ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে ট্রাম্প বলেছেন যে নতুন ট্যারিফের (35 percent tariff for Canada) হার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে এবং কানাডা প্রতিশোধ নিলে তা আরও বাড়বে।
ফেন্টানিল পাচার ও বাণিজ্য ঘাটতির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত (35 percent tariff for Canada)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই, ২০২৫) এক চিঠিতে ঘোষণা করেছেন, কানাডা থেকে আমদানি করা বহু পণ্যের উপর শুল্ক ৩৫ শতাংশ করা হবে (35 percent tariff for Canada)। এই সিদ্ধান্ত দুই উত্তর আমেরিকার দীর্ঘদিনের মৈত্রীতে নতুন করে ফাটল ধরাল। চিঠিটি পাঠানো হয়েছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনিকে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প মার্চ মাসে আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কহারকে আরও আক্রমণাত্মকভাবে বাড়িয়ে দিলেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধি কানাডা থেকে ফেন্টানিল পাচার রুখতেই নেওয়া হয়েছে, যদিও সে দেশে ফেন্টানিল পাচারের হার তুলনামূলকভাবে কম। চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমাকে উল্লেখ করতেই হবে যে, ফেন্টানিল প্রবাহই কেবল সমস্যা নয়। কানাডার বহু শুল্কনীতি, অ-শুল্ক বাধা ও বাণিজ্য নীতিও আমাদের উদ্বেগের বিষয়।”
আগস্ট থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন শুল্ক (35 percent tariff for Canada)
এই নতুন শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে (35 percent tariff for Canada)। অর্থনৈতিক মহলে ধারণা, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি ট্রাম্পের পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখিয়ে দিলেও, বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এ সপ্তাহে একাধিক দেশকে এমন শুল্কবৃদ্ধির চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে ট্রাম্পের দৃষ্টিতে কানাডা যেন প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। কানাডা আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার (মেক্সিকোর পর)। কানাডা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে এবং ট্রাম্পের “কানাডাকে ৫১তম রাজ্য” বানানোর কটাক্ষেরও জবাব দিয়েছে। যদিও মেক্সিকোতেও ফেন্টানিলের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে, তবে ট্রাম্প তেমন কড়া অবস্থান নেননি।
ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ ও কুটনৈতিক চাপ (35 percent tariff for Canada)
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের হুমকির পর অবশেষে এই সিদ্ধান্ত আমেরিকাকে এক বহুজাতিক বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছে (35 percent tariff for Canada)। ‘অন-অফ’ শুল্ক নীতির জন্য বাজারে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মার্ক কারনি। তাঁর প্রচার ছিল, “কানাডিয়ানদের মাথা তুলে রাখতে হবে।” অর্থাৎ, কঠিন অবস্থানে যেতে হবে। তিনি আমেরিকার সঙ্গে জটিল সম্পর্ক থেকে সরে এসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছেন। চিঠি আসার কিছু ঘন্টা আগেই কারনি “এক্স”-এ একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে দেখা করছেন। তিনি লেখেন, “বিশ্ব বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে বিশ্ব এখন কানাডার মতো নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদারদের দিকে তাকিয়ে।” এর মাধ্যমে তিনি ট্রাম্পের অধীনে আমেরিকাকে একটি অস্থির ও অপ্রত্যাশিত সঙ্গী বলেই তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: Muhammad Yunus: ‘মহিলা আধিকারিকরা আর স্যর নয়!’ হাসিনা জমানার নিদান বাতিল ইউনুস সরকারের
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ও ব্যর্থ আলোচনার চেষ্টা
মে মাসে কারনি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাইরে থেকে বৈঠকটি সৌজন্যমূলক মনে হলেও, ট্রাম্প বলেন, “শুল্ক তোলার বিষয়ে কানাডিয়ান নেতার বলার কিছু নেই। এটাই বাস্তব।” কারনি অবশ্য আশা প্রকাশ করেন, ধৈর্য ধরে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, “এখানে অনেক বড় শক্তি জড়িত। এটা সময় নেবে।”
২৩টি দেশে শুল্ক চিঠি, ব্রাজিলের জন্য ৫০ শতাংশ শুল্ক
ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ২৩টি দেশকে শুল্ক বৃদ্ধি সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন। কানাডার ক্ষেত্রে চিঠির ভাষা আরও ব্যক্তিগত হয়েছে। বুধবার তিনি ব্রাজিলের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। কারণ, সেখানে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরুদ্ধে বিচার চলছে ২০২২ সালের নির্বাচনের ফল না মানার অভিযোগে। একই রকম অভিযোগে ট্রাম্পকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই চিঠিগুলি দেখাচ্ছে, ট্রাম্প যতটা সহজ ভেবেছিলেন, ততটা সহজ নয় বহু বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। এপ্রিল ২-এ তাঁর “লিবারেশন ডে” শুল্ক ঘোষণার পর বাজারে ধস নামে। তখন তিনি ঘোষণা করেন, ৯০ দিনের আলোচনার সময়ে ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে। কিন্তু ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, এখন এই ১০ শতাংশ হার উঠিয়ে দিয়ে নতুন হারে শুল্ক ধার্য করা হবে। তিনি এনবিসি নিউজকে বলেন, “বাকি দেশগুলোকে জানিয়ে দিচ্ছি— কেউ ২০ শতাংশ, কেউ ১৫ শতাংশ শুল্ক দেবে।”
ব্রিটেন, ভিয়েতনাম ও চিনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি
এখন পর্যন্ত ব্রিটেন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ট্রাম্প আংশিক বাণিজ্য কাঠামো স্থাপন করেছেন। চিনের সঙ্গেও একটি আলাদা চুক্তি হয়েছে, যাতে আলোচনার দরজা খোলা থাকে। যদিও শুরুতে চিনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছিল, পরে তা ৫৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Balochistan Bus Attack: বালোচিস্তানে বাস থামিয়ে অপহরণ, গুলি করে হত্যা ৯ যাত্রীকে
ডিজিটাল পরিষেবা কর নিয়ে টানাপোড়েন
জুন মাসে ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেন, কারণ কানাডা ডিজিটাল পরিষেবা কর বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে প্রভাবিত করত। তবে কারনি সেই কর বাতিল করার পর আলোচনা আবার শুরু হয়। বর্তমানে ২০২০ সালের মার্কিন-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির আওতাভুক্ত পণ্যগুলি ট্রাম্পের নতুন শুল্ক থেকে রক্ষা পাচ্ছে। তবে ২০২৬ সালে সেই চুক্তির পর্যালোচনার সময় নির্ধারিত আছে। তার আগেই দুই দেশের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই দেখার বিষয়।