ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই (CJI Gavai on Freedom of Judges) বলেছেন যে সংবিধান স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেয় যে রাষ্ট্র ‘জনসেবায় বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার পদক্ষেপ নেবে।’ তৃতীয় এবং চতুর্থ বিচারকের মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, বিচার বিভাগকে স্বাধীন এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রথমে কলেজিয়াম ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল।
লন্ডনে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে মুখ খুললেন সিজেআই গাভাই, কলিজিয়াম পদ্ধতির পক্ষে সওয়াল (CJI Gavai on Freedom of Judges)
ভারতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই (CJI Gavai on Freedom of Judges) স্পষ্ট জানালেন, বিচারকদের নিয়োগে সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ থাকা উচিত নয়। তিনি কলিজিয়াম পদ্ধতির পক্ষে দাঁড়িয়ে বললেন, এই নিয়োগপদ্ধতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এই পদ্ধতিকে অনেক সময়ই স্বচ্ছতার অভাবে সমালোচনা শুনতে হয়।
সংবিধানের মর্যাদা বজায় রাখতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য (CJI Gavai on Freedom of Judges)
লন্ডনে ইউকে সুপ্রিম কোর্টে এক গোলটেবিল বৈঠকে বিচারপতি গাভাই বলেন (CJI Gavai on Freedom of Judges), “আইনসভা বা নির্বাহী বিভাগ যেখানে ভোটের মাধ্যমে বৈধতা পায়, সেখানে বিচারব্যবস্থা তার বৈধতা অর্জন করে সংবিধানিক মূল্যবোধকে স্বাধীনভাবে, সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে রক্ষা করে।” এই আলোচনার মূল থিম ছিল “বিচার বিভাগের বৈধতা এবং জনমানসে আস্থা বজায় রাখা”।
তিনি বলেন, সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, রাজ্যকে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে জনপরিষেবায় বিচারবিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ আলাদা থাকে। এই পৃথকীকরণ বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
কলিজিয়াম পদ্ধতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করলেন গাভাই
সিজেআই গাভাই বলেন, বিচারকদের নিযুক্তির ক্ষেত্রে যে স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা থাকা দরকার, সেটাই কলিজিয়াম পদ্ধতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি জানালেন, ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিত নির্বাহী বিভাগ। সেই সময় দুইবার, দেশের প্রথা ভেঙে, সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতিকে বাদ দিয়ে অন্যদের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই তৈরি হয় কলিজিয়াম পদ্ধতি।
আরও পড়ুন: Shubhanshu Shukla Space Flight Postponed: মহাকাশযাত্রায় দেরি, ১০ জুন উড়ান শুভাংশু শুক্লার
তিনি আরও বলেন, বিচারব্যবস্থার জন্য অর্থ বরাদ্দও আলাদা করে সংবিধানিক তহবিল থেকে করা হয়, যাতে নির্বাহী বিভাগ কোনওভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে।
রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক, এনজিএসি নিয়েও তোপ
তবে কলিজিয়াম পদ্ধতির অন্যতম সমালোচক রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। চলতি বছর সংসদে আবারও তিনি এনজিএসি (ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন) নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই আইন ২০১৪ সালে কার্যকর হয়েছিল, কিন্তু পরের বছরই সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করে দেয়। ধনখড় বলেন, “এই আইন ঐতিহাসিক। সংসদে বিরল ঐকমত্যে তা পাস হয়েছিল।”
আরও পড়ুন: Parliament Monsoon Session: ২১ জুলাই শুরু সংসদের বাদল অধিবেশন, শেষ হবে ১২ আগস্ট
কী ছিল এনজিএসি আইন?
এই আইন অনুযায়ী, বিচারপতি নিয়োগের জন্য ছ’জনের একটি প্যানেল গঠিত হয়। তাতে আইনমন্ত্রী (নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধি) ছাড়াও থাকতেন সুপ্রিম কোর্টের দুই সিনিয়র বিচারপতি, প্রধান বিচারপতি এবং আরও দু’জন সদস্য, যাঁদের মনোনয়ন করতেন একটি কমিটি—যার সদস্য ছিলেন প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা।
এই এনজিএসি পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত আদালত তা বাতিল করে দেয়, এবং বিচার বিভাগের নিয়োগে কলিজিয়াম পদ্ধতিই বজায় থাকে। সিজেআই গাভাইর বক্তব্য সেই পদ্ধতির পক্ষেই ফের সওয়াল করল।