ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ডোনাল্ড ট্রাম্প কি দ্বিচারিতার খেলায় নেমেছেন? না কি ভেতরে ভেতরে বৃহত্তর কূটনৈতিক চাল (Russia Ukraine War)? এক দিকে যখন তিনি ইউক্রেনকে শান্তিপ্রস্তাবের জন্য ৫০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছেন, অন্য দিকে খোদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে জানতে চাইছেন—“সঠিক অস্ত্র পেলে কি আপনি মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গে হামলা চালাতে পারবেন?”
এই ফোনালাপের খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয় আন্তর্জাতিক মহলে। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের এমন স্পর্শকাতর সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের এমন এক মন্তব্য শুধু বিস্ময় নয়, বিপজ্জনক উস্কানিও বটে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ ভোলবদল করলেন ট্রাম্প।মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমার মতে, মস্কোকে লক্ষ্যবস্তু করা ইউক্রেনের পক্ষে অনুচিত কাজ হবে।” এই মন্তব্যের পরেই শুরু হয় রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ঝড়।
ফোনে জেলেনস্কিকে যুদ্ধবিস্তার নিয়ে প্রশ্ন (Russia Ukraine War)
৪ জুলাই, মার্কিন স্বাধীনতা দিবসের দিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ফোন করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে(Russia Ukraine War)। সংবাদমাধ্যম ফাইনান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফোনে ট্রাম্প জানতে চান, “ঠিকঠাক অস্ত্র পেলে আপনি রাশিয়ার ভিতরে ঢুকে মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গে হামলা চালাতে পারবেন?” জবাবে জেলেনস্কির মন্তব্য ছিল, “অবশ্যই পারব। আপনি যদি আমাদের উপযুক্ত অস্ত্র দেন।” এই কথোপকথনের খবর ফাঁস হতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় রাশিয়া। ক্রেমলিন-এর দাবি, এই মন্তব্য আসলে রাশিয়াকে সরাসরি উস্কানি এবং ইউক্রেনকে আগ্রাসী হওয়ার সবুজ সংকেত।
‘শান্তি চুক্তি না হলে শুল্ক’, তার পরেই অস্ত্রের আশ্বাস! (Russia Ukraine War)
এর ঠিক একদিন আগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, “রাশিয়া যদি ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে না আসে, তবে রাশিয়ার বাণিজ্যিক মিত্রদের উপর ১০০% শুল্ক আরোপ করা হবে(Russia Ukraine War)।” এদিকে, একইসঙ্গে তিনি জানান, নেটোর মাধ্যমে ইউক্রেনকে আরও উন্নত অস্ত্র দেওয়া হবে। এর মধ্যে থাকবে ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমও—জার্মানি, পোল্যান্ড, ব্রিটেনের সঙ্গে মিলিত সামরিক সহায়তা। এই দুই বিপরীতমুখী বার্তা—একদিকে শান্তির আহ্বান, অন্যদিকে যুদ্ধবিস্তারী উস্কানি—নিয়ে প্রশ্ন উঠছে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরেও।

আরও পড়ুন: Donald Trump : আমি প্রায় কাউকেই বিশ্বাস করি না, পুতিন প্রসঙ্গে বিস্ফোরক ট্রাম্প!
ট্রাম্পের ‘পলিসি সুইং’ ঘিরে তীব্র সমালোচনা (Russia Ukraine War)
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বারবার অবস্থান বদল তাঁর বিদেশনীতি ঘিরে অনিশ্চয়তার বার্তা দেয়(Russia Ukraine War)। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক জোসেফ নোয়েল বলছেন, “একদিকে শান্তির সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছেন, আরেকদিকে জেলেনস্কিকে বলেন, মস্কোয় হামলা করা যাবে কিনা। এমন দ্বিমুখী অবস্থান যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালার সমান।” রাশিয়ার সরকারি প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, আমেরিকা ইউক্রেনকে অস্ত্রে সজ্জিত করলে শান্তি প্রক্রিয়া আরও পিছিয়ে যাবে। পুতিন প্রশাসন এটিকে সরাসরি হুমকি এবং যুদ্ধ চুক্তিভঙ্গের উদ্যোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

আরও পড়ুন: Sudan Civil War : উত্তর করদোফানে গণহত্যা! কোণঠাসা আরএসএফের নারকীয় প্রত্যাঘাত, নিহত ৩০০-র বেশি
ট্রাম্পের কূটনীতি—আলোচনার টোপ না যুদ্ধের দাবানল? (Russia Ukraine War)
ডোনাল্ড ট্রাম্প সব সময় নিজের কথায় বিতর্ক তৈরি করেন—এটা নতুন নয়(Russia Ukraine War)। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো বিস্ফোরক পরিস্থিতিতে তাঁর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীত বার্তা বিশ্ব রাজনীতিতে এক অস্থিরতার বাতাবরণ তৈরি করেছে। বিশেষত যখন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসছে, তখন অনেকেরই প্রশ্ন—এই কথাবদল কি রাজনৈতিক কৌশল? নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে এক অজানা যুদ্ধনীতি? এখন দেখার, এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া এবং ইউক্রেন—উভয়েই কেমন প্রতিক্রিয়া জানায়। এবং ট্রাম্প (Donald J. Trump) নিজে আগামী দিনে এই লাইনেই থাকেন, না কি ফের আরেক ‘ডিগবাজি’ দেন—তা সময়ই বলবে(Russia Ukraine War)।