ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মাঝে চার দশকের ব্যাবধান। মহাকাশে পৌঁছ গেলেন দ্বিতীয় ভারতীয় মহাকাশচারী(India’s Pride)। ১৯৮৪ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে রাকেশ শর্মা মহাকাশে পা রাখেন।ফের ৪১ বছর পর, ২০২৫ সালে বেলা ১২টার কিছু পর মহাকাশে পৌঁছলেন ভারতের গর্ব, গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। বিশাল স্ক্রিনে এই দৃশ্য দেখে আনন্দের কান্নায় ভাসলেন শুভাংশুর বাবা এবং মা।
কান্নায় ভাসলেন বাবা-মা (India’s Pride)
একাধিবার অভিযান পিছনোর পর, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা বেজে ১ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস স্টেশন থেকে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেন শুভাংশু ও তাঁর সহযাত্রীরা(India’s Pride)। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই মহাকাশে পৌঁছে যান তাঁরা। আর বিশাল পর্দায় দিকে সেই ঐতিহাসিক দৃশ্য দেখার জন্য পলকহীন চোখে তাকিয়েছিলেন আশা শুক্লা। চোখে জল। হাত জোড় করা। ঠোঁট দু’টো নড়ছে। নিশ্চয়ই তখন প্রার্থনাই করছিলেন ভারতের দ্বিতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লার মা আশাদেবী। পাশে বসে তাঁর স্বামী, শম্ভুদয়াল শুক্লা। শুভাংশুর বাবা অবশ্য হাসছিলেন। যুদ্ধবিমান ওড়ানো তাঁদের ছেলে এবার মহাকাশযান চালাচ্ছেন।আর তা দেখে আবেগ-উত্তেজনায় একাকার বাবা-মা। পরে অবশ্য ছেলে মহাকাশে পৌঁছে যেতেই সকলের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন শম্ভুদয়াল শুক্লা এবং আশা শুক্লা।

ভারতের মানব অভিযানের সূচনা (India’s Pride)
শুভাংশুর মা আশা শুক্লা ছেলের এই কৃতিত্বে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এটা ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না… গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার জন্য আমরা মোটেও ভীত নই… আমরা আনন্দিত, আমরা খুব গর্বিত (India’s Pride)।’ অন্যদিকে বাবা শম্ভুদয়াল শুক্লা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের আশীর্বাদ তার সঙ্গে আছে এবং আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন মিশনটি ভালোভাবে সম্পন্ন হয়…আমরা তাঁর জন্য গর্বিত।’এদিকে, মহাকাশে পৌঁছেই ভারতবাসীর জন্য বার্তা দেন শুভাংশু। তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় ভারতবাসী, কী অসাধারণ যাত্রা! ৪০ বছর পর ফের মহাকাশে আমরা। আমার কাঁধের তেরঙ্গা জানান দিচ্ছে, আমি পৃথিবীর বাইরে হলেও, আপনাদের মধ্যেই আছি। এটা স্পেস স্টেশনে ভারতের প্রবেশের সূচনা নয়, মহাকাশে ভারতের মানুষ পাঠানোর সূচনা। ‘
আরও পড়ুন-Middle East: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সমাপ্তি! মধ্যপ্রাচ্যে ফের বিমান পরিষেবা চালু এয়ার ইন্ডিয়ার
কে শুভাংশু শুক্লা ? (India’s Pride)
১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর লখনউয়ের অত্যন্ত সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শুভাংশু শুক্লা(India’s Pride)। বাবা শম্ভুদয়াল শুক্লা সরকারি চাকরি করতেন, মা আশা গৃহবধূ। আর পাঁচ জন সাধারণ গৃহবধূর মতোই সংসারের সমস্ত কাজ সামলে ব্যস্ত থাকতেন ছেলে-মেয়ে, সন্তানকে নিয়েই। তাঁর বাবা যখন অফিসের কাজে বেরিয়ে যেতে, সকালের কাজ সামলে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতেন শুভাংশু মা। স্কুল থেকে ফের দুই সন্তানের পড়াশোনা। দু’কামরার একতলা বাড়িতে বসেই এক চিলতে আকাশ দেখতেন শুভাংশ। আর সেখান থেকে মনে বুনেছিলেন আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন।লখনউয়ের সিটি মন্তেশ্বরী স্কুলে তাঁর পড়াশোনার হাতেখড়ি। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুল। সেখানেও তাঁর দুর্দান্ত পারফরমেন্স। হতে পারতেন ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন যে তখনও চোখে।

আরও পড়ুন-Meghalaya Case: রাজের সঙ্গে সম্পর্ক সোনমের! মেঘালয়কাণ্ডে পরতে পরতে রহস্য
ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের দক্ষ অফিসার (India’s Pride)
স্বপ্ন পূরণেই ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন শুভাংশু(India’s Pride)। প্রথমবারেই সফল। শুভাংশু হন নৌসেনা আধিকারিক। ২০০৫ সালে এনডিএ থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি বিটেক করেন। এখান থেকেই তিনি একজন ফাইটার পাইলট, টেস্ট পাইলট হিসাবে আকাশে ডানা মেলতে শুরু করেন।২০০৬ সালে শুভাংশু যুক্ত হন ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সে। উড়ানে চমৎকার দক্ষতায় সকলের নজর কেড়ে নেন তিনি। প্রায় ২০০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।এরপর ২০১৯ সালে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো গগনযান মিশনের জন্য নির্বাচিত করে শুভাংশুকে। রাশিয়ার ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। ২০২৪ সালে অ্যাক্সিয়াম মিশন ৪-এ নির্বাচিত হন শুক্লা। শুভাংশু বর্তমান আয় মাসিক ৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে উপার্জন এই মহাকাশ অভিযান। নাসার ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ অভিযানে পাইলটের ভূমিকায় রয়েছেন শুভাংশু। তিনিই মহাকাশযানটি পরিচালনা করবেন।
