ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে মার্কিন সামরিক হামলার পরে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে(Iran Nuclear Site)। ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহানে অবস্থিত এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলিতে কতটা বাস্তবিক ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ফোরডো কেন্দ্রে বড়সড় ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।”
ফোরডোর পাহাড়ের নিচে ঘূর্ণি-আক্রান্ত প্রযুক্তি (Iran Nuclear Site)
ইরানের ফোরডো পরমাণুকেন্দ্রটি একটি পাহাড় খনন করে গোপনে নির্মিত। মাটি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট (৯০ মিটার) গভীরে অবস্থিত এই কেন্দ্র মূলত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই কাজে ব্যবহৃত হয় উচ্চ সংবেদনশীল সেন্ট্রিফিউজ়, যা সামান্য কম্পনেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। IAEA প্রধান জানান, “কম্পনের কারণে সেন্ট্রিফিউজ়ের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। ফলে সরাসরি গহ্বরে বিস্ফোরণ না হলেও, পরিকাঠামোগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকছে।” বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রযুক্তিগুলি অত্যন্ত জটিল এবং পুনর্নির্মাণ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। ফলে কেন্দ্রটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
ইসফাহানর ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে বিস্ফোরণ (Iran Nuclear Site)
ইসফাহানের কেন্দ্রেও বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ মিলেছে। IAEA’র মতে, সেখানে একাধিক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ভূগর্ভস্থ কয়েকটি সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এইসব ভবনের মধ্যে কিছুতে পরমাণু উপাদান থাকতেও পারে বলে আশঙ্কা। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি। বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, এর আগে ইজ়রায়েল একাধিকবার ইসফাহানে হামলা চালিয়েছিল। রবিবার ভোরের মার্কিন হামলায় সেই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে।

নাতান্জর উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়ল গহ্বর (Iran Nuclear Site)
নাতান্জ় কেন্দ্রেও আগেই হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েলি বাহিনী। এবার মার্কিন হানায় সেখানে অন্তত একটি ১৬ ফুট (প্রায় ৫ মিটার) গভীর গহ্বর তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে এপি, ম্যাক্সার-এর উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে। এই গর্ত ভূগর্ভস্থ পরিকাঠামোর ধ্বংসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও IAEA জানিয়েছে, কেন্দ্রের বাইরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধি হয়নি বলে ইরানি কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ (Iran Nuclear Site)
IAEA স্পষ্ট করেছে যে, তারা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইরানের পারমাণবিক নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।
রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “পরমাণু পরিকাঠামো কোনও দেশের নিরাপত্তা ইস্যু হলেও তা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই এই ধরনের হামলা সমগ্র বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।”

IAEA ও উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ (Iran Nuclear Site)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) দাবি করেছেন, এই হামলায় ইরানের পরমাণু সক্ষমতা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়েছে এই হামলা, তা এখনও সময়ের অপেক্ষা। IAEA ও উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণে ফোরডো ও ইসফাহানে ক্ষতির ইঙ্গিত মিললেও, নিখুঁত চিত্র পেতে আরও তদন্ত ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ প্রয়োজন। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনার কেন্দ্রে এখন পরমাণু নিরাপত্তা এবং আস্থার সঙ্কট।