে পারে।জনগণনার তথ্য লোকসভা আসনের পুনর্নির্ধারণ এবং মহিলা সংরক্ষণ বিল বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৬ সালে সংরক্ষণ ফ্রিজ শেষ হওয়ার পর, ২০২৭ সালের জনগণনার তথ্যের ভিত্তিতে ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে, যা ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সম্পন্ন হতে পারে। তবে, এটি দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল রাজ্যগুলো আসন হারাতে পারে, যেখানে উত্তরের রাজ্যগুলো বেশি আসন পেতে পারে।
