ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা এবার চূড়ান্তে পৌঁছাল। ইজরায়েলের ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’-এ নিহত হলেন ইরানের দুই শীর্ষ সেনা কর্তাব্যক্তি— রেভলিউশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেন সালামি এবং সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মহম্মদ হোসেন বাগেরি(Iran Israel Conflict)। ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
দুই কট্টরপন্থীর মৃত্যুই বড় ধাক্কা (Iran Israel Conflict)
দু’জনেই ছিলেন ইরান-ইরাক যুদ্ধের অভিজ্ঞ সৈনিক, রাষ্ট্রীয় ভাবধারার দৃঢ় অনুসারী এবং পশ্চিম-বিরোধী রাজনীতির রূপকার(Iran Israel Conflict)। সালামি যেমন ছিলেন ইরানের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির মুখ্য রূপকার, তেমনই বাগেরি ছিলেন দেশের প্রতিরক্ষা নীতি নির্ধারণের মূল চালক।দু’জনের জীবনপথই প্রায় সমান্তরাল—১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ, যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ, এবং পরে সেনার উচ্চপদে উন্নীত হওয়া। কিন্তু শুধু সামরিক ভূমিকাতেই নয়, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেও ছিলেন একইরকম কট্টর। দু’জনেই ছিলেন আমেরিকা ও ইজরায়েলের প্রবল সমালোচক। বারবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘ইহুদিবাদী’ শক্তির অবসান চান বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সালামির জীবন ও অবদান(Iran Israel Conflict)
১৯৬০ সালে জন্ম ইরানের ইসফাহান প্রদেশে(Iran Israel Conflict)। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ‘কারবালা’ ও ‘ইমাম হুসেন ডিভিশন’-এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধের পর উচ্চশিক্ষা শেষ করে ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সেনার যৌথ বাহিনীর কার্যনির্বাহী প্রধান হন।বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন ইরানের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়ে। তবে এই কর্মসূচির জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা তাঁকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে তাঁকে রেভলিউশনারি গার্ডের প্রধান পদে নিয়োগ করেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খামেনেই।

আরও পড়ুন:Iran israel Conflict : ইজরায়েলের ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’-এ উত্তাল ইরান, বিশ্বজুড়ে চরম উদ্বেগ
বাগেরির ভূমিকাও নজরকাড়া(Iran Israel Conflict)
হোসেন বাগেরিও ছিলেন ইরান-ইরাক যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনের অভিজ্ঞ সেনানায়ক(Iran Israel Conflict)। ২০১৬ সালে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ হন। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরে প্রতিবাদ দমনেও ছিলেন সক্রিয়। তাঁরও নাম রয়েছে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা তালিকায়। দেশীয় নিরাপত্তা ও পারমাণবিক কর্মসূচিতে তাঁর গভীর সম্পৃক্ততা ছিল।

পরমাণু স্থাপনায় বিমানহানা(Iran Israel Conflict)
শুক্রবার সকাল থেকে ইজরায়েল(Benjamin Netanyahu) ‘আত্মরক্ষার স্বার্থে’ ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে বিমানহানা শুরু করে(Iran Israel Conflict)। মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র এবং আশেপাশের সামরিক ঘাঁটি। সেই হামলাতেই মৃত্যু হয় সালামি ও বাগেরির, এমনটাই দাবি করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ইজরায়েলের এই অভিযান ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে চরম আঘাত করল। তবে এর পাল্টা জবাব আসতে পারে খুব শীঘ্রই। মধ্যপ্রাচ্য এখন একেবারে বারুদের স্তুপে দাঁড়িয়ে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা (Iran Israel Conflict)
এই ঘটনার পরেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে ওয়াশিংটন, মস্কো, ব্রাসেলস সহ নানা কূটনৈতিক মহলে। ইরান এখন কী পদক্ষেপ নেয়, সেটিই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই হত্যাকাণ্ড চতুর্থ প্রজন্মের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সূচনা করতে পারে। ইতিমধ্যেই তেহরানে জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক ডাকা হয়েছে। রেভলিউশনারি গার্ড বাহিনী প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সালামি ও বাগেরির মতো ব্যক্তিত্বের মৃত্যুই শুধু নয়, এই ঘটনা একটি ভূ-রাজনৈতিক যুগের সমাপ্তি নির্দেশ করছে। এখন দেখার, ইরান এই ঘটনায় কেমন প্রতিক্রিয়া জানায়—পাল্টা আঘাত না কূটনীতির পথে? কিন্তু যে আগুন ইতিমধ্যেই জ্বলে উঠেছে, তা নিভতে সময় লাগবে—এটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।