ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আইনজীবী কৌশিক এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন যে নিষেধাজ্ঞা অন্যায্যভাবে (Delhi Government Fuel Ban U-turn) মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে আক্রমণ করছে।
এক দশক পরে ফের ধোঁয়াশা, বাতাসে বিষ নিয়ে মুখোমুখি সরকার ও আদালত (Delhi Government Fuel Ban U-turn)
২০১৪ সালে, দিল্লির ভয়াবহ বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিবেশ আদালতে (National Green Tribunal বা NGT) মামলা করেছিলেন রাজধানীর আইনজীবী বর্ধমান কৌশিক (Delhi Government Fuel Ban U-turn)। এক দশক, একাধিক আদালতের নির্দেশ এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় পেরিয়ে, পুরনো পেট্রোল ও ডিজেলচালিত যানবাহনের উপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছিল ১ জুলাই ২০২৫ থেকে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মাত্র তিন দিনে কার্যত উঠেই গেল।
পরিবেশ মন্ত্রীর আপত্তি (Delhi Government Fuel Ban U-turn)
বৃহস্পতিবার, দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে পরিবেশ মন্ত্রী মনজিন্দর সিং সীরসা একটি চিঠি পাঠান বায়ু মান নিয়ন্ত্রণ কমিশন (CAQM)-এর কাছে (Delhi Government Fuel Ban U-turn)। সেখানে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা “সম্ভব নয়” এবং তা “প্রিম্যাচিয়োর ও বিপরীত ফলদায়ী” হতে পারে। এই বক্তব্যের ভিত্তিতে দিল্লি সরকার নিষেধাজ্ঞা কার্যত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
তীব্র সমালোচনা আদালত ও পরিবেশকর্মীদের (Delhi Government Fuel Ban U-turn)
দিল্লি সরকারের এই অবস্থান নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। মামলাকারী বর্ধমান কৌশিক বলেন, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের এই ব্যর্থতা আদালতের রায়কে “খোলাখুলি অমান্য” করা। তাঁর কথায়, “এই নির্দেশ তো আজকের নয়। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় এসেছিল। কিন্তু সেটির সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা তো কেবল আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার একটি উপায় মাত্র। এখন যে এত হইচই হচ্ছে, তার কোনও মানে হয় না।”
‘গাড়ির বয়স নয়, নির্গমনই আসল’
তবে কৌশিক স্বীকার করেন, গাড়ির বয়স নয়, নির্গমনই হওয়া উচিত মূল ফোকাস। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন, বয়স একটি গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড। “ধরুন বয়সের সীমা তুলে দিলেও BS III বা BS IV গাড়ি কখনও BS VI-এর মতো কম দূষণ করে না। তাই এই মুহূর্তে সরকারকে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে,” বলেন তিনি।
‘মধ্যবিত্তকে নিশানা’ — এই যুক্তি খারিজ
পুরনো গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা মধ্যবিত্তের উপর চাপ সৃষ্টি করছে — এই যুক্তিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ কৌশিক। তিনি বলেন, “যাঁরা গাড়ি কেনার সামর্থ্য রাখেন, এসি ঘরে বসে থাকেন, তাঁদের গাড়ি ভালো দামে বিক্রি না হলে আফসোস হয়। তাঁদের কথা ভাবার দরকার নেই। আসল চাপ তো পড়ে সেই বিশাল জনসংখ্যার উপর, যাঁরা গাড়ি কিনতেই পারেন না, অথচ দূষণের শিকার হন।”
আরও পড়ুন: Superstar Vijay: তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে লড়ছেন দক্ষিণী সুপারস্টার
পুরনো নির্দেশ, কিন্তু নেই বাস্তবায়ন
২০১৫ সালে এনজিটি বর্ধমান কৌশিকের আবেদনের ভিত্তিতে দিল্লির রাস্তায় পুরনো গাড়ি ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার আইনি রূপরেখা তৈরি করেছিল। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেলচালিত এবং ১৫ বছরের বেশি পুরনো পেট্রোলচালিত গাড়ি দিল্লি ও এনসিআর অঞ্চলে চলাচল করতে পারবে না। এই রায়ে বলা হয়েছিল, NCR-এর পরিবহণ দফতরগুলিকে অবিলম্বে এই ঘোষণা করতে হবে এবং পুরনো গাড়িগুলির তালিকা তাদের ওয়েবসাইটে ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া, নিয়ম ভাঙলে গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার কথাও বলা হয়েছিল।
ধাপে ধাপে প্রয়োগের পরিকল্পনা
এপ্রিল ২০২৫-এ CAQM এক নির্দেশে জানিয়েছিল, ১ জুলাই থেকে দিল্লিতে জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এরপর নভেম্বরে তা ফরিদাবাদ, গুরগাঁও, গাজিয়াবাদ, গৌতম বুদ্ধ নগর ও সোনিপতের মতো এনসিআর জেলাগুলিতে কার্যকর করার পরিকল্পনা ছিল। ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে এনসিআরের বাকি অংশে তা জারি করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু দিল্লি সরকারের পিছু হঠার ফলে এখন গোটা পরিকল্পনাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।