ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গুজরাটের আহমেদাবাদে এখন শুধু কান্না আর হাহাকার(Abdhiben Patel)। তারমধ্যেই সামনে আসছে একের পর এক হৃদয়বিদারক কাহিনী। এবার তালিকায় যুক্ত হলেন অবধিবেন প্যাটেল। ৪০ বছর বয়সি অবধিবেন প্রথমবার তাঁর আট বছরের ছেলে মীরকে একা রেখে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসেছিলেন, অসুস্থ মায়ের দেখাশোনার জন্য। কিন্তু ১২ জুন অভিশপ্ত লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ফেরাই তাঁর জীবনের শেষ সফর হয়ে দাঁড়াল।
ছেলের কাছে ফেরা হল না (Abdhiben Patel)
নর্থহ্যাম্পটনের জোন বিউটি স্টুডিও-তে কাজ করতেন অবধিবেন প্যাটেল(Abdhiben Patel)। সেখানেই ২০১৬ সালে যোগ দেন এবং পরে ম্যানেজার হন। তাঁর সততা, পরিশ্রম ও নির্ভরযোগ্যতার জন্য সহকর্মীদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়। অবধিবেনের সহকর্মী আতিফ করিম জানান, ‘ও বারবার বলেছিল, যেতে চায় না। ছেলেকে একা রেখে যেতে ভয় করছে। এটা ছিল এই প্রথম ওর ছেলে মীরের থেকে দূরে থাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওর মুখে শুধু ছেলের কথাই শুনতাম। ছেলেটা খুবই লাজুক, সংবেদনশীল। অবধিবেনের সবকিছুই ওর ছেলেকে ঘিরে ছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’ আতিফ করিম আরও জানান, ‘অবধিবেনের স্বামী পঙ্কজ নাইট শিফটে কাজ করেন। তাই মীরকে সব সময় স্নেহ দিয়ে আগলে রাখতেন অবধিবেন। দুর্ঘটনার আগের দিনও সে বলেছিল, কাজটা শেষ করে দিচ্ছি। ওটাই ছিল আমার সঙ্গে ওর শেষ কথা।’

বুকফাটা কান্না (Abdhiben Patel)
শনিবার অবধিবেন প্যাটেলের কাজে যোগ কথা ছিল(Abdhiben Patel)। কিন্তু তা আর হল না। দু’সপ্তাহ ভারতে কাটিয়ে, ১২ জুন তিনি ফিরতে চেয়েছিলেন ব্রিটেনে। এমনকি ফেরার আগের দিন পর্যন্ত অফিসের কাজও শেষ করেছিলেন ভারত থেকেই। কিন্তু মাকে ছেড়ে ছেলের কাছে ফেরার দিনই ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।দুর্ঘটনার পরে অবধিবেনের স্বামী পঙ্কজ ও ছেলে মীর ভারতে এসেছে। মায়ের ডিএনএ মিলিয়ে দেহও হাতে পেয়েছে তারা। ৮ বছরের ছোট্ট ছেলের এখনও বিশ্বাস হয়নি, মাকে আর কখনও দেখতে পাবে না সে। মায়ের প্রতি দায়িত্ববোধ, ছেলেকে ছেড়ে যাওয়ার উদ্বেগ, সব কিছুর মধ্যে ফেরার সফর, শেষে পড়ে রইল শুধু বুকফাটা কান্না।
আরও পড়ুন-Census: প্রথমবার অনলাইনে জনগণনায় অংশ নেবে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’
সামান্য জ্বর বদলে দিল জীবন (Abdhiben Patel)
৪০ বছর বয়সি চিকিৎসক উমঙ্গ প্যাটেল ইংল্যান্ডের নর্থ্যাম্পটনের বাসিন্দা(Abdhiben Patel)। গত ২৪ মে স্ত্রী, সন্তান, ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে গুজরাটের মহীসাগর জেলার কৈডাম গ্রামে এসেছিলেন, নিজের বাড়িতে। ফিরে যাওয়ার কথা ছিল ১২ জুনে, একা। কিন্তু সব কিছু বদলে যায় ৯ জুনে।ডা. উমঙ্গ প্যাটেল বলেন, ‘শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘুরে এসে হঠাৎ জ্বর আসে আমার। খুব দুর্বল লাগছিল। স্ত্রী অনুরোধ করে বলল, এই অবস্থায় লন্ডন যেও না। আমিও একটু দোনোমোনো করলেও, শেষমেশ স্ত্রীয়ের কথা শুনে ১২ জুনের টিকিট বাতিল করে দিলাম, ১৫ জুনের জন্য নতুন টিকিট কাটলাম। তারপরই শুনি সেই বিমানটি ভেঙে পড়েছে।’ তাঁর কথায়, ‘ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করেছেন। যাঁরা ওই বিমানে ছিলেন, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি।’

আরও পড়ুন-Meghalaya case: মৃত্যুর আগে হইহই করে ট্রেকিং রাজার! মেঘালয়ে হত্যাকাণ্ডের শেষ মুহূর্তের ভিডিও
অভিশপ্ত ১২ জুন (Abdhiben Patel)
গত ১২ জুন বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে অহমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডন গ্যাটউইকের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ (Abdhiben Patel)। বোয়িং সংস্থার এই ড্রিমলাইনার বিমানে এর আগে বড়সড় দুর্ঘটনা হয়নি। কিন্তু সে দিন রানওয়ে ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সামনের বিল্ডিংয়ে ধাক্কা খেয়ে বিমানটি ভেঙে পড়ে। মুহূর্তে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারপাশ। বিমানে আগুন ধরে যায়। এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানে ২৪২ জন ছিলেন। ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনাস্থলেও অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ২৭০। ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে, বিমান ভেঙে পড়ার আগে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন পাইলট। পাঠিয়েছিলেন বিপদবার্তা (মে ডে কল)। কিন্তু তারপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মুহূর্তের মধ্যে বিমানটি ভেঙে পড়ে।
