ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: লোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA) ও তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP)-এর পর এ বার ইসলামাবাদের জন্য নতুন মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী — ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ(Fitna al Khawarij)। আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হয়েছে পাক সেনার বিশেষ অভিযান। পাকিস্তান সেনার জনসংযোগ বিভাগ (ISPR) জানায়, উত্তর ওয়াজ়িরিস্তানের দত্তা খেল এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৪ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। সেনার দাবি, নিহতরা সকলেই ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ নামের গোষ্ঠীর সদস্য। এই গোষ্ঠীকে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (Shehbaz Sharif) মদতপুষ্ট ‘ছায়া সংগঠন’ বলেই বর্ণনা করেছে ইসলামাবাদ।
কে এই ‘ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ’? (Fitna al Khawarij)
গোষ্ঠীটির নামেই রয়েছে তার আদর্শগত অবস্থান (Fitna al Khawarij)। ‘ফিতনা’ অর্থ বিশৃঙ্খলা বা বিদ্রোহ, আর ‘খাওয়ারিজ’ শব্দটি ইসলামের ইতিহাসে পরিচিত চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সম্প্রদায় হিসেবে। এই নাম ব্যবহার করেই তারা নিজেদের এক বিপ্লবী ইসলামি সংগঠন হিসেবে তুলে ধরছে, যদিও ইসলামাবাদ ও আন্তর্জাতিক মহলের মতে, এরা মূলত টিটিপি-এর সশস্ত্র বাহিনী হিসাবেই কাজ করছে।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সুযোগে উত্থান (Fitna al Khawarij)
উত্তর ওয়াজ়িরিস্তান এক সময় ছিল পাকিস্তানের কুখ্যাত আইএসআই সমর্থিত হক্কানি নেটওয়ার্ক-এর ঘাঁটি (Fitna al Khawarij)। ওই গোষ্ঠীর নেতা সিরাজুদ্দিন হক্কানি আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তালিবান সরকারের অধীনে। তবে আফগান সরকারের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা লড়াই—বিশেষ করে হাসান আখুন্দ, বরাদর এবং মোল্লা ইয়াকুবের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে সিরাজুদ্দিন মাসকয়েক আগে কাবুল ছাড়েন। বিশেষজ্ঞদের মতে, হক্কানি নেটওয়ার্কের এই ‘পাওয়ার ভ্যাকুয়াম’-এর সুযোগ নিয়েই উত্তর ওয়াজ়িরিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ। টিটিপি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে তারা এখন স্বাধীনভাবে হামলা চালাচ্ছে, লক্ষ্য ইসলামাবাদ তথা পাক সেনা।

সেনা অভিযানের উদ্দেশ্য ও চ্যালেঞ্জ (Fitna al Khawarij)
পাক সেনার মুখপাত্র জানায়, “উত্তর ওয়াজ়িরিস্তান এলাকায় সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা দিন দিন বাড়ছিল (Fitna al Khawarij)। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমরা অভিযান শুরু করেছি।” সেনা সূত্রে খবর, এখনও এলাকাটির একাধিক অংশে গেরিলা যুদ্ধ চলছে। সেনাবাহিনী ড্রোন নজরদারি এবং হেলিকপ্টার সহযোগে অভিযান চালাচ্ছে। তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, এই অভিযানে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। অনেক বাসিন্দাকে এলাকা ছেড়ে পালাতে হচ্ছে। এতে মানবিক সংকটও ঘনিয়ে আসছে।

আরও পড়ুন: Elon Musk : ‘বড় সুন্দর বিল’ নিয়ে ট্রাম্পের বিরোধিতায় ইলন মাস্ক! আরও স্পষ্ট রাজনৈতিক দূরত্ব
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ (Fitna al Khawarij)
আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চল ঘিরে পাকিস্তানের এই নতুন অভিযান আন্তর্জাতিক স্তরেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে (Fitna al Khawarij)। মার্কিন গোয়েন্দা মহলের ধারণা, ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ নামের এই গোষ্ঠী মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় ‘আইএস-খোরাসান’-এর আদলে একটি তীব্র উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠন গড়তে চাইছে। সেই লক্ষ্যেই তারা সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোকে সন্ত্রাসবাদের ‘সেফ জোন’ হিসেবে ব্যবহার করছে। ফিতনা-আল-খাওয়ারিজের উত্থান পাকিস্তানের জন্য কেবল সন্ত্রাসবাদী চ্যালেঞ্জই নয়, বরং জটিল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। টিটিপি ও তালিবানদের সঙ্গে সম্পর্কিত এই গোষ্ঠীকে দমন করতে গিয়ে পাকিস্তানকে হয়তো আরও গভীর সংঘাতে জড়াতে হতে পারে — যার প্রভাব শুধু ইসলামাবাদ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার উপর পড়তে পারে।