ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এসএসসির(SSC)নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় কেন চিহ্নিত অযোগ্যদের বসার অনুমতি দেয়া হল? ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিধির পরিবর্তে কেন নতুন বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া করা হবে? এই প্রশ্নই তুলল কলকাতা হাইকোর্ট(calcutta high court)। আগামী সোমবারের মধ্যে রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনকে এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য্য।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি SSC-র(SSC)
দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি-র(SSC) ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। তাতে চাকরি চলে যায় ২৫,৭৫২ জনের। রাজ্যকে তিন মাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মতো গত ৩০ মে বিজ্ঞপ্তি জারি করে SSC। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনলাইনে আবেদনের শেষ দিন ১৪ জুলাই। পরীক্ষা, স্ক্রুটিনি, ইন্টারভিউয়ের পর আগামী ১৫ নভেম্বর প্যানেল প্রকাশ করা হবে। সেই অনুযায়ী কাউন্সেলিং হবে ২০ নভেম্বর থেকে। এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আরও নির্দেশ ছিল নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত দাগিরা অংশ নিতে পারবেন না। এবং ২০১৬ সালের বিধি মেনেই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে হবে। কিন্তু নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও চিহ্নিত দাগী এবং দাগী নন- এমন চাকরিপ্রার্থীদের পৃথক করার কথা বলা হয়নি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ছিলেন যোগ্য বলে দাবি করা চাকরিহারারা।
নতুন বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা(SSC)
গত ২৯ মে এসএসসি(SSC) নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাতে ২০১৬ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। নতুন বিধিতে জোর দেওয়া হয় শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার উপরে। নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৫৫ নম্বরের বদলে ৬০ নম্বরে হবে লিখিত পরীক্ষা। শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য থাকবে ১০ নম্বর। আগে এটির জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৫ নম্বর। তবে ইন্টারভিউয়ের নম্বর আগের মতো ১০ নম্বরই বহাল রাখা হয়। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার উপর থাকছে ১০ নম্বর। এ ছাড়াও ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর জন্যও রয়েছে ১০ নম্বর।
শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’ দু’টি নতুন সংযোজিত হয়েছে এবারের নিয়োগ বিধিতে। আর এতেই আপত্তি তোলেন মামলাকারী বঞ্চিতরা। তাঁদের দাবি, দুর্নীতির জন্য তাঁরা বঞ্চিত হওয়ায় তাঁদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তাঁরা পরীক্ষায় বসলে এই নম্বর তাঁরা পাবেন না। পরীক্ষা শুরুর আগেই তাঁরা পিছিয়ে পড়বেন। তাই সুপ্রিম কোর্ট যেখানে পুরনো বিধি মেনে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া করার নির্দেশ দিয়েছিল, সেই নির্দেশ অমান্য করে কমিশন কেন নতুন বিধিতে পরীক্ষা নিচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। নতুন বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করেই হাইকোর্টে মামলা করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: Kasba Case: পুলিশি হেফাজত শেষ, কসবা ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের মঙ্গলবার ফের আদালতে পেশ
সুপ্রিম নির্দেশ অমান্যর অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে চাকরিপ্রার্থীরা
মামলাকারীদের আইনজীবীর দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের সিলেকশন প্রসেস ওই সালের রুল অনুযায়ী করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ মানা হয়নি। দ্বিতীয়ত, বয়সের ছাড়ের ক্ষেত্রেও নির্দেশ মানা হয়নি। নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও প্রার্থী যদি একাধিক পরীক্ষায় বসে থাকেন, তাহলে প্রতি সিলেকশনে বয়সের ছাড় পাবেন তিনি। কিন্তু নতুন বিজ্ঞপ্তিতে একবার মাত্র সুযোগ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ১০ নম্বর করে দেওয়া হয়েছে। সেটাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Supreme Court: কসবাকাণ্ডে CBI তদন্তের দাবিতে আর্জি, সুপ্রিম কোর্টে আবেদন আইনজীবী সত্যম সিংয়ের
হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে এসএসসি
মঙ্গলবার হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য্য সেই প্রশ্নই তোলেন রাজ্য এবং কমিশনের উদ্দেশ্যে। এদিন শুনানিতে বিচারপতি ভট্টাচার্য্য রাজ্য ও কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও কেন চিহ্নিত দাগীদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হল? কেন তাদের বারন করা হল না? আপনাদের ৩০ মে-র বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও বলা নেই দাগী চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করতে পারবে না। আমার পর্যবেক্ষণে এটা ওই বিজ্ঞপ্তিতে না থাকা একটি গলদ। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে পুরনো বিধি অনুযায়ী নিয়োগ হবে। সেখানে নতুন বিধি এনে জটিলতা বাড়ানো হল কেন?’ তার পরেই এই বিষয়ে রাজ্য এবং এসএসসির কাছে আগামী সোমবারের মধ্যে অবস্থান জানতে চান বিচারপতি।