ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: তেলাঙ্গানার রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২(Telangana explosion)। মঙ্গলবার সকালে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্তা এ কথা জানিয়েছেন। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ।সোমবার সকালে হায়দরাবাদের কাছে সাঙ্গারেড্ডি জেলায় পাশমাইলরামের সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের রাসায়নিক কারখানায় হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। এই ঘটনায় প্রাথমকভাবে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। উদ্ধারকাজ জারি ছিল তখনও। মঙ্গলবার সকালে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ জনে। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা হয়েছে ৪২।
তেলাঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভয়াবহ বর্ণনা (Telangana explosion)
সংবাদমাধ্যমের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে শ্রমিকরা উড়ে গিয়ে কয়েক মিটার দূরে গিয়ে পড়েন(Telangana explosion)।’ বিস্ফোরণের সময় বেশ কয়েকজন শ্রমিক চুল্লির কাছাকাছি ছিলেন। সাউথ ফার্স্টের মতে, এই চুল্লিতে নিযুক্ত অনেকেই ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ এবং অন্যান্য রাজ্যের শ্রমিক ছিলেন।সোমবার তেলাঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দামোদর রাজনারসিমা সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের সময় প্রায় ৯০ জন কর্মী সেখানে কাজ করছিলেন।অন্যান্য শ্রমিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণে শিল্প শেডটি সম্পূর্ণরূপে উড়ে যায় এবং বিস্ফোরণের তীব্রতায় কয়েকজন শ্রমিক বাতাসে উড়ে প্রায় ১০০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে।’

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন (Telangana explosion)
পাটানচেরু বিধায়ক মহিপাল রেড্ডি ওই সংস্থার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রোটোকল অবহেলার অভিযোগ করেন(Telangana explosion)। তিনি বলেন, ‘সংস্থাটি কোন সুরক্ষা সতর্কতা ছাড়াই কাজ করছে। অনেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং মারা গেছেন।’তিনি আরও অভিযোগ করেন যে কর্তৃপক্ষ প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা গোপন করছে। সোমবার ভয়াবহ বিস্ফোরণে কারখানাটি পুরো ধসে পড়েছে। পাশাপাশি আগুন দ্রুত কারখানার আশেপাশের ভবনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।জেলা পুলিশ সুপার পরিতোষ পঙ্কজ জানিয়েছেন, ‘ধ্বংসাবশেষ সরানোর সময় আরও বেশ কয়েকজনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধার কাজ এখনও চলছে।’ ইতিমধ্যে এই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমিটিকে।
আরও পড়ুন-Akhilesh Yadav: জাতিবিদ্বেষের শিকার কথাপ্রচারক! অখিলেশের নিশানায় বাগেশ্বর বাবা
সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিবৃতি (Telangana explosion)
তেলাঙ্গানা রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের প্রধান ওয়াই নাগি রেড্ডি বলেন, সাঙ্গারেড্ডির সিগাচি ফার্মা কোম্পানিতে বিস্ফোরণের পরে ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা নিশ্চিত নন(Telangana explosion)। তবে তল্লাশি চলছে।শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজের এয়ার হ্যান্ডলিং ও ড্রায়িংয়ের সময় এই বিস্ফোরণ ঘটে।বিস্ফোরণের পরেই চারদিকে ঘন কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে, আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের দমবন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়। ফলে স্থানীয় প্রশাসন আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।অন্যদিকে সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই দুর্ঘটনা আমাদের হায়দরাবাদ প্ল্যান্টে ঘটেছে, যেখানে উৎপাদন ক্ষমতা ৬,০০০ এমটিপিএ। প্ল্যান্টটির উৎপাদন আগামী ৯০ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। আমরা আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

নিয়মনীতি উপেক্ষা (Telangana explosion)
এই সংস্থার আরও দুটি ইউনিট রয়েছে গুজরাটে(Telangana explosion)। যেখান থেকে বাকি ১৫,৭০০ এমটিপিএ উৎপাদন হয়। হায়দরাবাদের কারখানাটি ওষুধের উপাদান, খাদ্য উপাদান এবং প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।ঘটনার পর পাসামাইলারাম শিল্পাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রবল আতঙ্ক। পরিবারের লোকজন আতঙ্কে ছুটে আসছেন খবর পেয়ে। কারখানার অভ্যন্তরে এখনও ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন এনডিআরএফ ও রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা।এই ভয়াবহ ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ভারতে শিল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল এবং নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কিভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলছে উৎপাদন কার্যক্রম।
