ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গত ১২ জুন অহমদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা দেওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) বোয়িং ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার এক মাসের মাথায় প্রকাশিত হল প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট(Plane Crash In Ahmedabad)। রিপোর্টে উঠে এসেছে এক ভয়ানক তথ্য— উড়ানের ঠিক ৩ সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানের দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচ ‘রান’ (চালু) থেকে ‘কাটঅফ’ (বন্ধ) হয়ে গিয়েছিল। এর ফলেই বন্ধ হয়ে যায় জ্বালানি সরবরাহ, স্তব্ধ হয়ে পড়ে ইঞ্জিন, আর মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যেই মাটিতে আছড়ে পড়ে বিমানটি। দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৬০ জন, যার মধ্যে ২৪১ জন ছিলেন যাত্রী।
কী বলছে ব্ল্যাকবক্স? (Plane Crash In Ahmedabad)
ঘটনার পরে পাওয়া ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ও ডেটা রেকর্ডার অনুযায়ী, উড়ান শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে বিপর্যয়,-
- ১:৩৮:৪২ মিনিটে বিমানের গতি ছিল ১৮০ নটস। তখনই দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ ‘অফ’ হয়ে যায়।
- ১:৩৮:৪৭-এ আরএটি (Ram Air Turbine) চালু হয় — যা জরুরি শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
- ১:৩৮:৫২ ও ৫৬-এ ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ পুনরায় চালু করা হয়। তবে ততক্ষণে গতি ও উচ্চতা নেমে গেছে বিপজ্জনকভাবে।
- ১:৩৯:০৫ মিনিটে পাইলট ‘Mayday’ সংকেত পাঠান।
- ১:৩৯:১১-এ ফ্লাইট ডেটা রেকর্ড বন্ধ হয়ে যায় — সম্ভবত ধ্বংসের মুহূর্তে।
রিপোর্ট বলছে, পাইলটদের মধ্যে একজন বলেছিলেন, “তুমি সুইচ বন্ধ করেছ কেন?” অপরজন জানিয়েছিলেন, “আমি করিনি।” অর্থাৎ সুইচ বন্ধ হওয়ার কারণ মানবিক ভুল না যান্ত্রিক ত্রুটি, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
শেষ মুহূর্তের চেষ্টা, কিন্তু ব্যর্থ (Plane Crash In Ahmedabad)
যখন জ্বালানির সুইচ পুনরায় চালু করা হয়, তখন FADEC (Full Authority Digital Engine Control) সিস্টেম নিজেকে রিস্টার্ট করার চেষ্টা করে(Plane Crash In Ahmedabad)।
- ১ নম্বর ইঞ্জিন কোনওভাবে পুনরায় চালু হওয়ার সংকেত দিলেও গতি বাড়াতে পারেনি।
- ২ নম্বর ইঞ্জিন বারবার চেষ্টা করেও প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট তৈরি করতে ব্যর্থ হয়।
এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানটি রানওয়ে পেরোনোর আগেই গতি হারাতে শুরু করে। অতঃপর লোকালয়ের ওপর ভেঙে পড়ে বিমানটি।

আরও পড়ুন: CJI BR Gavai : ভারতের বিচারব্যবস্থাকে সংস্কারের ডাক প্রধান বিচারপতি গগৈয়ের!
প্রশ্ন উঠছে,কীভাবে বন্ধ হল জ্বালানির সুইচ? (Plane Crash In Ahmedabad)
তদন্তে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—
- কিভাবে ফ্লাইটের ঠিক শুরুর মুহূর্তে দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘কাটঅফ’ মোডে চলে গেল?
- এটি যান্ত্রিক ত্রুটি নাকি পাইলটিং ভুল?
- কেন FADEC সিস্টেম সময়মতো ইঞ্জিনের রিস্টার্ট করতে পারল না?
প্রসঙ্গত, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের মতো অত্যাধুনিক বিমানেও যদি এমন দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলে এয়ার সেফটির দিক থেকে এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা(Plane Crash In Ahmedabad)।

আরও পড়ুন: Manipur Unrest : মণিপুরে ফের জঙ্গিবিরোধী অভিযান, গ্রেফতার ৮ কট্টরপন্থী জঙ্গি!
তদন্ত চলছে, চূড়ান্ত রিপোর্টের অপেক্ষা (Plane Crash In Ahmedabad)
ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA), বোয়িং এবং এয়ার ইন্ডিয়া যৌথভাবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালাচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত কোনও “সাবোটাজ” বা “সন্ত্রাসবাদী হামলার” ইঙ্গিত মেলেনি (Plane Crash In Ahmedabad)।
তবে প্রাথমিক রিপোর্টেই এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসায় বিশ্বের এভিয়েশন মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দেশের রেগুলেটরি সংস্থা বোয়িংয়ের নির্দিষ্ট মডেলগুলিতে ফুয়েল সুইচ মেকানিজম পরীক্ষা শুরু করেছে।
মাত্র ৩২ সেকেন্ড — এর মধ্যেই ২৬০ জন প্রাণ হারালেন, একটি সম্পূর্ণ বিমান ভেঙে পড়ল। তদন্তকারীদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় কাজ হল এই সুইচের ‘অচানক বন্ধ হয়ে যাওয়া’র প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় ঠেকানো। সামান্য ত্রুটি, কিন্তু তার পরিণাম ভয়ঙ্কর। উড়ন্ত আকাশে ভরসা হারালে, মৃত্যু নামে বিদ্যুৎবেগে।