ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ১২ জুন দুপুর ১টা ৩৮ মিনিট নাগাদ আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের রানওয়ে ছেড়ে আকাশে উড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১ বিমান(US media)। তবে সেই অভিশপ্ত বিমান ৩২ সেকেন্ডের বেশি আকাশে উড়তে পারেনি। বিমানটি ভেঙে পড়ে। সেই দুর্ঘটনা কেন, কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই।আর জানতে জারি রয়েছে তদন্ত। এই আবহে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদন নিয়ে ফুঁসে উঠল ভারতীয় পাইলটদের সংগঠন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস।
এআইআইবি-র প্রাথমিক রিপোর্ট (US media)
গত সপ্তাহে আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এআইআইবি(US media)। প্রাথমিক রিপোর্টে এআইআইবি-র তরফে জানানো হয়, দুর্ঘটনার সময় সুইচ ‘রান’থেকে ‘কাটঅফ’ অবস্থায় চলে যায় বিমানটির। অর্থাৎ জ্বালানির সুইচে সমস্যা ছিল।তবে বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানে তেমন কোনও ধরণের সমস্যা ছিল না বলে জানানো হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে। রিপোর্টে দাবি করা হয়, টেক অফের পরে বিমানটি ‘কাটঅফ’ মুডে চলে যায়। অর্থাৎ ইঞ্জিনে বন্ধ হয়ে যায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ। ফলে বিমানের উচ্চতা কমতে থাকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অবশ্য পাইলটরা ফের বিমানের দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানি ফের ‘কাটঅফ’ থেকে থেকে ‘রান’ মুডে নিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু একটি ইঞ্জিন চালু হলেও আর একটি ইঞ্জিন চালু করা যায়নি। ফলে ‘থ্রাস্ট’ পাওয়া যায়নি।

মার্কিন মিডিয়ার রিপোর্ট (US media)
এআইআইবি-র এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল দাবি করেছে, মার্কিন আধিকারিকরা নিশ্চিত ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বিমানের ক্যাপ্টেনের ভুলেই(US media)। ব্ল্যাকবক্সের রেকর্ডিংয়ে থেকে জানা গিয়েছে, ক্যাপ্টেনই ফুয়েল সুইচ বন্ধ করে দেন। আর তাতেই আপত্তি জানিয়েছে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস। কোনও রকম বিজ্ঞান নির্ভর তথ্য ছাড়া পাইলটদের উপর দোষ ঠেলে দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীতার সামিল বলে জানানো হয়েছে সংগঠনের তরফে।এফআইপি-এর সভাপতি সিএস রণধাওয়া ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর রিপোর্টকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তার দাবি, ‘এআইআইবি-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে কোথাও বলা হয়নি যে পাইলট ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানি সুইচ বন্ধ করেছিলেন।তারা রিপোর্ট সঠিকভাবে পড়েনি এবং আমরা এফআইপি-এর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন-Cleanest City: দেশের সবথেকে পরিচ্ছন্ন শহর কোনটি? একটানা ৮ বার জিতল পুরস্কার
ক্ষুব্ধ ভারতীয় পাইলট সংগঠন (US media)
তিনি আরও বলেন, ‘রিপোর্ট বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কেউই বলেননি যে এটি পাইলটের ভুল ছিল…আপনাদের অবশ্যই এটিকে এএনএ এনএইচ৯৮৫-এর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে, যা ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯ সালে ঘটেছিল(US media)। অবতরণের সময়, যখন পাইলট থ্রাস্ট রিভার্সার নির্বাচন করেছিলেন, তখন পাইলট জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচটি বন্ধ না করলেও উভয় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এটি থ্রটল কন্ট্রোল ম্যালফাংশন অ্যাকোমোডেশন ত্রুটির পুনরাবৃত্তি এবং এর জন্য টিসিএমএ-এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত প্রয়োজন। বোয়িং এখনও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি এবং এমনকি এই সমস্ত বিমানের টিসিএমএ কার্যকারিতা পরীক্ষা করার নির্দেশও জারি করার চেষ্টা করেনি।’
আরও পড়ুন-Free Electricity: ভোটের আগে কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ! বিহারের জন্য বড় ঘোষণা
দুই পাইলটের কথোপকথন (US media)
১২ জুন লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮-এর পাইলটের আসনে ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল(US media)। কো পাইলট ছিলেন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর। ‘এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’-এর পেশ করা প্রাথমিক রিপোর্টে সামনে এসেছিল সে দিন ককপিটে দুই চালকের মধ্যে হওয়া কথোপকথন। তাতে শোনা যায়, এক পাইলট অন্য পাইলটকে বলেছেন, ‘কেন তুমি জ্বালানির সুইচটা বন্ধ করে দিলেন?’ অন্য জন তার উত্তরে বলছেন,‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’ কে প্রথমজন, কে উত্তর দিল তাঁর প্রশ্নের তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।তবে পুরো ককপিট রেকর্ড এখনও প্রকাশ পায়নি, যার ফলে নানা জল্পনা বাড়ছে।

পাইলটদের দায়ী করার প্রতিবাদ (US media)
প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে ৮২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পাইলট সুমিত সভরওয়াল ছিলেন(US media)। ছিলেন ক্লাইভ কুন্দারও। যার ছিল ১১০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা। ভুল করে তারা ‘রান’থেকে ‘কাটঅফ’ মুডে অর্থাৎ জ্বালানি বন্ধ করে দেবেন, সেটা বেশ অস্বাভাবিক। তবে তা নিয়ে মার্কিন সংস্থা ঠিক মতো তদন্ত না করে বিমান দুর্ঘটনার দায় পাইলটদের উপর ঠেলে দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস।
এয়ার ইন্ডিয়ার বক্তব্য (US media)
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গোটা ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বহরে ফুয়েল সুইচের লকিং মেকানিজম পরীক্ষা করে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি(US media)। কেন্দ্রীয় সরকারও স্পষ্ট জানিয়েছে, এই রিপোর্টটি এখনো চূড়ান্ত নয় এবং ফাইনাল তদন্তে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তার আগে কোনো সিদ্ধান্তে না আসার জন্য সংবাদমাধ্যম ও জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।ফ্লাইটটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের ছিল এবং এটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে আহমেদাবাদ থেকে উড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু উড়ানের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটি একটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে ধাক্কা মেরে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় ২৬০ জন মারা যান -২৪১ জন যাত্রী ও ক্রু, ও ১৯ জন মাটিতে থাকা সাধারণ মানুষ।
