মলয় দে, নদীয়া: পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। প্রাথমিক ভাবে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কথা থাকলেও, শেষ মুহূর্তে উদ্যোক্তারা ঠিক করেন এবারের পুজো প্যান্ডেলে বাজনা হিসেবে থাকবে শুধুই ঢাক। ভালো মানের ঢাকি খুঁজতে উদ্যোক্তারা হাজির হন শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে। ঢাকের বাজনা শুনে মুগ্ধ হয়ে বীরভূমের মল্লারপুরের এক বাদ্যকার বায়না করে তাকে সাথে নিয়ে চেপে বসেন শান্তিপুর লোকালে। ট্রেনের চাকা গড়িয়েছে কয়েক মিটার, বাদ্যকারের চোখ গেল ভোরবেলার ট্রেনের ফাঁকা কামরার এক কোণে।
সেখানে মলিন পোশাকে বসে রয়েছে পরিচিত এক মুখ। যাকে প্রায় দু’বছর ধরে হন্যে হয়ে খুঁজছে গোটা পরিবার। পরিচিত কুমার কাকাকে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবক। পুজো উদ্যোক্তাদের বিস্তারিত জানিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন নুর ইসলামকে সাথে করেই শান্তিপুরের মণ্ডপে ফিরলেন কুমার বাদ্যকর। খবর দেওয়া হল বীরভূমের পরিবারে।
মঙ্গলবার সকালে পরিবারের লোকজন এসে শান্তিপুর থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল ঘরের ছেলেকে। পরিজনদের কাছে পেয়ে বিজয় খুশি নুর। শান্তিপুরের পুজো উদ্যোক্তা ও পাড়ার কাকা কুমার বাদ্যকরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে গোটা গ্রাম। দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মানবতার যে গল্প শান্তিপুরে রচিত হল, তাকে কুর্ণিশ জানিয়েছে গোটা এলাকা।
আরও পড়ুন: https://tribetv.in/gautam-saha-of-nabadwip-made-a-1cm-durga-idol-with-clay-on-the-nib-of-a-pen/
সূত্রের খবর, শান্তিপুর গোবিন্দপুর এলাকার সবুজ সংঘ ক্লাবের দুর্গাপুজোর ঢাকি খুঁজতে উদ্যোক্তারা সোমবার শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছায়। সেখান থেকেই তারা বায়না করেন বীরভূম মল্লারপুর গ্রামের কুমার বাদ্যকর সহ আরও কয়েকজনের দলকে। ঢাকিদের সঙ্গে করে ভোর বেলার ফাঁকা ট্রেনের চেপে বসেন পুজো উদ্যোক্তারা। প্রবীণ এক ঢাকির চোখ আটকে যায় ট্রেনের কামরার এক কোণে বসে থাকা এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের দিকে। তার কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হেসে ওঠে ওই যুবক। ততক্ষণে কুমার বুঝে গেছে ভারসাম্যহীন যুবক আর কেউ নয় তাদের গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নুর ইসলাম।
তাকে সাথে নিয়েই পুজো মণ্ডপে ফেরে কুমার। পুজো উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় খবর পৌঁছায় নুরের বাড়িতে। মঙ্গলবার নুরের পরিবারের লোকজনেরা এসে তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়।
মা দুর্গা মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগেই, আর এক উমা ফিরে পেল তার হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে। সৌজন্যে শান্তিপুর সবুজ সঙ্ঘ। ছেলেকে ফিরে পেয়ে বেজয় খুশি পরিবার। পরিবারের লোকজনকে কাছে পেয়ে খুশি নুরও। যার জন্য এত কিছু তাকে ছেড়ে যাওয়ার সময় বারবার পিছু ফিরে সেই কুমার কাকাকে খুঁজেছে নুর।