ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ২৪ জুলাই বাঙালির কাছে এক হৃদয় ভারাক্রান্ত করা দিন (Uttam Kumar)। কারণ এই দিনই বাঙালি হারিয়েছে তাদের মহানায়ককে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঙালির হৃদয়ের স্থান দখল করে রয়েছেন সেই অবিস্মরণীয় অভিনেতা মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। তাঁর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি অনেকে। গোটা কলকাতা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সেদিন। সেই স্বপ্নের নায়ক উত্তম কুমারকে (Uttam Kumar) শেষবারের মতো একবার দেখবে বলে, কলকাতা শহর থেকে তাঁর বাড়ি, এমনকি শ্মশান পর্যন্ত সেদিন বৃষ্টি মুখর দিনে রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছিল। প্রায় ৪৫ বছর কেটে গিয়েছে। তিনি শারীরিক ভাবে নেই, কিন্তু রয়ে গিয়েছেন সকলের মনে স্বপ্নের রাজকুমার হয়ে।
সবকিছু সহজে আসেনি (Uttam Kumar)
মহানায়ক উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) জীবনে কিন্তু সব কিছু সহজে আসেনি। তাঁকে লড়ে আদায় করে নিতে হয়েছে। তাঁকে সর্বোত্তম হতে গিয়ে কত কিছু হারাতে হয়েছে। তাঁর সাফল্যর পেছনে ছিল অনেক ত্যাগ। স্বাধীন ভাবে তিনি কিছুই করতে পারতেন না । গড়ের মাঠে হোক কিংবা গঙ্গাপাড়ে খোলা আকাশের নিচে বসা হোক। এমনকি ইচ্ছা হলে রাস্তার ধারে ফুচকা খাওয়া, মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে যাওয়া সবই ছিল তাঁর নিষিদ্ধ। সব সময় যেন এক বন্দী দশায় জীবন কাটাতেন তিনি।
যখন নিজেকে খুব একা লাগত, খারাপ লাগত তখন তাঁর এক সাংবাদিক বন্ধুকে ডেকে নিতেন। সেই সাংবাদিক বন্ধুকে দেখিয়েছিলেন খিদিরপুরে কোর্ট কমিনাসের দোতলায় একটি জানালার পাশে বসে তিনি কাজ করতেন। তবে সেই সময়টা তাঁর ভালো লাগত না। কিন্তু সেই জীবনটাতে নায়েকের ফিরে যেতে খুব ইচ্ছে করত বলে জানিয়েছিলেন তাঁর বন্ধুকে।
জীবনকে নিঃস্ব করে তুলেছিল (Uttam Kumar)
বলতে গেলে, অনেকটা স্ট্রাগেল করে নিজের জায়গাটা পাকা করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। তবে প্রিয় মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা, কখনও সংসার ভাঙার যন্ত্রণা, আবার কখনও জনপ্রিয়তার ফলে একা হয়ে পড়া, সবটাই মিলেমিশে তাঁর জীবনকে নিঃস্ব করে তুলেছিল। মহাননায়কের রূপ, অর্থ, জৌলুষ ও প্রতিপত্তি দেখেছে সবাই, কিন্তু তাঁর নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হয়নি কেউ। যদিও তাঁর জানা আর হল না, বাঙালি আজও তাঁকে চোখের মণি করে রেখেছে।
আরও পড়ুন: Biswanath Basu: ছেলেকে ইলিশ খাওয়ানোর ক্ষমতা নেই বিশ্বনাথের! ভগবানের স্মরণে অভিনেতা
নিত্যদিন দুশ্চিন্তায় কাটানো
‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবি করে দেনার দায়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। নিত্যদিন তাঁকে দুশ্চিন্তায়, অর্থাভাবে কাটাতে হয়েছে। অজানা এক ভয়ে থাকতেন সবসময়। যার জন্য সেটে অভিনয় করতে করতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তিনি সেই সময় বাড়িতেই চিকিৎসা করিয়েছিলেন। তাঁর অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল চিকিৎসক পর্যন্ত তাঁকে চিনতে পারেননি। চিকিৎসক তাঁর পেশা ও নাম জেনে অবাক হয়েছিলেন ভীষণ। অর্থাৎ অভিনয় তাঁকে জনপ্রিয়তা, অর্থ সবই দিয়েছে, বদলে সেই মানুষটার সহজ সরল জীবনটাকে নিয়ে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: Hrithik-Aamir: অনুপম থেকে আমির, প্রশংসায় ভাসছে বলিউড! কেন ইনস্টাগ্রামে ফিরলেন হৃতিক?
যন্ত্রণা বুঝতে না দেওয়া
মানুষ হিসাবেও তিনি খুব সাদাসিধে। অভিনয়ের সময় তাঁর সাথে অভিনয় করতে কেউ অস্বস্তিবোধ কিংবা ভয়ে ভয়ে অভিনয় করলে তিনি তাঁকে বুঝিয়ে দিতেন, অভিনয়ে যেমন করার সেভাবেই অভিনয় করতে, বাকিটা তিনি সামলে নেবেন। মহানায়কের যখনই খুব মন খারাপ লাগত, তাঁর চেনা মানুষের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া গান-আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন। কাউকে বুঝতে দিতেন না, নিজের যন্ত্রণার কথা। নিজের যন্ত্রণা নিজেই কাঁধে বয়ে চলতেন। আফসোস একটাই, যদি তিনি দেখে যেতে পারতেন বাঙালির কাছে তিনি কি? আজও বাঙালির হৃদয়ে অনেকখানি জায়গা নিয়ে রয়েছেন মহানায়ক উত্তম কুমার।