ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতীয় রেল শুধু পরিবহণ নয়, দেশের অর্থনীতির একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। প্রতিদিন দেশের কোণে কোণে লক্ষ লক্ষ মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন(Indian Railways)। রেলের অসংরক্ষিত বা সাধারণ কোচ সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সবচেয়ে বড় ভরসা। সম্প্রতি সংসদের বাদল অধিবেশনে ভারতীয় রেল যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে স্পষ্ট যে কোভিড-পরবর্তী সময়ে যাত্রী সংখ্যা শুধু ফিরে আসেনি, বরং রেকর্ড বৃদ্ধিও ঘটেছে।
গত পাঁচ বছরের যাত্রী পরিসংখ্যান (Indian Railways)
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ আর্থিক বছরে (২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫) মোট ২,১৮৭ কোটি যাত্রী অসংরক্ষিত কোচে ভ্রমণ করেছেন(Indian Railways)।
বছরভিত্তিক যাত্রী সংখ্যা ছিল—
- ২০২০-২১: ৯৯ কোটি (কোভিডের প্রভাবে তীব্র পতন)
- ২০২১-২২: ২৭৫ কোটি
- ২০২২-২৩: ৫৫৩ কোটি
- ২০২৩-২৪: ৬০৯ কোটি
- ২০২৪-২৫: ৬৫১ কোটি
এই পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, কোভিড-১৯ এর ধাক্কা কাটিয়ে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই রেলের যাত্রী সংখ্যা প্রায় ছয় গুণ বেড়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃদ্ধি ভারতীয় রেলের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা এবং পরিবহণ ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনের প্রমাণ।
কোভিড-পরবর্তী যাত্রী বৃদ্ধির কারণ (Indian Railways)
কোভিডের সময় দেশজুড়ে ট্রেন পরিষেবা আংশিকভাবে স্থগিত হয়েছিল(Indian Railways)। যাত্রীর সংখ্যা ২০২০-২১ সালে নেমে যায় মাত্র ৯৯ কোটিতে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই অসংরক্ষিত কোচের যাত্রী দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এর পেছনে রয়েছে কিছু মূল কারণ—
- সাশ্রয়ী ভাড়া: বিমান এবং সড়ক পরিবহণের তুলনায় ট্রেন ভাড়া অনেক কম, যা গ্রামীণ এবং মধ্যবিত্ত যাত্রীদের কাছে বড় ভরসা।
- উন্নত পরিষেবা: রেল নন-এসি কোচে সুযোগসুবিধা বাড়াতে মনোযোগ দিয়েছে।
- দূরপাল্লার সংযোগ: শহর ও মফস্বল এলাকাকে সেতুবন্ধনের ক্ষেত্রে রেলের ভূমিকা অনন্য।

আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack : অপারেশন “সিঁদুর” থেকে “মহাদেব” সফল, সংসদে দাবি শাহের
নন-এসি কোচে বিনিয়োগ (Indian Railways)
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেল সাধারণ এবং নন-এসি কোচে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে ৮২,২০০টি কোচের মধ্যে ৫৭,২০০টিই নন-এসি, যা প্রায় ৭০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দূরপাল্লার ট্রেনে ১,২৫০টি নতুন সাধারণ কোচ সংযোজন করা হয়েছে।
এই উদ্যোগ কেবল যাত্রীসুবিধা নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করেছে। নন-এসি কোচের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ছোট শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ সহজে এবং সস্তায় বড় শহরে যাতায়াত করতে পারছেন।
আরও পড়ুন: Military Operation : ভারতীয় সেনার ১০টি দুঃসাহসিক সামরিক অভিযান!
আগামী পাঁচ বছরের রেল পরিকল্পনা (Indian Railways)
ভারতীয় রেল আগামী পাঁচ বছরে ১৭,০০০ নতুন অসংরক্ষিত নন-এসি কোচ চালু করার পরিকল্পনা করেছে(Indian Railways)। এর ফলে প্রতিদিনের যাত্রীর ভিড় কমানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা এবং আরামের মাত্রাও বাড়বে।
এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত কিছু পদক্ষেপ—
- কোচে আধুনিক সুবিধা: নতুন কোচে থাকবে উন্নত বায়ুপ্রবাহ ব্যবস্থা, আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
- স্মার্ট টিকেটিং ব্যবস্থা: ডিজিটাল টিকিটিং এবং QR ভিত্তিক টিকিট চেকিং ব্যবস্থা চালু হবে।
- সুবিধাবৃদ্ধি: স্টেশনে শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা ও অপেক্ষাকক্ষের উন্নতিতে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব (Indian Railways)
ভারতীয় রেল দেশের অর্থনীতির এক বিশাল চাকায় পরিণত হয়েছে(Indian Railways)। সাধারণ কোচে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে—
- বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ সস্তা পরিবহণ ব্যবস্থার ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং শ্রমজীবী মানুষ সহজে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যেতে পারছেন।
- চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে, কারণ নতুন কোচ চালু করতে বাড়ছে কর্মসংস্থান।
- স্থানীয় অর্থনীতি উন্নত হচ্ছে, কারণ পরিবহণ খরচ কমে আসছে।

চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় (Indian Railways)
যদিও যাত্রী বৃদ্ধির সঙ্গে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে(Indian Railways)। ট্রেনের ভিড়, দুর্ঘটনার ঝুঁকি এবং অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রয়োজন—
- আরও দূরপাল্লার ট্রেন পরিষেবা বৃদ্ধি।
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নতকরণ, যেমন CCTV এবং AI-ভিত্তিক নজরদারি।
- রেলপথের আধুনিকীকরণ এবং উচ্চগতির ট্রেন প্রকল্পে বিনিয়োগ।
ভারতীয় রেলের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে যে কোভিড-পরবর্তী সময়ে রেলের গুরুত্ব আবারও বহুগুণ বেড়েছে। ২,১৮৭ কোটি যাত্রী ভ্রমণের রেকর্ড কেবল রেলের জনপ্রিয়তাই নয়, দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গতিশীলতারও প্রতিফলন। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সাধারণ মানুষের যাতায়াত আরও সুলভ, নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে।